প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
রক্তের জন্য সব সময় পাশে আছে ‘রক্তবিন্দু’। ‘রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থা’ একটি অরাজনৈতিক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যাদের মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তদাতা (ব্লাড ডোনার) খুঁজে পাওয়া যায় খুব সহজেই। মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজনে স্বজনের একটি ফোন কল পেলেই চলে। রোগীর যাবতীয় তথ্য জেনে, সে অনুযায়ী রক্তদাতা জোগাড়ে ছুটে চলে সংগঠনের প্রতিটি সদস্য। চাঁদপুর সদর উপজেলার সাহেববাজারের একঝাঁক মেধাবী তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
‘আমার রক্তে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, তবে আমি কেন করবো না রক্তদান’ স্লোগানে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্থাটি রোগীদের রক্ত পাওয়া সহজতর করতে, রক্তদান সম্পর্কে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা ও ভয় দূর করতে এবং তরুণ প্রজন্মকে রক্তদানে আগ্রহী করে তুলতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রক্তদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ক্যাম্পিং করে থাকে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি।
রক্তের সন্ধানে সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফেসবুক ব্যবহার করে মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজনীয়তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এতে সহজেই রক্তদাতার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ফলে রক্তদাতার সঙ্গে সহজেই রোগী/রক্তগ্রহীতা যোগাযোগ করতে পারছেন।
রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থার সভাপতি আল-আমিন বলেন, রক্তদানে অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে চেয়ে প্রয়োজন সুন্দর মানসিকতার। একজন মুমূর্ষু রোগীকে মৃত্যুশয্যায় রক্ত দিয়ে সাহায্য করার চেয়ে মহৎ কাজ পৃথিবীতে আর কিছুই হতে পারে না। তাই আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে রক্তগ্রহীতার সাথে রক্তদাতার যোগাযোগ করিয়ে দিই। আমরা রক্ত সংগ্রহ করি না, আমরা রক্তদাতাদের একটা ডেটাবেজ করে রাখি। যাতে দ্রুততম রক্তগ্রহীতার সাথে রক্তদাতার যোগাযোগ করানো সম্ভব হয়। রক্তের অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু আমরা চাই না। আমরা চাই, মানুষে মানুষে এক হোক। সবাই সবার সাহায্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক।
সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদ বলেন, রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। চাঁদপুর জেলায় আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে সমাজের উন্নয়নে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থা রক্তদাতা জোগাড়ের পাশাপাশি পথশিশু ও সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণেও কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদী ডিবি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা, মরহুম হারুন কমান্ডারকে মরণোত্তর সম্মাননা ও ৫০ জন অসহায় গরিব ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়।
সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাহমুদ মাসুম বলেন, রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থা মাদক, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচারণা, কিশোর গ্যাংসহ সামাজিক অপরাধসমূহ প্রতিরোধে বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সচেতনামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
সহ-প্রচার সম্পাদক তাহসিন খান বলেন, ১৪ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে যে কোনো শিক্ষার্থী আমাদের সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। সদস্যদের সংগঠনের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের প্রতি সজাগ থাকতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা সমাজবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত থাকা যাবে না। স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে হবে।
অর্থ সম্পাদক রবিউল হাসান বলেন, বিনামূল্যে রক্তদান এবং সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা একটি মুক্তস্কুল পরিচালনা করে আসছি। এখানে আমরা ৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করছি। সপ্তাহে ৩ দিন এ সকল শিক্ষার্থীকে আমরা বিনামূল্যে পাঠদান করি। এছাড়াও এ ৫০ জনের খাতাণ্ডকলমসহ সকল শিক্ষা উপকরণ আমরা ব্যবস্থা করি।
তিনি বলেন, সৃষ্টিশীল, সামাজিক মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্কুল-কলেজে বিভিন্ন কর্মশালা পরিচালনা করে থাকে সংস্থাটি। বিতর্ক, কুইজ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিনামূল্যে তথ্যসেবা ও সচেতনামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি আমরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও জাতীয় দিবসগুলো উদ্যাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।
সংগঠনের সহ-সভাপতি সুমাইয়া খান বলেন, আল-আমিন (প্রতিষ্ঠা সভাপতি) আমাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে এমন একটি সংগঠন করা যায় কি না, যার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন এবং মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো যায়। তখন আমাদের বেশির ভাগ বন্ধুই চান্দ্রা কলেজে পড়তো, ওইখান থেকে ক’জন বন্ধুর সহযোগিতা এবং একাত্মতায় আমাদের পথচলা শুরু। পথচলার শুরু থেকেই আমরা সংগঠনের সম্মানিত উপদেষ্টা এবং শুভাকাক্সক্ষীদের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে আসছি।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কানিজ রাবেয়া বলেন, আমরা চিন্তা করেছি, সমাজের যেমন অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছেন, তেমনি সামর্থ্যবানও অনেক মানুষ আছেন। আমরা যদি উদ্যোগ নিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করি, তাহলে সামর্থ্যবানদের সহযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবো। আমরা যেহেতু শিক্ষার্থী, আমাদের ইচ্ছেশক্তি থাকলেও কাজ করতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনেক সময় আটকে যাই। সে সময় আমাদের উপদেষ্টা ও শুভাকাক্সক্ষীবৃন্দ আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ফলে আমাদের কাজ করা সহজ হয়।
দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহীম তালুকদার বলেন, আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম মূলত চাঁদপুরেই সীমাবদ্ধ। তবে রক্তের প্রয়োজনে আমরা সারা বাংলাদেশেই সহযোগিতা বা ডোনার ম্যানেজ করার চেষ্টা করি। আমাদের সদস্যদের মধ্যে যাদের রক্তদানের জন্যে যোগ্য তাদের প্রায় সবাই ২ বার করে রক্তদান করেছেন। কেউ কেউ আছেন ৬/৭ বারও রক্তদান করেছেন। আমাদের সংগঠনের সকল সদস্যই শিক্ষার্থী। আর অন্যান্য পেশার সকলকে আমরা শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে আমাদের সাথে যুক্ত করি। বর্তমানে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ৩১ জন এবং রেজিস্ট্রেশনকৃত সাধারণ সদস্য ৭০ জন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, দ্রুততার সাথে রক্তদাতা জোগাড় করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এ সময়ের মধ্যে রোগীর স্বজনের সর্বোচ্চ তাগাদা পাই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রক্ত দেয়া শেষ হওয়ার পর প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগীর স্বজনই একবারের জন্য খোঁজ নেন না রক্তদাতা ঠিকমতো বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলো কি-না! তবে এর মধ্যেও কেউ কেউ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখান। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
ব্লাড ডোনেশন সম্পাদক মুজাহিদ শিহাব বলেন, মুমূর্ষু রোগীর প্রয়োজনে আমরা বিনামূল্যে রক্তদাতা জোগাড় করে দিই। পাশাপাশি আমরা অসহায়, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়েও কাজ করি। আমরা শিক্ষাসামগ্রী, সেশন ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, ফরম ফিলাপ এবং অনেক সময় চিকিৎসা সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। হয়তো সবসময় সবার চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারি না, তবে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আমাদের সাথে যোগাযোগের নম্বর : ০১৬৩৩-৮০২০৭০।
রক্তবিন্দু সমাজসেবা সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটি : আল-আমিন (সভাপতি) ০১৬৩৩৮০২০৭০, সুমাইয়া খান (সহ-সভাপতি) ০১৬৩০৩৭২৫১৩, সাগর আহমেদ (সহ-সভাপতি) ০১৭৩৫৪৪১১৫৬, মেহেদী হাসান (সহ-সভাপতি) ০১৭৬৩৪৮৪৬৯৬, সোহেল আহমেদ (সাধারণ সম্পাদক) ০১৭৬৪৭৫৩৫৯২, সাকিল পাঠান (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ০১৭৯৯৪২৬৫১২, কানিজ রাবেয়া (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ০১৬২০৩১৩৪৮১, মোরসালিন রহমান (সাংগঠনিক সম্পাদক) ০১৬৪৭৫১৩৬১৫, যুলকার নাইন খান (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক) ০১৮৭৬৯৩৬৪১৮, শামীম খান (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক) ০১৯৫৬০৫৫৭৭৬, রবিউল হাসান (অর্থ সম্পাদক) ০১৩০৯৭৮৫৬৮৪, ইব্রাহীম তালুকদার (দপ্তর সম্পাদক) ০১৭৮১৫৬৭৪৭১, আহাদ পাটওয়ারী (উপ-দপ্তর সম্পাদক) ০১৮৫৯৫৯৩৯৬৩, মাহমুদ মাসুম (প্রচার সম্পাদক) ০১৭৮৭২৩০৬৪৪, তাহসিন খান (উপ-প্রচার সম্পাদক) ০১৬০৯৪৪২১৯০, ফাবিহা লুবনা (উপ-প্রচার সম্পাদক) ০১৮১৬১৯৪৫৮১, মুজাহিদ শিহাব (ব্লাড ডোনেশন সম্পাদক) ০১৮৩০৭১২৪৫৮, জানিউল আলম (উপ-ব্লাড ডোনেশন সম্পাদক) ০১৭৭৩৮৩৪৬২৩, ইয়াছিন হাওলাদার (উপ-ব্লাড ডোনেশন সম্পাদক) ০১৩০০০৭৩৯৬০ ও রাকিব (উপ-ব্লাড ডোনেশন সম্পাদক) ০১৬৪৮০১১৮৪৯।