বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮

পাওনা আদায়ের এ নৃশংসতায় কী লাভ হলো?

অনলাইন ডেস্ক
পাওনা আদায়ের এ নৃশংসতায়  কী লাভ হলো?

সংবাদপত্রের পাঠকদের মধ্যে যারা ব্যস্ত মানুষ, তারা শিরোনামে চোখ বুলিয়ে নিজ কাজে মগ্ন হয়। তবে কোনো কোনো সংবাদের শিরোনাম দেখে ব্যস্ত পাঠকও থমকে যায় এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েই ফেলে। এমন একটি সংবাদই গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে, যার শিরোনাম হয়েছে 'ভাড়া বাবদ পাওনা মাত্র ১১ হাজার টাকা, অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো!' সংবাদটির পূর্ণ বিবরণ পড়লে পাঠকমাত্রকেই শিহরিত হতে হয়। সেই বিবরণটি হচ্ছে : চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী চৌরাস্তা এলাকায় দৈনিক ভাড়া বাবদ পাওনা টাকার জন্যে শরীফ তালুকদার (১৯) নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যা করে তাকে দোকানের কাঠের সাথে ঝুলিয়ে রাখে দুর্বৃত্তরা। ১ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে এমন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব চক্রবর্তী। ৩০ নভেম্বর শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বাগাদী চৌরাস্তা এলাকায় রাসেল গাজীর অটোরিকশার পার্টসের দোকানে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ভোর ৫টার দিকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান ও সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থল থেকে ওই চালকের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় রোববার দুপুরে নিহত চালক শরীফ তালুকদারের মামা মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নিহত চালক শরীফ তালুকদার বাগাদী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ সাখুয়া গ্রামের তালুকদার বাড়ির মফিজ তালুকদারের ছেলে। তার মায়ের নাম আয়েশা বেগম। অভিযুক্তরা হলেন চৌরাস্তার অটোরিকশার পার্টসের দোকানদার নানুপুর গ্রামের মুজিব গাজীর ছেলে মো. রাসেল গাজী (২৮) ও তার দোকানের মিস্ত্রি সুমন পাটওয়ারী (৩৫)সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। অভিযোগকারী জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, আমার ভাগিনা শরীফের কাছ থেকে রাসেল গাজী অটোরিকশার দৈনিক ভাড়া বাবদ ১১ হাজার টাকা পাওনা ছিলো। ওই টাকা আগামী ১২ ডিসেম্বর পরিশোধ করার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে রাসেল তার দোকানে ভাগিনা শরীফকে ডেকে এনে বেধড়ক পিটায়। নির্দয়ভাবে পিটানোয় তার মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে খুনিরা শরীফকে দোকানের কাঠের সাথে তার পরনের বেল্ট দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। ভোরে এলাকার মনির হোসেন মেম্বারের মাধ্যমে আমরা এই ঘটনা জানতে পারি এবং ঘটনাস্থলে যাই। তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে পুলিশ শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পালিয়েছে। নিহত চালক শরীফ তালুকদারের স্ত্রী বিউটি বেগম ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিউটির বাবা পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ হরিণা গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ সিকদার। তিনি বলেন, মেয়ে আমাকে জানিয়েছে গত রাতে দোকানদার রাসেল আমার জামাই শরীফকে টাকার জন্যে দোকানে আটকে রাখে। মেয়েকে ৩ হাজার টাকা পাঠানোর জন্যে চাপ দেয় রাসেল। বিউটি সকালে টাকা দিবে এবং তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে অনুরোধ করে। কিন্তু তারা মেয়ের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি। চাঁদপুর সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব চক্রবর্তী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ওই চালকের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

আমাদের বিশ্বাস, পুলিশ দ্রুতই প্রযুক্তির ব্যবহারে কিংবা অন্য সব ধরনের কৌশল ব্যবহার করে শরীফের খুনি রাসেলসহ সহযোগীদের আটকে সক্ষম হবে এবং তদন্ত রিপোর্টও দ্রুতই জমা দেবে। আদালত সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। তারপরও কথা থেকেই যায়, শরীফের কাছে মাত্র ১১ হাজার টাকা পাওনার জন্যে খুনি রাসেল যে নৃশংস আচরণ করলো, তাতে কী লাভ হলো? জেদ মেটানো ছাড়া রাসেল ও তার সহযোগীরা কী পেলো? যদি বাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনায় সামর্থ্যের অভাব লক্ষ্য করে দালাল বা প্রভাবশালী কারো মাধ্যমে তাকে ম্যানেজ করে আপস করা যায়, তাতেই খুনি রাসেলসহ তার সহযোগীরা নিষ্কৃতি পেতে পারে বলে কারো কারো ধারণা। তবে এ পর্যন্ত যেতে বিবাদী পক্ষকে এগারো হাজার টাকার কতো গুণ যে খরচ করতে হবে, সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। কিন্তু এতো বড়ো নৃশংসতাকে আপসের কোনো অপতৎপরতায় কোনোভাবেই লীন করে দেয়া যাবে না। এমন অবাঞ্ছিত আপস ঠেকাতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসে বাদীর পাশে দাঁড়াতে হবে। 'বাদী যদি আবেদন করে' তাহলে তাকে সহযোগিতা করা যাবে--এমন মানসিকতা থেকে লিগ্যাল এইড কমিটিকে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও বিশেষ বিবেচনায় বেরিয়ে আসার বিষয়টি ভাবতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়