সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৩

রক্ষক যেখানে ভক্ষক

বিমল কান্তি দাশ
রক্ষক যেখানে ভক্ষক

ঊর্মিবিহীন সুগভীর পয়োধির স্থবিরতা যেমন রবির উদয়াস্তের মনোরঞ্জক নাচন এবং সুধাকরের নিশিকালীন নাচন দৃশ্য থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা বঞ্চিত হয়, তেমনি স্রোতবিহীন তটিনী মৃতপ্রায় জলাধারে রূপান্তরিত হয়ে প্রকৃতি তার নিজস্ব ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডা-রাশিয়া ব্যতীত ধর্ম-মথিত রাজনীতিতে রঞ্জিত দেশগুলোর চলমান রাজনীতি, মানব জাতির জাতিসত্তা, স্বাধীনতা, আত্মপরিচয় এমনভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে যেন বন্য পশুর পাশবিক সত্তাও হার মানবে। এখানে আইনহীনতার প্রভাবে রক্ষকরাই সুস্পষ্টভাবে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। মানবতা পদদলিত। আইনের প্রবক্তারাই বেআইনি কাজে সিদ্ধহস্ত। সত্যের বাহক ইতিহাসের ভাষ্য অনুযায়ী বলা আছে, খিস্টপূর্ব ৩৩০০-১৩০০ অব্দে মানব সভ্যতা সূচিত হয়েছিল পাঞ্জাবের বেলুচিস্তানের সিন্দুনদের উপত্যকায় হরপ্পা-মহেনজোদারোতে। যা তিন সহস্রাধিক বছর মাটি চাপা থাকার পর ১৯২০ সালের খনন কাজে আবিষ্কৃত নিদর্শন সিন্ধু সভ্যতা নামে আখ্যায়িত। কালান্তরে রাজ রক্তের ধারক ও বাহক হিসেবে যথাক্রমে মৌর্য-চন্দ্রগুপ্ত, সেনবংশ এবং পাল বংশ ১২০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাক-ভারত উপমহাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলো শাসন করেছিলেন। এদের মধ্যে ভারত সম্রাট হিসেবে 'অশোক মৌর্য' ছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট শাসক। তাঁর পূর্বসূরি ছিলো বিন্দুসার-উত্তরসূরি ছিলেন রাজা দশরথ।

তারপর বিভিন্ন শাসকের হাত ঘুরে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাস থেকে এই পাক-ভারত উপমহাদেশটি ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন দেশ জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পাকিস্তানের একটি অংশ অন্য অংশের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যে যুদ্ধ ভারতের সরাসরি সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ মার্চ, ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত চলমান ছিল এবং ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পশ্চিম পাকিস্তানই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যে এতোটা বদলাতে পারে তা একমাত্র ধর্মীয় হানাহানির জিকিরেই সম্ভব।

বাংলাদেশের রাজনীতির ট্রেন এখন লাইনচ্যুত। এমতাবস্থায় নিকট অতীতকে অবশ্যই স্মরণ করতে হয়। যেমন ১৯৪৮ সালের পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুর সংখ্যা ছিলো ৩৩.৫%-এর পর, এদেশে ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, ১৯৬২ সালে রাজশাহীর দাঙ্গা, জানুয়ারি ১৯৬৪ সালে কাশ্মীরে হজরত বাল নামক তীর্থক্ষেত্রে হজরত মোহাম্মদ (সা.) চুুল চুরি করার অজুহাতে বাঙালি হিন্দু উচ্ছেদ ও হত্যার সূচনা করা হয়। তখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণে অগণিত হিন্দুদের হত্যা, ধর্ষণ এবং বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, যার প্রতিকার প্রশাসন থেকেও পাওয়া যায় নি। ১৯৬৪ সালে খুলনা এবং নারায়ণগঞ্জ সহ সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানে যে অমানুষিক হিন্দু নির্যাতন হয়েছিল তা ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষের রচিত উপন্যাস “ঞযব ংযধফড়ি ষরহবং” শুভ শ্রী ঘোষের রচিত উপন্যাস 'ট্যাক্স বর্ডারস'-এ বর্ণিত আছে ও ইতিহাসের এই নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ড যা 'জালিয়ানওয়ালা বাগ' হত্যাকাণ্ডের চাইতেও নিষ্ঠুর। সচিত্র গল্পে পাওয়া যাবে চলচ্চিত্রকার তানভির মোকাম্মেলের ১৯৯৯ সালের চলচ্চিত্র 'চিত্রানদীর পাড়ে'। তখনও প্রশাসনের ভূমিকা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। আজ কিন্তু হিসাব হচ্ছে সংখ্যালঘুর পরিমাণ ৮% মাত্র।

আবার বাংলাদেশের ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাঘরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বরিশালে যে নারকীয়-কুৎসিত-বীভৎস কায়দায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে পাশবিক ধর্ষণ-নির্যাতন চালিয়েছিল তা পৃথিবীর নিকৃষ্টতম 'জালিয়ানওয়ালা বাগ' হত্যাকাণ্ডকেও লজ্জিত করে দিবে (িি.িংধপযধষধুধঃধহ.পড়স)। শত শত কিশোরীকে ও অন্তঃসত্ত্বা করেছিল। লজ্জায়-ঘৃণায় তখন বহু পরিবার সম্ভ্রম হারিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। এসব ঘটনা দ্বারা কি সংখ্যালঘুর পরিমাণ হ্রাসের হিসেবে 'আকলমান্দ কে লিয়ে ইশারা কাফি হায়, না?' এর সাথে রয়েছে প্রশাসনিক অসহযোগিতা। যে দেশে ধর্মীয় কুৎসিত উন্মাদনায় মানবতা বিপর্যস্ত হয় সেই দেশে থেকে নৈতিকতা পিছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। কারণ ধর্মীয় নৈতিকতা বোধই মানুষের জীবন শৈলী।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল জে. এন. উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়