সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৯

শ্রীনগরে প্রাইভেট হাসপাতালের নৈরাজ্য: গর্ভবতী মায়েদের জীবন নিয়ে অবহেলা ও বাণিজ্যিক মনোভাব

শ্রীনগরের হাসপাতালে মায়েরা কেন ঝুঁকিতে?

আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী, মুন্সিগঞ্জ
শ্রীনগরের হাসপাতালে মায়েরা কেন ঝুঁকিতে?
ছবি : প্রতীকী

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় একের পর এক গড়ে উঠছে প্রাইভেট হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নেই NICU (নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট) কিংবা ICU (নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট) এর মতো জরুরি সেবা।

গাইনি চিকিৎসকরা প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী দেখছেন এবং রাতে ১৫-২০ জনের অপারেশন করছেন। এই অস্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা চিকিৎসার মানের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তার চেয়েও উদ্বেগজনক হলো, এসব হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে গর্ভবতী মায়েদের সিজার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

নবজাতকের নিরাপত্তা উপেক্ষিত: অপারেশনের সময় শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে না, যা নবজাতকের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে, ভুল চিকিৎসা বা অপারেশনের সময় ত্রুটির কারণে কেউ হারাচ্ছেন তার নবজাতক সন্তান। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মায়ের জীবনও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

ভুল অপারেশনের ভয়াবহ পরিণতি: ডেলিভারির সময় নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে কিংবা অপারেশন দেরি হলে সিজার করতে বাধ্য করা হচ্ছে। চিকিৎসা প্রক্রিয়ার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রোগীরা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে, ভুল অপারেশন বা চিকিৎসার অভাবে একদিকে নবজাতক হারাচ্ছে মা, অন্যদিকে পরিবারকে ভুগতে হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যেও।

সিজারিয়ান ডেলিভারির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা? নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় অপেক্ষা করা হয় না। গর্ভবতী রোগীদের নানা অজুহাত দেখিয়ে সিজার করতে বাধ্য করার একটি প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এই অপারেশনের পেছনে হাসপাতালগুলোর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য প্রকট। নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় গরিব রোগীদের আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

মানবিকতার মৃত্যু: কিছু মায়ের অভিযোগ, অপারেশনের সময় তাদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতার অভাব ও অবহেলার কারণে তাদের সন্তানকে হারাতে হয়েছে। আর্থিকভাবে গরিব পরিবারগুলো তাদের শেষ সম্বলও বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জোগানোর পরও সন্তানকে বাঁচাতে পারছে না। এক মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "আমার স্বপ্ন ছিল সন্তানকে কোলে নেবো। অথচ অপারেশনের ভুলে আমার কোল শূন্য হয়ে গেছে।"

রোগীদের দাবি স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যবস্থা নিন: ভুক্তভোগীরা এসব প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারির জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা সঠিক সেবা নিশ্চিত করা উচিত। যেসব ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, সেসব ক্ষেত্রে যেন জরুরি অপারেশনের সময় শিশুর এবং মায়ের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব প্রাইভেট হাসপাতালের কার্যক্রম মনিটরিং এবং সেবার মান নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এক রোগীর স্বজন বলেন, "সরকার যদি এভাবে উদাসীন থাকে, তাহলে আরও কত মা তাদের সন্তান হারাবে? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?"

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়