শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২২, ০০:০০

মায়ের জন্যে পুলিশের মানবিকতা!
অনলাইন ডেস্ক

কারো স্বামী যদি মাদকাসক্ত হয়, তাহলে তার (স্ত্রীর) কতো যে দুশ্চিন্তা ও ভোগান্তি সেটা বলে শেষ করা যায় না। একজন নারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার পর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে অঢেল বিত্ত-বৈভব, বিলাসিতা, বাহ্যিক যাবতীয় সুখে পরিপূর্ণ তৃপ্ত হয় তখনই, যখন তার স্বামী চরিত্রবান হয়, ঘরমুখী হয়, স্ত্রী ও সন্তানদের সুখ-দুঃখে আন্তরিকতার সাথে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে। জীবনের সব চাহিদা মিটালেও একজন স্ত্রী যদি স্বামীর উচ্ছৃঙ্খল জীবন প্রত্যক্ষ করে, তার মাদকাসক্তি, পরকীয়ার বিষয়টিতে আত্যন্তিক মানসিকতা উপলব্ধি করে, তাহলে তার সকল সুখ যেনো জানালা দিয়ে পালায়। প্রায় প্রতিদিন কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণের শিকার হয়, বিশেষ করে মাদকের জন্যে, তাহলে ওই স্ত্রী ও তার সন্তানরা নিজেদের নিরাপদ ভাবার কোনো অবকাশ থাকে না। কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটবেই। কচুয়ায় এক সিএনজি অটোরিকশা চালক মাদকাসক্ত হয়ে প্রতি রাতে স্ত্রী-সন্তানদের মারধর করায়, এক পর্যায়ে তার স্ত্রী পুলিশে খবর দিয়ে অত্যাচারী স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এটা তো সন্তানদের বলে স্ত্রীর সাহসিকতা প্রদর্শন। কিন্তু যে স্ত্রীর সন্তানরা শিশু, একেবারে দুগ্ধপোষ্য, তার স্বামী যদি মাদকাসক্তিতে হিংস্র হয়ে উঠে, তাহলে সে স্ত্রীর অসহায়ত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা করুণ রূপ ধারণ করে। যেমনটি দেখা যায় মতলব উপজেলা সদরস্থ পৌর এলাকার বাবুরপাড়া প্রধানীয়া বাড়ির গৃহবধূ লামিয়ার জীবনে। মতলব থানা পুলিশের ত্বরিৎ পদক্ষেপে তথা মানবিকতায় এ যাত্রা রক্ষা পেলো লামিয়া।

লামিয়া মানুষের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে। আর তার স্বামী ইমরান হচ্ছে দিনমজুর। তাদের সংসারে আছে দেড় বছরের শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ ও পাঁচ বছরের শিশু কন্যা সামিয়া। ইমরান মাদকাসক্ত। প্রায়শই মাদকের টাকা নিয়ে হয় স্ত্রী লামিয়ার সাথে ঝগড়া। গত শনিবার দিবাগত রাতে দু শিশু সন্তান ও স্বামী নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন লামিয়া। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ভোরে ঘুম থেকে জেগে লামিয়া দেখেন, তার শিশুপুত্রও নেই, স্বামীও নেই। চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে রোববার সন্ধ্যায় থানায় অভিযোগ করেন।

মতলব থানা পুলিশ লামিয়ার অভিযোগকে খুবই গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়। একজন মায়ের নাড়িছেঁড়া ধনকে হারানোর কষ্টকে পুলিশ সংবেদনশীলতার সাথে তাদের উপলব্ধিতে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান চালায়। রাত ৯টায় আসে সাফল্য। পুলিশ ওই সময় মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ির এক প্রবাসীর নিঃসন্তান স্ত্রী রুমা আক্তারের কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং রাতেই তার গর্ভধারিণী মা লামিয়ার কোলে তুলে দেয়। এতে লামিয়ার আনন্দ-অভিব্যক্তি এমন : থানার স্যারগো অনেক ধন্যবাদ। তারা আমার কষ্ট দূর করতে আমার সন্তানকে উদ্ধার করে আমাকে ফেরত দিয়েছেন। আমার স্বামী নেশা করে। নেশার টাকা জোগাড় করতেই আমার ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছে ২০ হাজার টাকায়।

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের পুলিশ বিশেষ করে চাঁদপুর জেলার পুলিশকে অনেক মানবিক কাজ করতে দেখা যায়। এক সময় এমনটি ছেলো বিরল। এই তো সেদিন নূতনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এক এটিএসআই একটি শিশুকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করে যেভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় বসবাসরত বাবা-মা’র হাতে তুলে দিয়েছে, তাতে বিমুগ্ধ হতে হয় বৈকি। আর রোববার মতলব থানার পুলিশ মাদকাসক্ত ইমরান কর্তৃক বিক্রি করে দেয়া তার দেড় বছরের শিশু পুত্রকে দ্রুততার সাথে উদ্ধার করে তার মা লামিয়ার কোলে যেভাবে তুলে দিয়েছে, তাতে পুলিশের মানবিকতা খুবই সুন্দরভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। আমরা সর্বদা এমন মানবিক পুলিশই চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়