প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৮
চাঁদপুর বড়ো স্টেশন মাছঘাটে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ উপলক্ষে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে প্রশাসনের মতবিনিময় সভা
২৪ ঘন্টাই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে : জেলা প্রশাসক
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ উপলক্ষে সোমবার ৭ অক্টোবর রাতে চাঁদপুরের বড়োস্টেশন মৎস্য আড়তের বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইলিশ মাছের প্রজনন সুরক্ষার লক্ষ্যে ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে জেলা টাস্কফোর্স এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম এবং নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল বারী মানিক জমাদার, সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার, উপদেষ্টা বাবুল হাজী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত সহ মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে আপনারা দয়া করে মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকুন। এই সময় বরফ কলগুলো বন্ধ থাকবে এবং অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া ইলিশের বাজারগুলো মনিটরিং করা হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে, যাতে ইলিশের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করা যায়। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, মা ইলিশ রক্ষার স্বার্থে ২৪ ঘন্টাই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, ইলিশের মান রক্ষায় চাঁদপুরে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন করা হবে। চাঁদপুর সদরে ১৬ হাজার জেলে নৌকা রয়েছে। অভিযানের সময় কোনো নৌকায় ইঞ্জিন থাকতে পারবে না। ইলিশ সম্পদ রক্ষা হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে জেলেরা। মা ইলিশ রক্ষায় এ বছর কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য আনা হবে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সাথে কথা হয়েছে, তারাও সহযোগিতা করবে। অভিযানের সময় কোনো বরফকল চালু থাকবে না। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ১৩ অক্টোবরের পর কেউ একটি ইলিশ কিনতে পারবে না। যদি ১২ অক্টোবর কেউ মাছ কিনেন তা থাকবে ফ্রিজে। যার কাছে একটি ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। একটি মাছ যদি ৪০% ডিম ছাড়তে পারে, তাহলে নদীতে ইলিশে সয়লাব হবে। আমরা যদি মা ইলিশের যত্ন না নেই তাহলে একদিন নদী থেকে ইলিশ হারিয়ে যাবে। অভিযানের সময় ২৪ ঘন্টাই দিন থাকবে, আমাদের কাছে কোনো রাত থাকবে না। জোয়ারের সময় অভিযান বেশি জোরদার করা হবে। মাছকে সমুদ্র থেকে কেউ টেনে আনতে পারবেন না। মাছ তার গতিতে আসে। তাই মাছের গতিপথে যেন বাধা না হয়, পানি দূষণমুক্ত থাকাসহ প্রয়োজনীয় সকল কাজ করা হবে। শুধু জেলে নয়, আমরা জেলেদের গডফাদার ধরবো। চাঁদপুরে ৪৩ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃত জেলে যাচাই বাছাই করে অতি শীঘ্রই হালনাগাদ করে প্রকৃত জেলেদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তারা নিজেরা তাদের তথ্য মৎস্য অফিসে নিয়ে গিয়ে জমা দিবেন। আমরা চাই না, কারো ওপরে আইন প্রয়োগ করতে। আমরা চাই, ২২ দিন চাঁদপুরে কোনো জেলে নদীতে নামবেন না। পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মা ইলিশকে নদীতে নিরাপদে ডিম ছাড়ার ক্ষেত্র তৈরিতে গৃহীত পদক্ষেপের সর্বোচ্চ বাস্তবায়নে আমরা সবাই একযোগে কাজ করবো। নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যে জানান, নৌ পুলিশ এই প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাঠ পর্যায়ে এই অভিযান বাস্তবায়ন করতে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মা ইলিশ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। তাই এই নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্যে সকলকে অনুরোধ করছি। অন্যান্য অতিথি ও বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে নৌ পুলিশকে সহযোগিতার মাধ্যমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাজী আলী আকবর, মৎস্যজীবী নেতা আব্দুল মালেক দেওয়ান, গণমাধ্যম কর্মী সালাউদ্দিন প্রমুখ।