প্রকাশ : ০১ জুন ২০২২, ০০:০০
এখনতো শহর-গ্রামের সকল শ্রেণির সাধারণ মানুষের নিকট সঠিক তথ্য পৌঁছার অনেক সুযোগ রয়েছে। এক সময় সেটা ছিলো না। বিশেষ করে মুঠোফোন সহজলভ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। আগে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত লোকজন মনে করতো, হাসপাতালে যারাই চাকুরি করে তারা বুঝি ডাক্তার কিংবা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা জানে। এ জানার পেছনে দৃশ্যমান কিছু কারণও ছিলো এবং আছে। যেমন : সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত কিংবা বরখাস্ত লোকজনের অনেকেই, কেউ কেউ চাকুরি করাকালীন ঔষধের দোকান দেয় এবং ওইসব দোকানে রোগী আসলে নানা ঔষধ দিয়ে থাকে। ঐ ঔষধে কাজ হলেই ছড়িয়ে পড়ে সুনাম(!)। আর এতেই রোগীর সংখ্যা ও ঔষধ বিক্রি বাড়ে। এমন ব্যক্তিরা যে কেবল ডাক্তারদের সান্নিধ্য পাওয়া, কিন্তু চিকিৎসাবিদ্যা পড়ুয়া নয়, সেটা কিন্তু ঔদাসীন রোগীরা জানতে চায় না। এতে বস্তুত রোগীরা প্রতারিত হন।
আমাদের দেশে রোগী প্রতারিত হবার মোক্ষম ফাঁদ হচ্ছে চাকচিক্যময় কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল/ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর মধ্যে নানা সাজসজ্জা, এলইডি টিভি, এয়ার কন্ডিশন ইত্যাদি দেখে রোগীরা মনে করেন, নিশ্চয়ই এখানে অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসকসহ দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে, যারা ভালো চিকিৎসা সেবা প্রদানে সক্ষম। এমন মনে করাটাতেই ভুয়া কিছু চিকিৎসক এসব স্থানে চেম্বার করে এবং ভিজিটিং কার্ড ও লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার চালায় এবং কমিশনভোগী দালালদের মাধ্যমে রোগী বাগিয়ে আনে বা সংগ্রহ করে। এরা পেছনে লাগতে পারে এমন সম্ভাব্য টিকটিকিদের ম্যানেজ করার কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু প্রতারিত হবার পর সাহসী ও প্রতিবাদী রোগীর নিরাপস ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত এরা ধরা পড়ে। ততক্ষণে তারা আখের গুছিয়ে ফেলে। এজন্যে চেম্বার খুলে দেয়া বা চালানোর সুযোগ প্রদানকারী হাসপাতাল/ক্লিনিক/ ডায়াগনস্টিক মালিকরা থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যদি এদেরকে চিকিৎসক নিয়োগ কিংবা চেম্বার খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভুলের জন্যে কঠোর আইনের আওতায় আনা যেতো, তাহলে ভুয়া চিকিৎসক ও রোগী প্রতারণা অনেক হ্রাস পেতো বলে বিজ্ঞ পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠের পক্ষে ফরিদগঞ্জে কর্মরত সক্রিয় প্রতিনিধি শামীম হাসান কর্তৃক সোমবার পরিবেশিত এক সংবাদে চোখ কপালে ওঠার মতো পরিস্থিতি হয়েছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে অভিযানের প্রথম দিনে চোর-পুলিশ খেলা ॥ অভিযানের কিছুক্ষণ পরই খুললো মেডি ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ॥ কাঠমিস্ত্রির কাজ করা লোকই কথিত চিকিৎসক’। এই চিকিৎসকের(!) নাম হচ্ছে মোহাম্মদ আলী সোহাগ। তিনি শামীম হাসানকে বলেন, আপনাদের কিছু করার থাকলে করেন। আমার সাথে আশরাফ ভাই (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা)-এর সম্পর্ক আছে, যা করার ওনারা করবে। স্থানীয়রা জানান, সোহাগের কোনো ডাক্তারি জ্ঞান নাই, পূর্বে এই লোক কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো। শিহরিত হবার মতো এ তথ্যে উক্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তিনি দায় সারার জন্যে আমার নাম ব্যবহার করেছেন।
আমাদের মতে, স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, উদাসীনতা, প্রশ্রয় ও অর্থপূর্ণ নীরবতার কারণে কাঠমিস্ত্রির কাজ করা লোকসহ চিকিৎসা বিদ্যাহীন অনেক লোকই গ্রাম বা শহরের চিকিৎসালয়গুলোতে রোগীদের প্রতারিত করার সুযোগ পায়। গত ২৬ মে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ এবং সেটি বাস্তবায়নের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, এবার বোধহয় ভুয়া ডাক্তারের অপচিকিৎসা ও অপ্রয়োজনীয় টেস্টের নামে রোগী হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা উক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নে সাঁড়াশি অভিযান চাই এবং সে অভিযানের ধারাবাহিকতা চাই।