প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ আইন শৃঙ্খলা ও মতবিনিময় সভা
আমরা ভেঙ্গে যাবো মচকাবো না
-----------নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনিছুর রহমান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার পাঁচটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বিশেষ আইন শৃঙ্খলা ও মতবিনিময় সভা করেছেন নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনিছুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বেশ ক’জন বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিএনএম ও জাপা মনোনীত প্রার্থীরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তাঁরা শংকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ করেন। পুরো আলোচনা জুড়ে ফরিদগঞ্জ আসন নিয়েই সরব ছিলেন সে আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনিছুর রহমান, তাঁর পুরো বক্তৃতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার কামরুল হাসান। প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনিছুর রহমান।
নির্বাচন কমিশনার একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই-একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা জাতিকে উপহার দেবো। এই নির্বাচন শুধু ১৮ কোটি মানুষ দেখছে না, সারাবিশ্বও দেখছে। এই নির্বাচনে আমরা দেখিয়ে দেবো বাঙালি হারার জাতি নয়। আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি- আগের কমিশন আর বর্তমান কমিশন এক না। আমরা ভেঙ্গে যাবো মচকাবো না। অহেতুক আশঙ্কার প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকবেন। আমাদের উপর সরকারের কোনো চাপ নেই। আমরা সম্পূর্ণ চাপ এবং প্রভাবমুক্ত। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলো নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত আমাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকমের উষ্মা, প্রভাব বা চাপ আমাদের উপর নেই। আপনারা শতভাগ আস্থা আমাদের উপর রাখতে পারেন। আমরা যে কোনো মূল্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনাদের প্রতি অনুরোধ-আমাদের সহযোগিতা করুন। ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকুন। দেখুন আমরা জাতিকে কতটা প্রভাবমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেই। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্যে বিদেশি প্রচুর পর্যবেক্ষক থাকবে। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা এবার নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে যাবে। আর সেটি হবে সকাল ৮টার মধ্যে। আরেকটি হলো- বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণার পরও যদি প্রমাণাদিসহ অভিযোগ পাই, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোট নেয়া হবে। একটি কেন্দ্রে প্রয়োজনে বার বার ভোট হবে।
তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আরো আশ্বস্ত করে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি মাঠে থাকবে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। তাই নির্বাচন পরবর্তী ভয়ভীতিরও আশঙ্কা নেই। তিনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে বলেন, সরকারের সকল সংস্থা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। দায়িত্ব পালনে কেউ শৈথিল্য প্রদর্শন করলে কোনো ছাড় নেই। তবে অভিযোগ পেলেই যে ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নয়। তিন জায়গা থেকে তদন্ত করা হবে। তিনি কোনো কোনো প্রার্থীর আশঙ্কার বিষয়ে বলেন, যারা বলছেন বা ভাবছেন ভোট হবে একরকম, দিন শেষে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে অন্য কাউকে! তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণার পরও অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোট নেয়া হবে।
সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুহম্মদ শফিকুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ, বিএনএম-এর প্রার্থী ড. মোঃ শাহজাহান, তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, চাঁদপুর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোঃ মাঈনুদ্দিন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী আক্তার হোসেন, চাঁদপুর-১ আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোঃ সেলিম প্রধান, জাসদের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর-৩ আসনে জাপা মনোনীত প্রার্থী অ্যাডঃ মহসিন খান, জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ কাওছার মোল্লা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রেদওয়ান খান বোরহান।
উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমসহ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এছাড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন, নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তাগণ, ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব কর্মকর্তা ও কোস্টগার্ড চাঁদপুরের স্টেশন কমান্ডার।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম (বার), আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, কুমিল্লা অঞ্চল ফরহাদ হোসেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, চাঁদপুর সদর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মহসিন আলম, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদুজ্জামান, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম ও জেলা আনসার এডজুটেন্ট।