প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বাইরে সদরঘাট হলেও ভেতরে ফিটফাট!

নানান কারণে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় গণমাধ্যমে চাঁদপুর জেলা উপস্থাপিত হচ্ছে নেতিবাচকভাবে। সর্বশেষ এ জেলাটি ব্যাপক আলোচিত হয় একটি নবজাতক বিক্রির ঘটনায়। এ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর পৌরসভাধীন বারআনি গ্রামের জনৈকা প্রসূতি তামান্না বেগম সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হলেও হাসপাতালের ২৬ হাজার টাকা বিল পরিশোধে ছিলেন অক্ষম। উপর্যুপরি এ বিল পরিশোধের ভয়ে তার স্বামী হয়ে গেছেন নিরুদ্দেশ। এমতাবস্থায় হাসপাতালের মধ্যস্থতায় পারস্পরিক আপসরফায় তামান্না বেগম তার সন্তানটিকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে বাড়ি ফিরেন। ঘটনাটি ২৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখের। ঘটনাটি ঘটে ছেঙ্গারচর বাজারস্থ পালস্ এইড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এ ঘটনা ৩ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যম কর্মীদের কল্যাণে মিডিয়ায় চলে আসলে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। ওইদিন রাতে স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন বিক্রি হওয়া নবজাতকটিকে ষাটনল থেকে উদ্ধার করে গর্ভধারিণী মায়ের কোলে তুলে দেয়। তারপর শুরু হয় এই মা ও তার নবজাতকের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শন।
অথচ এই চাঁদপুরের প্রত্যন্ত এলাকাস্থ আরেকটি উপজেলা হাইমচরে মতলব উত্তরের তামান্না বেগমের মতো দরিদ্র প্রসূতিরা স্থানীয় কোনো হাসপাতালে বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে ২৬ হাজার টাকা বিলের জন্যে সন্তান বিক্রি দূরে থাক, ২৬শ’ টাকাও খরচ করতে হয় না। কেননা এখানকার আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বিনা খরচে নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের বাচ্চা প্রসব করানোর ক্ষেত্রে প্রভূত সুনাম অর্জন করেছে। এ কেন্দ্রটির এমন কার্যক্রমের জন্যে গত ১৮ জানুয়ারি এখানে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও সংক্ষেপে সাকমো) বিনু রাণী প্রসূতি সেবাদান ও নিরাপদ প্রসবের জন্যে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মাননা লাভ করেছেন।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে সাজ্জাদ হোসেন রনি কর্তৃক ‘হাইমচরে প্রসূতিদের আপন ঠিকানা আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ শিরোনামে পরিবেশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, হাইমচরের চর পোড়ামুখী গ্রামের মাজেদা বেগম তার ভাশুরের প্রসূতি মেয়েকে চাঁদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসক তাকে সিজারিয়ান অপারেশন অর্থাৎ পেট কেটে বাচ্চা প্রসব করানোর কথা বলেন। প্রসূতি তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে নিয়ে আসা হয় আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এখানে সাকমো বিনু রাণীর মাধ্যমে বিনা অপারেশনে অর্থাৎ নরমাল ডেলিভারীতে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এভাবে উক্ত কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারি নিয়ে অনেক প্রসূতি ও তাদের অভিভাবকদের সন্তুষ্টি প্রকাশের অজ¯্র ঘটনা রয়েছে।
উক্ত সংবাদে আরো লিখা হয়েছে, জানুয়ারি ২০২২ মাসে উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ৩৭জন প্রসূতি নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন, আর গত এক বছরে করেছেন ৪৫০ জন। হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিজারিয়ান অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে চাঁদপুরে রেফার করা রোগীরও উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারি করানোর সুনাম রয়েছে। উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান বিনু রাণী বলেন, এখানকার স্থানীয় লোকজন ও আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসূতি নারীদের নরমাল ডেলিভারি করে আসছি। এ পর্যন্ত জটিল কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমি প্রসূতিদের নরমাল ডেলিভারির প্রয়োজনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি এবং দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে কোনো সময়ে সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।
আমাদের চাঁদপুরে ২-৪ জন সাকমোকে যখন কর্মস্থলে না থেকে চাঁদপুর শহরের বাসায় থেকে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়া ও সেখানে রোগী দেখে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখি, তখন বিনু রাণীর মতো সাকমো যেনো সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। দায়িত্ব পালনে তাঁর ইন্টেগ্রেটি বা অখ- সততায় মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু তাঁর কর্মস্থল আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি মোটেও ফিটফাট নয়, একেবারে জরাজীর্ণ। সেজন্যে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদক সাজ্জাদ হোসেন রনি তার সংবাদ-সূচনায় লিখেছেন, ‘উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’-এমন প্রবাদ থাকলেও বাইরে সদরঘাট ভেতরে ফিটফাট অবস্থায় রয়েছে উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। আমরা এ সংবাদ-সূচনাটিকে যথার্থ মনে করছি এবং এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থানীয় এমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সুদৃষ্টি ও ত্বরিৎ পদক্ষেপ কামনা করছি।