প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০৯:২৫
নব্য আলাদ্দিনের চেরাগ কে এই সুমন সরকার জয়?
কে এই সুমন সরকার জয়? এটি চাঁদপুর শহরে লোকমুখে প্রচারিত ও আলোচিত নাম। আসল নাম সুমন সরকার হলেও জয় শব্দ নামের সাথে জুড়ে দিয়ে হয়েছেন সুমন সরকার জয়। তাকে নিয়ে এতো আলোচনার কারণ হলো-১২ জুন সোমবার চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরাসরি অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরপরই দুদক সচিব ও মহাপরিচালক তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তে চাঁদপুর জেলা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
|আরো খবর
জানা যায়, তার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার চর মেয়াশা গ্রামে। ছোটবেলা থেকে কদমতলাস্থ কলোনীতে বেড়ে উঠা। বাবা সুভাষ সরকার, মা বিষ্ণু রাণী দাস। বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদ হয় তার ছোটবেলা থেকেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টেবিল বয় বা অফিস বয় হিসেবে তার কর্ম জীবন শুরু। তাও আবার মৌখিকভাবে লিখিতভাবে নয়। তৎকালীন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মরহুম হারুনুর রশিদ চৌধুরী তার অফিসে মৌখিকভাবে তাকে অফিস বয় হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর বিভিন্ন কাজ শিখতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় না জনের সাথে।
অথচ সময়ের ব্যবধানে এই কার্যালয়েরই হত্যা কর্তা বনে গেছেন তিনি। কমান্ডার হারুনুর অর রশিদ মারা যাওয়ার পর তিনি পেয়েছেন আলাউদ্দিনের চেরাগ। হয়েছেন কথিত সেক্রেটারি ও ক্ষমতাধর। এ সুবাদে গোপনে অতীতে শত সহস্র তদবির করে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে ফ্রি স্টাইলে। তবে তার বেশি তদবির চাঁদপুর জেলা চাঁদপুর সদর উপজেলার ৮ উপজেলায় অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি বানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিনিময়ে গ্রহণ করেছেন লাখ লাখ টাকা। মাত্র কয়েক বছরে হয়েছেন কোটিপতি। মহান স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শ চেতনাকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে সে প্রকাশ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একের পর এক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে চলেছেন বীর দর্পে। তারে অনৈতিক কারবার দীর্ঘ বেশ ক’বছরের যা সকলের কাছে এখন ওপেন সিক্রেট।
তাই তো সে চাঁদপুরের সর্বস্তরের নাগরিকের কাছে মুক্তিযোদ্ধা খেকো সুমন সরকার জয় হিসেবেই পরিচিত। বিশাল টাকার মালিক বনে যাওয়ায় সামাজিক অবস্থান তৈরি করার জন্য বিভিন্ন স্থানে বিলিয়ে চলছে কারি কারি টাকা। চাঁদপুর শহরে এ যুগের আলাদিনের চেরাগ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা খেকো সুমন সরকার জয় ইতিমধ্যে তার রহস্য এবং অনৈতিক কাজ কারবারের মাধ্যমে নিজেকে সকলের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তার বর্তমান অবস্থানের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তাকে নিয়ে চলছে নানা ধরনের ও ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। আসলে তার টাকা উৎস কোথায়?
অতি চালাক সুমন তার নামে, স্ত্রীর নামে, মায়ের নামে, বোনের নামে, ভগ্নিপতির নামে এসব টাকা ব্যাংকে রেখেছেন। যাতে তাকে অনুসন্ধান করলে টাকার উৎস খুজে পাওয়া না যায়। তার নামে নতুনবাজার পূবালী ব্যাংকের কাছে ফ্ল্যাট, কদমতলা মার্কেটে ফ্ল্যাট, নতুনবাজার ও পুরাণবাজারে জমি। এভাবে নামে বেনামে সম্পত্তি গড়েছেন তিনি। তার পিছনে মধুর লোভে ছুটছে স্বার্থান্বেশী মহলের লোকজন কে কার আগে তাকে অতিথি করবে, কার আগে কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিবে, আর কে কার আগে তাদের সংগঠনে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেবে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলছে রীতিমতো যুদ্ধ বা প্রতিযোগিতা। ইতিমধ্যে এই সুমন সরকার জয়কে চাঁদপুর সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়েছেন। সেটি তিনি টাকার বিনিময়ে ভাগিয়ে এনেছেন। আবার কোথাও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সে হচ্ছে সভাপতি আবার কোথাও হচ্ছে সেক্রেটারি। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানগুলোতে স্মার্টভাবে তার স্বরূপ উপস্থিতি চোখেপড়ার মতো।
আর এই আলাদ্দীনের চেরাগ নাম শুনলেই বাজারের লোকজন বড় বড় মাছ, ফ্রেশ মিষ্টি প্যাকেট ভরে তার বাসায় পাঠিয়ে দেয়। চাঁদপুর শহরের কতিপয় বিতর্কিত সুন্দরী-ললনারাও এ ক্ষেত্রে কম যায় না। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা খেকো সুমন ও অমুক্তিযোদ্ধাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বানানোর ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শী ও সিদ্ধহস্ত। চুরি তো চুরি তার ওপর সিনা জুরি। এক্ষেত্রে মাথাপিছু সে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে থাকে বলে শোনা যায়। তার এসব কাজ কারবার এখন সর্বত্র দিবালোকের মতো পরিষ্কার, তাকে সকল কাজে প্রকাশ্যে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলছে বহু প্রভাবশালী ক’জন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সে তার পুরো নাম সুমন সরকার জয় বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার এটি সঠিক নাম নয় তার সার্টিফিকেটে নামের কোথাও জয় লেখা নেই। এ ক্ষেত্রে লেখা রয়েছে সুমন সরকার তবে তিনি সুমন সরকার জয় নামেই সকলের কাছে পরিচিত। আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো কোটিপতি বনে যাওয়া জয় শব্দটি লাগিয়েছে তিনি নিজেই।
সচেতন মহলের দাবি, এই সুমন সরকার জয় যেনো আরেক মিল্টন সমাদ্দার হতে না পারেন সেজন্য সুষ্ঠু তদন্তের দুদকের কাছে যেনো প্রকৃত রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।