সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২২, ২২:৫৯

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল

অনলাইন ডেস্ক
উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল বা বঙ্গবন্ধু সুড়ঙ্গ বা কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ হল কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত নির্মাণাধীন সড়ক সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গ মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই সুড়ঙ্গটি বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই সুড়ঙ্গ নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে। কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ অবস্থান করবে ১৫০ ফুট গভীরে।

ইতিহাস : ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

অর্থায়ন : সুড়ঙ্গ নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর

মেয়াদি ঋণ হিসাবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে। এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের সুদের হার ২ শতাংশ। নির্মাণ তথ্য : নদী সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ হাতে পেয়েছে চীনের নির্মাণ সংস্থা। অনুমান করা হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে টানেল বা সুড়ঙ্গটির নির্মাণ শেষ হবে। সুড়ঙ্গটির মূল দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার হলেও এর সঙ্গে ৫ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক যুক্ত হবে।

পদ্মা সেতুর পর আরেক স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ; চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সরকার আশা করছে, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সুরঙ্গ পথ এ বছরের শেষ নাগাদ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে, যা হবে বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম রোড টানেল।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেছেন, মূল টানেল এবং অ্যাপ্রোচ সড়কসহ সবমিলিয়ে কাজের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। আমরা শিডিউল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

বন্দরনগরীর পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই পাতাল পথ কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে উঠবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যাওয়া আসা করবে যানবাহন। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন থাকবে।

নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের চ্যালেঞ্জের কথা তুল ধরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটি কোনো সেতু বা রাস্তা নয়। আমরা নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। কাজ শেষ হওয়ার পর যানবাহন চালানোসহ অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করে তারপর যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সরকার আশা করছে, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের চিত্র পাল্টে যাবে এবং এখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে যুক্ত করবে এই সুড়ঙ্গপথ। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।

কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে অনুমোদন পাওয়ার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময় এ কাজ কিছুটা গতি হারায়। ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টানেল নির্মাণে অগ্রগতি হয় পাঁচ শতাংশ। মহামারীর কারণে টানেলের বিভিন্ন সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আনাসহ নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

ইতোমধ্যে নদীর তলদেশের টানেলের দুটি টিউব নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম টিউবের কাজে ১৭ মাস লাগলেও দ্বিতীয়টি শেষ করা গেছে ১০ মাসেই। বর্তমানেসুড়ঙ্গের কাঠামোগত কাজ চলছে। প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বলেন, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা তা মোকাবেলা করে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বানানো হচ্ছে এ টানেল। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়াতে এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করতেও এই টানেল ভূমিকা রাখবে বলেও সরকার আশা করছে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাঠগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পের শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। অনুমোদনের দুই বছর পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়। পাশাপাশি মেয়াদ বাড়ানো হয় এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গত ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মাসেতুর উদ্বোধন করে প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আরও দুটো মেগা প্রকল্প মেট্রো রেল ও বঙ্গবন্ধু টানেলও এ বছরই চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়