রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   খাল দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
  •   নৌ পুলিশের হয়রানি বন্ধে জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে জেলেদের লিখিত আবেদন
  •   হাসান আলী মাঠে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শততম দিনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
  •   মাদ্রাসা খাদেমের লাশ নদী থেকে উদ্ধার
  •   পল্লবীতে দুই ছেলেকে জবাই করে হত্যার অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রি
রোটারিয়ান ডাঃ রাশেদা আক্তার

বিশ্বের যা কিছু মহান চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। কিন্তু শ্রমমূল্যের বিষয়টিকে পুরুষদের জন্য অর্থমূল্য বিবেচনা করা হলেও নারীর বেলায় অনেক ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত হয়। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস পালিত হয়। এই দিবসটি নারীর মান মর্যাদা এবং অধিকারের লড়াই। নারী দিবস মূলত নারী শ্রমের ন্যায্য মজুরির ও কর্মঘন্টা অধিকারের বিষয়। ১ মে দিবস যেভাবে শ্রমিকের শ্রমণ্ডঅধিকারের বিষয়টি আলোচিত হয়, কিন্ত নারী দিবসে সে ভাবধারাটি অনেকটাই উপেক্ষিত। তাইতো আমরা লক্ষ্য করি, ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসকে কেন্দ্র করে অনেক নারীকেও বিভিন্ন সময় নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। সংখ্যায় দেশে নারী পুরুষের হার প্রায় সমান। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পণ্য উৎপাদন, পণ্য বেচাকেনা, বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ কোন্ কাজটির সাথে নারী সম্পৃক্ত নয়? শিল্প, কলকারখানা, বাজার, হাট, মাটি কাটা, কৃষি শ্রমিক সব পেশাতেই নারী তার দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে বার বার। তারপরও শ্রম মূল্যের প্রশ্নে তাকে শুনতে হয় ‘তুমি নারী’। পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে নারীকে ঘরে বাইরে সর্বত্র নানা বিভেদ ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা ঘরে বাইরে মিলিয়ে পুরুষের সাথে সমান তালে কাজ করে দেশের অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই অবদান রাখছে। নারীর অর্থনৈতিক হাতকে শক্তিশালী করতে ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি গঠিত হয়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নারী ক্ষমতায়ন এবং এসডিজি উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে ব্যবসায়ী নারীদের উন্নয়ন এবং নারীদের ব্যবসায় আগ্রহী করে তুলতে প্রতিটি জেলায় উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করার জন্যে উদ্যোক্তা নারীদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। সেই লক্ষ্যে মনিরা আক্তারের উদ্যোগে ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ‘উদ্যমী নারী এসএমই মেলা’র মাধ্যমে ‘চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’-এর পথচলা শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মনিরা আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, চাঁদপুর অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তা ও নারী ব্যবসায়ীগণের সার্বিক বাণিজ্যিক স^ার্থ সম্পর্কে সরকারি আদেশ মোতাবেক স^ার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ, সর্তকদৃষ্টি রাখা ও সামগ্রিক ব্যবসায়িক উন্নতি সাধনের কার্যক্রম গ্রহণ করা চেম্বারের কাজ। এই চেম্বার, রাষ্ট্রনীতি এবং সামগ্রিক জনস্বার্থে বিবেচনায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন^য় সাধন করবে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর উইমেন চেম্বারের কার্যক্রমের শুরু থেকেই আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি এমপি চেম্বারের পাশে থাকছেন। তিনি চাঁদপুরের নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে নারীদের পাশে আছেন। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে তিনি নিজে উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রি করেন। নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি তাদের হাতে পৌঁছে দিতে মেলার আয়োজনে সহযোগিতা দিয়ে সবসময় পাশে থেকেছে প্রশাসন এবং চাঁদপুরের পৌর মেয়রও সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে ইলিশের বাড়ি হিসেবে চাঁদপুরের খ্যাতি সবসময়। নদীমাতৃক প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ চাঁদপুরের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। চাঁদপুরের নারীরা পরিশ্রমী ও কর্মঠ। ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্যে চাঁদপুরের নারীদের পদচারণা বেড়ে চলেছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ‘চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে এবং নারী ব্যবসায়ীদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে। চেম্বার সরকারের ব্যবসা বান্ধব বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি, প্রশিক্ষণ, প্রোডাক্ট ও কাস্টার বেইজ উদ্যোক্তা তৈরি এবং উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। উদ্যোক্তাদের পণ্য যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সে লক্ষ্য নিয়ে চেম্বার নারী উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তাব আসছে। মনিরা আক্তার আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে চাঁদপুরের উদ্যোক্তা নারীরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মেলায় তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে অংশ নিবে এবং আগামীতে চাঁদপুরের নারী উদ্যোক্তা পণ্য মেলায় বিদেশ থেকেও উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য নিয়ে স্টল সাজাবে। আমরা চাই চাঁদপুরে দক্ষ নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং তাদের পণ্য সারা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবে। চেম্বার উদ্যোক্তা নারীদের এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।

চাঁদপুরে নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির স্বার্থে চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কাজ করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে নারীরা এক্সপার্ট হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত হ্যারাসমেন্টের শিকার হবে না। এছাড়াও উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ই-কমার্স তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতেও সহযোগিতা করে। তার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই বরং সোশ্যাল মিডিয়ার বৃহৎ প্লাটফর্ম তারা ব্যবহার করে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আশা করি চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির তত্ত্বাবধানে চাঁদপুরের নারীরা সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে আরো সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনার বাস্তবিক প্রয়োগ করতে পারবে তথা বাংলাদেশের জিডিপি উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা সফলভাবে রাখতে পারবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনা ও নেতৃত্ব নারীদেরকে আরও বেশি পরিমাণ কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করবে। ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে উইমেন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিও চাঁদপুরে নারীদের নিয়ে একই আলোকে কাজ করে যাচ্ছে।

পরিশেষে চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও চাঁদপুরের নারীদের জন্য রইলো শুভ কামনা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়