প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৪৭
উজান থেকে নেমে আসা ঢল এখন আতঙ্ক
গর্ত ও সুরঙ্গের ঝুঁকিতে মেঘনা ধনাঘোদা সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধ
স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করছে বিভিন্ন সংগঠন
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল কারনে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৪০টি স্থানে গর্ত ও সুরঙ্গ হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন,শিক্ষার্থী,রাজনৈতিক সংগঠন ও প্রশাসন।
|আরো খবর
মেঘনা ধনাঘোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, ফরাজীকান্দি, কালীপুর,সুগন্ধি, শিকিরচর, দশানী, ধনাগোদা, তালতলী, এনায়েতনগর, রায়েরকান্দি, নবীপুর, লালপুর,গোপালকান্দি সিপাহীকান্দি, গালিম খাঁ বাজার ও বাগানবাড়ি এলাকায় গর্ত ও বড় বড় ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো দিয়ে পানি চুইয়ে বাঁধের ভেতরে ঢুকছে।
এগিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারনে মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বারার সাথে সাথে হুমকির মূখে পড়ছে বেড়িবাঁধটি। সে আতংকে দিন কাটছে বেড়িবাঁধের মানুষের।
ঝুঁকিতে মেঘনা ধনাঘোদা সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধ এ সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ সংস্কারে এগিয়ে আসছেন। শুক্রবার(২৩ আগস্ট)সকাল থেকেই মেরামত কাজে যুক্ত হয়েছে শতশত মানুষ। স্বেচ্ছাসেবক,রাজনৈতিব ব্যক্তি ও শিক্ষার্থী -সবাই আছেন সেই কাতারে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তাঁরা।
বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অভিযোগ করেন, বর্ষা শুরুর পর থেকে টানা বৃষ্টি ও নদীর পানির চাপে মূল বাঁধের বিভিন্ন অংশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো মেরামতে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ। সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব গর্ত ও ছিদ্র ক্রমশ বড় হয়েছে। বাঁধও পড়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। আতঙ্কে রয়েছেন বাঁধের ভেতরের পাঁচ লাখ বাসিন্দা।
শামীম খান বলেন,মেঘনা - ধনাগোদা বেড়ীবাঁধের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করে মেরামত পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেওয়া ও অংশগ্রহণে মতলবের সেচ্ছাসেবী ভাইদের ভূমিকা সত্যি অনুপ্রেরণার।
জহিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টি ও নদীর পানির চাপে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের দেখা দিয়েছে। মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আওতাধীনে ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস, সকলের কথা চিন্তা করে আমরা মতলবের ২৫টি সামাজিক সংগঠন গতকাল অনলাইনে যুক্ত হয়ে একটি বৈঠক করে আজকে সারাদিন বেরিবাদের গর্তগুলো সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি।
বাগানবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাঁদের এলাকা থেকে কালীপুর বাজার পর্যন্ত বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে অনেক বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক,রাজনৈতিব ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামক করছে।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন বলেন, দলীয় নির্দেশনায় যে কোন দূর্যোগময় মূহুতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। নেতাকর্মি নিয়ে বাধঁ মেরামতে কাজ করছি।
এ বিষয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত পাল বলেন, গত দুইদিন যাবত ভারী বৃষ্টি ও নদীর পানির চাপে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে গর্ত (রেইনকাট) ও বড় বড় ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো দূরত্ব সংস্কার কাজ করা জন্য এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাউবোর চাঁদপুর কার্যালয়ের থেকে তদন্ত টিম পর্যবেক্ষণ করে এসেছে। এখন এগুলো দ্রুত সংস্কার করা হবে।স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামক করছেন বিভিন্ন সংগঠন।
পাউবোর চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৬৪ কিলোমিটারে ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এই বাঁধের ভেতরে প্রায় ৩২ হাজার ১১০ একর ফসলি জমি আছে।নির্মাণের পর এ পর্যন্ত দুবার বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। এতে কয়েক শত শত কোটি টাকার ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয়। বাঁধের সবটাই পিচঢালাই সড়ক রাস্তা রয়েছে।