প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২২, ১৫:১৭
ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ আটকে পড়া নাবিকদের বাঁচানোর আকুতি

বাংলাদেশি জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিইউক্রেইনে আটকা পড়াতে জাহাজের নাবিকরা বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ নামের বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলার পর নাবিকরা আতঙ্ কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জীবন বাঁচানোর জন্য তারা সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরেই তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন, এরইমধ্যে রকেট হামলায় একজনের মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক।
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙ্গর করে থাকা জাহাজটির নাবিকরা জানিয়েছেন, তারা সবাই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। জাহাজে পাওয়ার সাপ্লাই নেই। জরুরি পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে তারা চলছেন। সেটা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের জাহাজে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।
উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে আটকে পড়া নাবিকদের বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে একজনকে কান্নাজড়িত কণ্ঠেও কথা বলতে দেখা যায়।
বুধবার (০২ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায়) বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই জাহাজেরই নাবিক সালমান সামি। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
জাহাজটির সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আউয়াল এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমাদের জাহাজে রকেট হামলা হয়েছে। একজন মারা গেছেন। আমাদের জাহাজে পাওয়ার সাপ্লাই নেই। ইমার্জেন্সি পাওয়ার সাপ্লাইয়ে আমরা চলছি। আমরাও সবাই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। দয়া করে আমাদের বাঁচান।
৩১ সেকেন্ডের অপর একটি ভিডিওতে জাহাজের আরেকজন নাবিক বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমি আসিফুল ইসলাম আসিফ। আমাদের জাহাজে অ্যাটাক হয়েছে। আমরা এখনও পর্যন্ত ভালো আছি, তবে আমাদের এখনও উদ্ধার করা হয়নি। মিডিয়াতে আসছে, আমরা নাকি পোল্যান্ডে চলে গেছি নিরাপদভাবে। এটা ভুল নিউজ। ফেক নিউজ। আমাদের প্লিজ এখান থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন।’
১৮ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে জাহাজটির আরেকজন নাবিক বলেন, ‘আমি ইঞ্জিন ক্যাডেট মৌ। বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে বলছি। আমাদের শিপে বোম্বিং (বোমা হামলা) হয়েছে। আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার অলরেডি মারা গেছে। আমরা এখনও শিপের মধ্যে আছি। সবাই চাচ্ছি এখান থেকে বের হতে। আপনারা প্লিজ কোনো উপায় বের করে আমাদের এখান থেকে বের করেন। আমরা এখানে থাকতে চাচ্ছি না।’
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়ে যাওয়ায় ২৯ নাবিকসহ সেখানেই আটকা পড়ে জাহাজটি। ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে তাদের ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। এদিকে, হামলায় নিহত নাবিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা।
বিএসসির মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ওই জাহাজে থাকা ২৯ জনের মধ্যে বাকি ২৮ জন সুস্থ আছেন। তাদের মধ্যে দুজন নারী ক্যাডেটও আছেন। নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে জাহাজের সাথে। তাদের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপাতত জাহাজে থেকে যাওয়াই নিরাপদ বলে মনে হয়েছে।
একাধিক তথ্যে জানা গেছে, জাহাজটি যেখানে নোঙ্গর করে আছে সেখান থেকে মূল সাগরে যেতে ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ পার হতে হবে এবং সেজন্য স্থানীয় ‘পাইলট’ দরকার, যে পথ দেখিয়ে জাহাজটিকে বের করে নেবে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সাগরে মাইন পাতা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে যুদ্ধের মধ্যে সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নেই জাহাজটির।
মোটামুটি ৪০ দিন টিকে থাকার মত খাবার ও পানি মজুদ আছে জাহাজে, রেশন করে চালালে আরও কিছু দিন চালানো যাবে। সে বিষয়ে আপাতত দুশ্চিন্তা না থাকলেও চোখের সামনে সহকর্মীর মৃত্যু দেখে নাবিকদের দেশে ফেরা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।