প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ২২:০০
তীব্র জনবল সংকট ও ঔষধের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে চেষ্টা করছি ----ডা. একেএম মাহবুবুর রহমান

বুধবার (৩০ জুলাই ২০২৫) সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুর ও এসিজি গ্রুপের সাথে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
|আরো খবর
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান সনাক ও এসিজি গ্রুপ কর্তৃক উত্থাপিত প্রতিটি সমস্যা ও সুপারিশের জবাব দেন। তিনি বলেন, আপনাদের এই সুপারিশগুলো হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এজন্যে সনাক ও এসিজি গ্রুপকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, পরিচ্ছন্ন কর্মী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। জনবল সংকট ও ঔষধের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি। সেবার মানোন্নয়নে নাগরিকদেরও ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণও অনেক সময় নার্স, আয়া ও ওয়ার্ড বয়দের সম্মান করে না। তিনি জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত ঔষধ থাকলে সেবার মান আরও উন্নত হবে বলে মনে করেন।
তিনি এসিজি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা হাসপাতাল মনিটরিংয়ে এসে যে সকল সমস্যা পান সেগুলো তাৎক্ষণিক আমাকে জানাবেন। তাহলে সমস্যাগুলো তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারবো। একজন রোগীর সাথে একাধিক লোক আসার কারণে হাসপাতালের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে যে ছোট ছোট সমস্যাগুলো আছে তা সমাধান করা হবে। হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্যও রয়েছে। দালাল রোধে কাজ করছি। তিনি হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়ন ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জানান, হাসপাতালটি হলো ২৫০ শয্যার, অথচ প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু সরকার থেকে ২৫০ জনের জন্যেই বরাদ্দ আসে। আজকেও ৪৫৩জন রোগী ভর্তি আছে। তিনি বলেন, হাসপাতাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কিছু কমন অভিযোগ আছে। কিন্তু হাসপাতালের যে সীমাবদ্ধতা আছে তারা তা জানতেও চায় না। লোকজনের চাহিদা ও প্রত্যাশা অনেক। আমাদের সীমাবদ্ধাতা থাকার কারণে আমরা তা পূরণ করতে পারছি না। তিনি আরও জানান, ডাক্তাররা সকালে এসেই রাউন্ডে চলে যান। রাউন্ড থেকে আসতে ১১টা বেজে যায়। তখন অনেকেই মনে করেন, ডাক্তার এখনো আসেন নি। হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে তিনি সনাক ও এসিজি গ্রুপকে পাশে থাকার আহ্বান জানান। আজ যে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে পর্যায়ক্রমে তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। মতবিনিময় সভা আয়োজন করার জন্যে তিনি সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।
স্বাগত বক্তব্যে কাজী শাহাদাত বলেন, সেবাগ্রহীতাদের এতো চাপ সহ্য করেও হাসপাতাল সেবার মানোন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে, যা ভালো খবর। আমরা মূলত হাসপাতালের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। বিগত দিনেও আমরা হাসপাতালের বেশ কিছু সমস্যা উত্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে বেশ ক'টি সমস্যার সমাধানও হয়েছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোরও সমাধান হবে। রোগীদের চাহিদা ও প্রত্যাশার শেষ নেই। আনসার বাহিনী নিয়োগ হওয়াতে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো বলে তিনি মনে করেন। হাসপাতালে ভালো সেবা পেতে হলে রোগীদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে সনাকের সভাপতি আলমগীর পাটওয়ারী বলেন, অনেকদিন পর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করছি। সনাকের এসিজি গ্রুপ হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে যে সকল সমস্যা ও সুপারিশ উত্থাপন করেছে তার মধ্যে অনেকটাই সমাধান হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের সেবার মানের অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিনি রোগীদের সেবা প্রদানে ডাক্তার ও নার্সদের আরেকটু আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। তবে সে ক্ষেত্রে নাগরিকেদেরও সহযোগিতার প্রয়োজন। আমরা দেখছি হাসপাতালে দালালের উপদ্রব বেশি। দালাল রোধেও কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। আমরা আশা করছি পর্যায়ক্রমে সনাক ও এসিজি গ্রুপের কাছ থেকে উত্থাপিত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
টিআইবি'র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানার সঞ্চালনায় এছাড়া বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য রফিক আহমেদ মিন্টু, নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট আভা রাণী মজুমদার, এসিজি সমন্বয়কারী মাইনুল ইসলাম মানিক, সদস্য শাহরিয়ার পলাশ ও গাজী মো. মুসা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সনাক সদস্য এবিএম নজরুল আমিন সাজু, পাপড়ি বর্মণ, মো. খোরশেদ আলম পাটওয়ারী কাঞ্চন, রুমা সরকার, এসিজি সদস্য সুমি আক্তার, আশিক বিন রহিম, ইয়েস সহ-দলনেতা জান্নাতুল ফেরদাউস, সদস্য শৈলী দাস প্রমুখ।
হাসপাতালে সেবাদাতাগণের সময়ানুবর্তিতা, প্রত্যাশিত জনবল নিশ্চিতকরণ/Available doctors and Nurse against sanctioned post, দৈনিক ঔষধ সরবরাহের তালিকার আধুনিকায়ন ও হালনাগাদকরণ, হাসপাতালের ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদকরণ, সেবা প্রদানে আন্তরিকতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, চাহিদার তুলনায় ঔষধের অপর্যাপ্ততা, হুইল চেয়ার ও ট্রলির স্বল্পতা, জনগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা না নেয়া, জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে তথ্য প্রদান, খাবারের মান, হাসপাতালের সিটিজেন চার্টার হালনাগাদকরণ, তথ্যের উন্মুক্ত প্রকাশ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।