প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
এ মর্মান্তিক মৃত্যু আর নয়
জন্মিলেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এটা থেকে কারো রেহাই নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিন্তু কার কীভাবে মৃত্যু হয় বা হবে সেটা কোনো প্রাণীই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারে না। সাধারণত রোগ-শোকে ভুগে পরিণত বয়সে কিংবা গড় আয়ুতে কোনো প্রাণীর মৃত্যু হলে সেটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এতে তুলনামূলক কষ্ট কম লাগে আত্মীয়স্বজনদের। কিন্তু দুরারোগ্য রোগে ভুগে কম বয়সে মৃত্যুবরণ করলে সেটাকে অকাল মৃত্যু বলা হয়, যাতে বেশি কষ্ট পায় অনেকে। কোনো দুর্ঘটনায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে একদিকে সেটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু যেমন বলা হয়, তেমনি কারো জন্যে অকাল মৃত্যুও বলা হয়। এমন মৃত্যুর শোক দুঃসহ। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুটা আমাদের দেশে অনেক বেশি। ঘর থেকে বের হলেই এমন দুর্ঘটনার ফাঁদ যেন প্রতি পদে পদে। সেজন্যে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষগুলো ঘরে না ফেরা পর্যন্ত কারো না কারো উৎকণ্ঠায় থাকতেই হয়।
|আরো খবর
আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাটি একটি মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে কতো তরুণ-যুবক যে প্রতিদিন প্রাণ হারায় তার সঠিক হিসেব নির্ণয় করা কঠিন। এভাবে প্রাণ হারানোদের জন্যে কষ্ট লাগে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-পড়শির। কিন্তু মোটর সাইকেলে এমন কিছু প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটে, যার জন্যে শ্রোতামাত্রই মনে কষ্ট লাগে। এমন একটি কষ্ট লাগার ঘটনাই ঘটেছে গত শুক্রবার। এদিন স্বামীর মোটর সাইকেলের চাকায় বোরকা পেঁচিয়ে এক হতভাগ্য স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা চৌরাস্তায়।
এ দুর্ঘটনা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া শ্রীরামপুর নিজ বাড়ি থেকে গত ১ এপ্রিল শুক্রবার সকালে জনৈক সবুজ ভূঁইয়া তার স্ত্রী আসমা ও পাঁচ বছরের শিশুপুত্র আল-আমিনকে নিয়ে হাইমচর উপজেলার আলগীবাজারে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে চান্দ্রা চৌরাস্তা এলাকায় চলন্ত অবস্থায় স্ত্রীর পরনের বোরকা মোটর সাইকেলের পেছনের চাকায় আটকে যায়। এতে স্ত্রী আসমা সড়কে ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।
স্বামীর মোটর সাইকেলের চাকায় বোরকা পেঁচিয়ে হাইমচরের আলগীবাজারস্থ জনৈক মোস্তফা পাটোয়ারীর মেয়ে আসমার মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর যে-ই জেনেছে, সে-ই ভীষণ দুঃখ পেয়েছে। এমন মৃত্যু কিন্তু আরো হতে পারে, যদি মোটরসাইকেল চালকরা সচেতন না হন। চালককে যেমন হেলমেট পরতে হয়, তেমনি পেছনের আরোহীকেও পরতে হয়। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় বিভাগীয় শহর ছাড়া অন্যত্র চালক ও আরোহীর হেলমেট পরার দৃশ্য বিরল। ট্রাফিক পুলিশ এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাপে সাময়িক সক্রিয় হলেও পরে আবার নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এজন্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হেলমেটের অভাবজনিত কারণে মৃত্যু বাড়ছে বৈ কমছে না। আর বাবা/স্বামী/বন্ধু/ভাই/রাইড শেয়ারার যিনিই তার মোটরসাইকেলের পেছনে আরোহী হিসেবে কোনো নারীকে নেবেন, অবশ্যই নারীটির ওড়না, বোরকা কিংবা ঝুলন্ত অন্য কোনো কাপড় যে তার জন্যে বিপদ ডেকে আনতে পারে সেটা জানিয়ে তাকে আগাম সতর্ক করে দেবেন। আমাদের বিশ্বাস, এতে এমন দুর্ঘটনা ক্রমশ কমতে থাকবে।