বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

নিঃসন্তান হওয়াটাই কি অপরাধ?
অনলাইন ডেস্ক

একজন নারী ও একজন পুরুষ বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর সাধারণত সন্তান প্রত্যাশা করে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা শতভাগ দম্পতির সে প্রত্যাশা পূরণ করে না। কৃত্রিম উপায়ে এবং আধুনিক ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে কেউ কেউ সন্তানের বাবা/মা হতে পারলেও নিঃসন্তান দম্পতির শতকরা নিরানব্বই ভাগেরও বেশি সেটি পারে না সামর্থ্যরে অভাবে। কোনো নারীর যদি কোনোভাবেই তার গর্ভে সন্তান ধারণের সক্ষমতা না থাকে, তাহলে শত চেষ্টাতেও অর্থাৎ সকল প্রকার উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগেও তিনি সরাসরি সন্তানের মা হতে পারেন না। তবে সেটিরও অস্বাভাবিক সমাধান উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেটি নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিতর্ক থাকায় তার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।

কোনো দম্পতি সন্তানের বাবা-মা হলেও অকাল ও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সে সন্তান বা সন্তানরা দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেলে এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে আর কোনো সন্তান না আসলে পরিস্থিতির আলোকে তারা অগত্যা নিঃসন্তান হয়ে যায়। এমনে দম্পতির একজন মরে গেলে আরেকজন পর্যাপ্ত সচ্ছলতা সত্ত্বেও চরম অসহায়ত্ব ও নিগ্রহের শিকার হয়। তাকে আত্মীয়/অনাত্মীয়দের কেউ সেবা দিতে এগিয়ে আসলেও প্রতিদানস্বরূপ সম্পদের উত্তরাধিকারী হবার প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য বাসনা মনে পোষণ করে। আর সচ্ছলতা না থাকলে নিঃসন্তান দম্পতির মধ্যে একজনের মৃত্যুর পর আরেকজন আমাদের মতো দেশে/সমাজে যেনো খড়কুটোর মতো অথৈ সাগরে গন্তব্যহীন ভাসতে থাকে। এমন একজন ভাসমান নিঃসন্তান ও বিধবা নারীই হচ্ছেন করিমজান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চাঁদপুর শহরস্থ পুরাণবাজার মক্কা মিল এলাকায় বেপারী বাড়ি সংলগ্ন খালপাড়ে একটি ছাউনি তুলে কোনোরকম দিনাতিপাত করছিলেন। আর ক্ষুণিœবৃত্তির উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষা করাকে। সম্প্রতি পুরাণবাজার মেঘনা নদীর পাড়স্থ এক দোকানে রুটি-ভাজি খাওয়া শেষে বিল দিতে গেলে দোকানদার তাকে ভিক্ষা করতে গিয়েছে ভেবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে তার বাম পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যায় এবং বাম হাতে আঘাত পেয়ে তিনি আহত হন। বেশ ক’দিন নিজের ঝুপড়িতে কষ্টে কাটলেও গত ১৩ এপ্রিল তিনি নিজে এসেই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি হন। তার প্রতি ওই দোকানদারের নির্মম আচরণ নিয়ে ফেসবুকে কবির মিজির একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের সংবেদনশীল মনে দাগ কাটে। তিনি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে করিমজানকে দেখেন ও চিকিৎসার জন্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া বৃদ্ধ ভাতা না পাওয়ায় প্রতি মাসে বৃদ্ধাকে এক হাজার টাকা করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। নিঃসন্দেহে মেয়রের এই মানবিকতা সাধুবাদযোগ্য। তারপরও কথা থেকে যায়।

৭০ বছর বয়সী করিমজান নিঃসন্তান ও বিধবা এবং ভিক্ষুক হওয়ায় একজন দোকানদার তার প্রতি যে অমানবিক আচরণ করলো, সেটা থেকে কি সে রেহাই পেতে পারে? করিমজানের নিঃসন্তান হওয়াটা যেহেতু অপরাধ নয়, সেহেতু সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়র জুয়েলের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উক্ত দোকানদারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং তার নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা করা, অন্যথায় তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করা। এতে একজন অসহায় বৃদ্ধার শারীরিক ও মানসিক কষ্ট অনেক লাঘব হবে। বস্তুত এই লাঘবের উদ্যোগটা আর্থিক সহযোগিতার চেয়ে অনেক বড় হতে পারে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়