প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ০১:৪৮
সাচারের রথযাত্রায় লাখো সনাতনীর ঢল
জমিদার গঙ্গা গোবিন্দের স্বপ্ন থেকে শুরু হওয়া রথযাত্রা আজ সনাতনীদের আবেগের মিলনমেলা

জমিদার গঙ্গা গোবিন্দের স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তৎকালীন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাচারে শুরু হওয়া রথযাত্রা আজও টিকে আছে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সাচারে। এবারের রথযাত্রায় লাখো সনাতনী ভক্তের ঢল নেমেছে। প্রায় ১৫৮ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত এই সাচার রথযাত্রা এখন এলাকার সবচেয়ে বড় সনাতনী মিলনমেলা হিসেবে বিবেচিত।
|আরো খবর
শুক্রবার (২৭ জুন ২০২৫) বিকেল ৫টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত রথের দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেন। আগামী ৪ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথ।
সনাতনী ভক্তরা জানান, এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩-৪শ’ ভ্রাম্যমাণ দোকান গড়ে উঠে, যা রথমেলায় রূপ নেয়। জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার সুবিধাও এতে হয়।
এছাড়া সাচার জগন্নাথ মন্দির ছাড়াও এখানে অবস্থিত দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির ও কালী মন্দির ঘুরে দেখা যায়, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুসজ্জিত রথে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার প্রতিমা স্থাপন করে সেবায়েতগণ পাখা দিচ্ছেন। ভক্তরা রথের দড়ি ধরে সুশৃঙ্খলভাবে টানছেন, আর রথ থেকে ফল, ফুল ছুড়ে দিচ্ছেন সেবায়েতগণ, যা ভক্তরা আনন্দের সাথে গ্রহণ করছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ও মন্দির ভক্ত রাজিব সরকার জানান, ১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথযাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা প্রাচীন রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে যুদ্ধের পর পোড়া সেই রথ দিয়েই আবার রথযাত্রা চলতে থাকে।
পরে তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুন রথ নির্মাণ করে দেন। সেই রথেই বর্তমানে সাচারের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
গণেশ চন্দ্র ধর, সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক জানান, মন্দির এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। গরম ও নিরাপত্তা ইস্যুতে জাগো হিন্দু পরিষদ, গীতা সংঘসহ বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা ক্যাম্প করে পানীয়, শরবত ও ওষুধ বিতরণ করছে।
সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, সাচারের রথযাত্রায় দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো সনাতনী ভক্ত আসেন। ভারত, নেপাল, ভুটান থেকেও ভক্তরা এই রথযাত্রায় অংশ নেন।
তারা আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সুধীমহলকে সঙ্গে নিয়ে নির্বিঘ্নে রথযাত্রা আয়োজনের জন্য কয়েকশ’ সনাতনী যুবক নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জনগণের দান-অনুদানেই পরিচালিত এই মন্দিরে ভবিষ্যতেও ভক্তদের আগমনই আমাদের কাম্য।
ডিসিকে/এমজেডএইচ