বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২০

হে অতীত কথা কও

বিমল কান্তি দাশ
হে অতীত কথা কও

পারস্য বিজয়ের পর ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র রাজ্য আক্রমণ করে আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাস সেই রাজ্যের রাজাকে বন্দী করে মহামতি আলেকজান্ডার সকাশে হাজির করার পর এক প্রশ্নের উত্তরে রাজা বলেছিলেন যে, একজন রাজা অন্য একজন রাজার কাছে যেরূপ ব্যবহার প্রাপ্য, আমিও তদ্রূপ প্রত্যাশা করি। প্রত্যুত্তরে আলেকজান্ডার মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘বিচিত্র এ ভারতবর্ষ, সেলুকাস!’ এই যথার্থ উক্তিটির ঔচিত্যবোধে কিন্তু ভারতবর্ষকে হাড়ে হাড়ে জড়িয়ে রেখেছেন।

বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র ভূমিতে জন্মগ্রহণ করে ভারতের হয়ে যে প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন, এমন অনেকের মধ্যে কয়েকজন হলেন কুমিল্লার শচিনদেব বর্মন, যার উল্লেখযোগ্য পদচারণা ছিলো হলিউড এবং বলিউডের সর্বস্তরে। কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়। মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন। গোপালগঞ্জে জন্মেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। নারায়ণগঞ্জে জন্মেছিলেন জ্যোতি বসু। পাবনায় জন্মেছিলেন সুচিত্রা সেন। মুন্সীগঞ্জের ছেলে ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর। একই স্থানে জন্মেছিলেন সরোজিনী নাইডু। মাদারিপুরের সুসন্তান ছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।

বীর প্রসবিনী বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এসব ব্যক্তিত্ব কেন ও কিভাবে ভারতীয় হয়ে গেলেন তার ব্যাখ্যা একমাত্র অতীতের গর্ভেই লুকানো রয়েছে।

একদা বলা হতো, ব্রিটিশ শাসিত রাজ্যে কখনো সূর্য অস্ত যায় না। ঘোরতর বিপ্লবের মাধ্যমে সেই দুর্র্ধষ ব্রিটিশদের সুরক্ষিত অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে ব্রিটিশদের ভারত থেকে বিদায়ের ঘণ্টা যাঁরা বাজিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ। আর এই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ জ্বালানি যুগিয়েছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আর মসনদের ভাগাভাগিতে ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং লিয়াকত আলী খান। ভারতে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, জওহের লাল নেহেরু প্রমুখ।

সিংহাসনে বসার বিভোর তাগিদে বহু অমীমাংসিত বিবাদীয় প্রসঙ্গ ঝুলন্ত রেখে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের নেতৃত্বে রেডক্লিপ রেখা টেনে ভারত-পাকিস্তান দ্বিখণ্ডক বর্ডার হয়েছিলো। সেই অভিশপ্ত রেডক্লিপ রেখাটি আজও এই উপমহাদেশে সর্বদাই পারস্পরিক ধর্মীয় মতান্তর, সীমানা বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতায় বিক্ষিপ্তভাবে রাজপথ নর-শোণিতে রঞ্জিত হচ্ছে।

মূলত ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়েছিল দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। আর পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বিভাজিত হয়ে জন্মেছিল বর্তমানের ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ শোষণ এবং বৈষম্যের কারণে। পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নির মনান্তরে মতান্তর, আর বাংলাদেশে প্রায় ৯৩% মুসলিম এবং অন্যান্য সকল ধর্মের প্রায় ৭%-এর মধ্যে মনান্তর এবং মতান্তর।

ধর্ম এমন একটা নীতিশাস্ত্র, যা নৈতিকতা-বিশ্বাস-অতিন্দ্রিয় ও আধ্যাত্মিক উপাদানের সাথে সুনির্দিষ্টভাবে সম্পর্কিত। পৃথিবীতে আনুমানিক দশ হাজারের মত ধর্ম রয়েছে। তন্মধ্যে অধিকাংশ অঞ্চলভিত্তিক। অপেক্ষাকৃত অনেক ক্ষুদ্র সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। তারা অনেকটাই তেজষ্ক্রিয় মৌলিক পদার্থের আইসোটপিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। অর্থাৎ তেজষ্ক্রিয় পদার্থের নিউক্লিয়াসের ভরকে বিশেষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করে এক মৌলকে অন্য মৌলে রূপান্তর করা সম্ভব। বিভিন্ন কূটতন্ত্রের বাতাবরণে আচ্ছাদিত আছে রাজনীতি, কিন্তু ধর্মতন্ত্রে শুধুই নৈতিকতা এবং নিয়মানুবর্তিতা। ধর্মনীতির সাথে রাজনীতি সমসত্ত্ব হবেই না।

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা অসুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক। রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ন্যায়ের শাসন এবং নৈতিকতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করাই রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাষ্ট্র যদি আইনহীনতার কবলে পড়ে যায়, তখন সমাজ প্রতিক্রিয়াশীল হয়, সংকট গভীর হয়, সমাজ সৃজনশীলতার চৈতন্য হারিয়ে দিশেহারা নগ্ন আন্দোলনে জড়িয়ে যায়। একটা উন্নত-বিনম্র জাতির জন্ম হয় উন্নত শিক্ষকের দেওয়া শিক্ষা থেকে; শিক্ষকদের প্রকৃত জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, যা থেকে আসে পরিচ্ছন্ন নৈতিকতা। যার মর্মবাণী হলো : ‘আপনি আপনার মত চলুন আর আমাকে আমার মত চলতে দিন’-- এটাই তো মৌলিক সাম্যবাদিতা।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়