প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
যে কাজ করে তারই সমালোচনা হয়, যে নামাজ পড়ে তারই কাজা হয়, যে রোজা রাখে তারই রোজা ভাঙ্গার প্রশ্ন আসে। আমাদের দেশে সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশকে দিনের ২৪ ঘণ্টা এবং বছরের ৩৬৫ দিনই কাজ করতে হয়। সেজন্যে পুলিশের প্রতি জনপ্রত্যাশা যেনো আকাশচুম্বী। এ প্রত্যাশা পূরণ না হলেই পুলিশের কাজের সমালোচনা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। অবশ্য পুলিশ বদনামের ভাগীদার হয় কিছু লোভী ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের কারণেই। পুলিশ ঘুষ খায়, না মানুষ পুলিশকে ঘুষ দেয়-এ নিয়ে এক জেলা প্রশাসক ও সদর থানার ওসিকে নিয়ে জমজমাট রম্য গল্প আছে। সে গল্পে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলায় তাঁর নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া এবং পুলিশ যে ঘুষ খায় না, মানুষ পুলিশকে কখনও কখনও নিজেই ঘুষ দেয় সে বিষয়টি উঠে এসেছে।
ভালো-মন্দের মিশেলে পুলিশ যদি একটি সমাজে কাজ না করতো, তাহলে সে সমাজের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো-সেটা ভাবতেই যেন শরীর শিউরে ওঠে। অপরাধপ্রবণ মানুষগুলো আমাদের দেশে কিলবিল না করলেও বড্ড সুযোগসন্ধানী হয়ে থাকে। পুলিশের ন্যূনতম শৈথিল্যে এরা ছোট-বড় হেন অপরাধ নেই যে করে না বা করার চেষ্টা করে না। আমাদের দেশে কোনো থানা এলাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের দৃশ্যমান শৈথিল্যের বিষয়টি জানা যায় না, তবে জনবল সঙ্কট ও যানবাহন সঙ্কটের বিষয়টি প্রায়শই জানা যায়। এ সঙ্কট থেকেই কোনো কোনো থানায় পুলিশি তৎপরতায় শৈথিল্য অনুভূত হয়। চাঁদপুর জেলায় রয়েছে এমন একটি থানা, যেটি হচ্ছে ফরিদগঞ্জ থানা। ১৯১৮ সালের ৭ অক্টোবর এ থানাটি গঠিত হয়। এ থানা এলাকা নিয়ে ১৯৮২ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা গঠিত হয়। ২৩১.৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলাটি বহু আগে থেকেই একটি স্বতন্ত্র সংসদীয় এলাকা হিসেবে বিবেচিত, যেটি চাঁদপুর-৪ নামে পরিচিত। অথচ এতো বড় একটি উপজেলায় একটি থানা ছাড়া নেই কোনো ফাঁড়ি। ফলে ডাকাতি ও খুন-খারাবি লেগেই আছে।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের ভূঁইয়া বাড়িতে নিজ বসতঘর থেকে ফরিদউদ্দিন ভূঁইয়া নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে পরদিন তার ভগ্নিপতি দুলাল চৌধুরী অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ রুবেল ফরাজী হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামীদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালান। ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ে তিনি সাফল্য খুঁজে পান। একে একে দুজন খুনিকে ধরে ফেলেন। একজন খুনি সালাউদ্দিন ভূঁইয়া হচ্ছে নিহত ফরিদের বন্ধু এবং আরেকজন আব্দুর রহমান প্রতিবেশী। এ দুজন নূতন এক হাজার টাকার ১০টি নোট প্রাপ্তির লোভ এবং সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ফরিদের পরকীয়া সম্পর্কের সন্দেহে ফরিদকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) ১৮ এপ্রিল সোমবার মধ্যাহ্নে তাঁর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন।
চাঁদপুরে সাম্প্রতিক ২-৩ বছরে, বিশেষ করে গত এক বছরে যে কোনো হত্যার রহস্য উন্মোচনে পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার ৪৮ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলোর রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। এমন তৎপরতায় পুলিশ যে জনআস্থার আনুকূল্য পাচ্ছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার কিছু মামলায় (যেমন বিষ্ণুদীর হান্নান মৃধা হত্যাকাণ্ড) এক মাস বা ততোধিক সময় পার হলেও সাফল্য খুঁজে পায় না। ডাকাতির মামলাগুলোতেও পুলিশের সাফল্য আশানুরূপ নয়। আমাদের বিশ্বাস, সেগুলোতেও ক্রমশ সাফল্যের হার বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের দেশের পুলিশ একদিন বিশে^র উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশগুলোর ন্যায় ব্যাপক জনআস্থার অধিকারী হবে।