প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫, ২২:৫৫
গাছেরও প্রাণ আছে ভুলে গেছে বিজ্ঞাপনদাতারা!

|আরো খবর
গাছেরও প্রাণ আছে ভুলে গেছে বিজ্ঞাপনদাতারা
শ্রীনগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড, বিপন্ন পরিবেশ ও মানবসমাজ
রিপোর্ট: আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী
"গাছেরও প্রাণ আছে" — বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত এই কথাটির পেছনে রয়েছে একজন বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করেছিলেন, গাছও অনুভব করতে পারে, ব্যথা পায়, এবং তারও প্রাণ রয়েছে। অথচ সেই সত্যটিকে যেন ভুলে গেছেন বর্তমান প্রজন্ম, বিশেষ করে যাঁরা ব্যবসার প্রয়োজনে বা প্রচারণার খাতিরে বেছে নিচ্ছেন গাছকে তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে।
পরিবেশ রক্ষায় গাছের গুরুত্ব
পরিবেশবিদরা বারবার বলে আসছেন—মানব জীবনের জন্য অক্সিজেন যতটা জরুরি, সেই অক্সিজেনের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে গাছ। মানুষ যেমন বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, গাছ ঠিক তার উল্টোটি করে: কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করে।
একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ প্রতিদিন গড়ে ১২০-১৫০ গ্রাম অক্সিজেন নিঃসরণ করতে পারে, যা দুটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এক দিনের চাহিদা পূরণে সক্ষম।
গাছের গায়ে পেরেক: নিঃশব্দ খুনের অস্ত্র
গাছের গায়ে যখন পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন বোর্ড টাঙানো হয়, তখন তা শুধু বাইরের আঘাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না।
পেরেকের মাধ্যমে গাছের অভ্যন্তরীণ পানি চলাচল ব্যবস্থা, নিউট্রিয়েন্ট পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে।
এতে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়।“প্রচারণার খাতিরে গাছকে ব্যবহার করাটা একধরনের পরিবেশগত সহিংসতা।” — পরিবেশবিদ রওশন হক
শ্রীনগরে দৃশ্যমান বিপর্যয়
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় বিভিন্ন সড়কের পাশে লাগানো গাছের গায়ে
লটকে আছে ডজন ডজন ব্যানার, পোস্টার ও লোহার বিজ্ঞাপন। এসব গাছের ছাল উঠে গেছে, রস বন্ধ হয়ে গেছে,
অনেক গাছ ইতিমধ্যেই শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।কানুন আছে, প্রয়োগ নেই
২০০৬ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, গাছ কর্তন বা ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ, তবুও এসব আইন বাস্তবে প্রয়োগ হয় না বললেই চলে।
বিকল্প পদ্ধতির অভাব নয়
- ডিজিটাল বোর্ড
- ব্যানার স্ট্যান্ড
- প্রিন্টেড পোস্টার পিলার
- দেয়াল রাইটিং
সচেতনতা জরুরি, নচেত বিপদ অনিবার্য
“প্রতি বছর যদি ১০ হাজার গাছ এভাবে নষ্ট হয়, তাহলে ১০ হাজার অক্সিজেন ইউনিট আমরা হারাচ্ছি।” — ড. ফারজানা ইয়াসমিন
সমাধানে কী করা প্রয়োজন?
- স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন
- বিজ্ঞাপনদাতাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা
- পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নজরদারি
- গণসচেতনতা বাড়ানো
- স্কুল-কলেজে পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক
একটি আহ্বান
একটি গাছ মানে একটি জীবন।
আমাদের সন্তানদের জন্য একটি স্বচ্ছ বাতাস রেখে যেতে চাইলে—আজই বন্ধ করতে হবে
এই ‘নিরব গাছ নিধন’। গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন টাঙানো বন্ধ না করলে পরিবেশ বিপর্যয় অবধারিত।ডিসিকে/এমজেডএইচ