প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
জরুরি অবস্থার সময় দখলে নেয়া প্রীতি রাণী ঘোষের বাড়ি দখল হস্তান্তরের আদেশ বাতিলের আবেদন
জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির পরিদর্শন
ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় চাঁদপুর শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় দখলে নেয়া প্রীতি রাণী ঘোষের বাড়িটি দখল হস্তান্তরের আদেশ বাতিলের আবেদন করেছেন খরিদ সূত্রে এর মালিকানা দাবিদার হোসনেয়ারা। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি শুনানি শেষে বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন আবেদনের বিষয়ে সুপারিশসহ সুস্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিলের জন্য। জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরজমিনে আসেন। তাঁরা বাদীণ্ডবিবাদী উভয়ের সাথে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী। দুই সদস্য হচ্ছেন চাঁদপুর সদর এসিল্যান্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার আবু বকর সিদ্দিক। এই পরিদর্শককালে তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলেন বাদীর পক্ষে মতলব হোমিওহলের স্বত্বাধিকারী ডাঃ রফিকুল ইসলাম, আর বিবাদীর পক্ষে কথা বলেন প্রীতি রাণী ঘোষের মেয়ে সাবিত্রী রাণী ঘোষ।
|আরো খবর
চাঁদপুর শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকার সুপরিচিত ফরিদিয়া হোমিও হলের ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মেয়ে হোসনেয়ারা প্রীতি রাণী ঘোষকে দখল বুঝিয়ে দেয়া বাড়িটির দখল হস্তান্তরের আদেশ বাতিলের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, জালণ্ডজালিয়াতি করে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায় গোপন করে ভুয়া তথা আনণ্ডরেজিস্টার্ড পাওয়ার অব এটর্নি মূলে প্রীতি রাণী ঘোষকে আরসি বাড়ি ২০/৬/২০০৭ খ্রিঃ তারিখের স্মারক নং ২৬/৪৮ /২০০৭ণ্ড১৩৪ মূলে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে। এই দখল হস্তান্তর আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন হোসনেয়ারা।
২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় চাঁদপুর শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় আরসি ২৬/৪৮নং বাড়িটি প্রীতি রাণী ঘোষকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল শাখা থেকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার ঘটনাটি ছিল আলোচিত ঘটনা। এর প্রতিকার চেয়ে সর্বশেষ বিগত জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের কাছে আবেদন করেন হোসনেয়ারা। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান ৬/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে প্রীতি রাণী ঘোষকে নোটিশ করেন। সে নোটিশেও জেলা প্রশাসক প্রীতি রাণী ঘোষকে ‘সকল মামলার রায় গোপন করে’ কথাটি উল্লেখ করেন। প্রীতি রাণী ঘোষ অবশ্য হোসনেয়ারার আবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল করেন জেলা প্রশাসক বরাবরে।
গতকাল তদন্ত কমিটির সরজমিন পরিদর্শনকালে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে প্রীতি রাণী ঘোষের মেয়ে সাবিত্রী রাণী ঘোষ বলেন, তারা পাওয়ার অব এটর্নি মূলে মালিক হয়ে বর্তমানে তিন শতাংশ এক পয়েন্ট জায়গা তাদের দখলে আছে। এর জবাবে হোসনেয়ারার পক্ষে ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সাবিত্রী রাণী ঘোষের দাবি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তারা আনণ্ডরেজিস্টার্ড পাওয়ার অব এটর্নি মূলে মালিকানা দাবি করছেন, যার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তাই হোসনেয়ারা ১ শতাংশ ৮৯ পয়েন্ট জায়গার উপর (বর্তমানে ওই বাড়ির চার দরজা অংশ) আপত্তি করে জেলা প্রশাসকের কাছে ওই আবেদন করেন। বাকি এক শতাংশ (দুই দরজা) জায়গার মালিকানা নিয়েও মামলা আছে।
ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, জালণ্ডজালিয়াতির মাধ্যমে দখলে নেয়া উল্লেখিত আরসি বাড়ি অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রশাসন তাদের দখলে নিয়ে যাক। এর পর বিধি মোতাবেক প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হোক।
এ ব্যাপারে সাবিত্রী রাণী ঘোষের বক্তব্য হচ্ছে, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আমাদের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আবার তাঁর কার্যালয়েই এ বিষয়ে পুনরায় তদন্ত বা কার্যক্রম চলতে পারে না। এ বিষয়ে আদালতের সমন দেয়া আছে। এর প্রেক্ষিতে ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আরসি ২৬/৪৮ বাড়ি নিয়ে তিনি বা হোসনেয়ারা আদালতে কোনো মামলা করেন নি।
চাঁদপুর শহরবাসীর দাবি হচ্ছেণ্ড চাঁদপুর শহরে আলোচিত ঘটনা ছিলো জোড়পুকুর পাড়ের এই বাড়িটি ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় দখলে নেয়া। এখন সত্যিই যদি আদালতের রায় গোপন করে বা আনণ্ডরেজিস্টার্ড পাওয়ার অব এটার্নি মূলে প্রীতি রাণী ঘোষ ওই বাড়ির মালিকানা দাবি করে থাকে, তাহলে তার দখল বাতিল করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হোক।