সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২২, ০০:০০

সুচিকিৎসা প্রাপ্তিতে রোগীদের সচেতনতা প্রয়োজন
অনলাইন ডেস্ক

রাশেদা আক্তার একজন চিকিৎসক। দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক চাঁদপুরের সন্তান। মেঘনাপাড়ের এ সন্তান মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি একজন সফল সংগঠক। তাঁর পেশাগত ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সর্বমহলে প্রশংসিত।

ডেন্টিস্ট রাশেদা আক্তার গতকাল রোববার দুপুরে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক আয়োজন ‘চিকিৎসাঙ্গন’-এর মুখোমুখি হন।

সাক্ষাৎকার নেন : আলআমিন হোসাইন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

রাশেদা আক্তার : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে বেশ ভালো আছি। মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসায় আল্লাহ সবসময়ই ভালো রাখেন। এজন্যে মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করি। আনন্দের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২৫ জুন শনিবার আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো, যা আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

রাশেদা আক্তার : আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে চাঁদপুরে। আমি চাঁদপুরের সন্তান।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

রাশেদা আক্তার : চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে আমি এইচএসসি পাস করি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব ডেন্টিস্ট্রিতে অনার্স সম্পন্ন করি। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) থেকে মাস্টার্স অব পাবলিক হেল্থ (এমপিএইচ) সম্পন্ন করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?

রাশেদা আক্তার : বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিলো আমি যেনো চিকিৎসক হই। আমারও স্বপ্ন ছিলো একজন সুচিকিৎসক হওয়ার। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের মনের আশা কবুল করেছেন। কারণ চিকিৎসক হিসেবে খুব সহজেই মানুষের সেবা করা যায়। মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যায়। সর্বোপরি, মানুষের আপন হওয়া যায়। আর মানুষের সেবা করার মাধ্যমে মানবজীবনের সার্থকতা। যে সার্থকতা অর্জনে অনাবিল সুখ জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

রাশেদা আক্তার : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা মধুর স্মৃতি। প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসা আমার পথচলার পাথেয়। চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর কিছুদিন আমি বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করি। পরবর্তীতে চাঁদপুর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘ফেমাস ডেন্টাল কেয়ার’ নামে ক্লিনিক চালু করি। আমি যখন ক্লিনিকটি চালু করি তখন চাঁদপুরে দন্তরোগের কোনো নারী চিকিৎসক ছিলেন না বললেই চলে। ফলে একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে আমি মানুষের বেশ সাড়া পাই। যা আমাকে খুবই আনন্দ ও অনুপ্রেরণা দেয়। মূলত নারী রোগীদের কথা ভেবে নিজের জন্মস্থান চাঁদপুরে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মনোবাসনা জাগে। সে থেকে পথচলা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

রাশেদা আক্তার : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক খুবই ভালো, আধুনিক এবং উন্নত মানের। এখানকার চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিকতার সাথে রোগীদের সেবা প্রদান করে থাকেন। পাশর্^বর্তী বিভিন্ন জেলার মানুষ নিয়মিত চাঁদপুরে এসে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। তাছাড়া চাঁদপুরের রোগীদের এখন আর কষ্ট করে ঢাকায় গিয়ে সেবা গ্রহণের প্রয়োজন প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ চাঁদপুরেই এখন আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া সম্ভব।

তবে খারাপ দিক হচ্ছে, এখানে কমিশন-বাণিজ্য এখনো পুরোপুরি রোধ যায়নি। এ ত্রুটিটুকু দূর হলেই চাঁদপুরের সার্বিক চিকিৎসাব্যবস্থায় জনমানুষ বেশি উপকৃত হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?

রাশেদা আক্তার : আমি যেহেতু একজন দন্ত-চিকিৎসক, তাই আমার কাছে দাঁতের রোগী বেশি আসেন। ফেমাস ডেন্টাল কেয়ারে আমি এবং আমার চিকিৎসক প্যানেল দন্তরোগীদের সেবা প্রদান করি। তাছাড়া ডেন্টাল মডার্ন ট্রিটমেন্ট এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। ফেমাস ডেন্টাল কেয়ারে আমরা ডেন্টাল মডার্ন ট্রিটমেন্ট প্রদান করি। মডার্ন ট্রিটমেন্ট হলো : ইমপ্লেন্ট, ওয়ান সেটিং রুট ক্যানেল, ক্যাপ, উন্নত মানের কম্পোজিট ফিলিং (কালার মেচিং)সহ দাঁতের নানা সমস্যার চিকিৎসাসেবা আমরা প্রদান করে থাকি। এম.এস. সার্জনের মাধ্যমে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি করা হয়। অর্থো-ডনটিক্স সার্জনের মাধ্যমে আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

রাশেদা আক্তার : চাঁদপুরের মানুষ যথেষ্ট স্বাস্থ্যসচেতন। রোগীদের কাছে আমার প্রত্যাশা, দাঁতের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই ধৈর্য সহকারে সেবা গ্রহণ করতে হবে। ‘সুস্থ হয়ে গেছি’ ভেবে কোনোভাবেই অর্ধেক চিকিৎসা নিয়ে বসে থাকবেন না। সম্পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

তাছাড়া স্বাস্থ্যগত যে কোনো সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। কোনোভাবেই ভুল চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজের ক্ষতি করবেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করবেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

রাশেদা আক্তার : চিকিৎসাজীবনের সুখের অনেক স্মৃতি আছে। তন্মধ্যে, ভুক্তভোগী রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার মধ্যে আমার সুখ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

রাশেদা আক্তার : সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সেবার মান সম্পর্কে সাধারণ রোগীদের অসচেতনতা। কারণ তারা নিজ এলাকায় অল্প টাকায় মানহীন সেবার সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উন্নত চিকিৎসার তুলনা করেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

রাশেদা আক্তার : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে আমাদেরকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। তাছাড়া করোনাকাল শেষ হয়ে যায়নি। করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আমাদের অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। অসচেতনতা অবলম্বন করে কোনোভাবেই নিজেকে এবং পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।

একজন দন্ত-চিকিৎসক হিসেবে বলতে চাই, প্রতিদিন দু বেলা দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সকালে খাওয়ার পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে। খাওয়ার সাথে সাথে ব্রাশ না করে অন্ততপক্ষে ত্রিশ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করা ভালো। এক্ষেত্রে অবশ্যই সফ্ট ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘক্ষণ দাঁত ব্রাশ করতে হবে এটা ভুল ধারণা। তবে এক থেকে দেড় মিনিটে দাঁত ব্রাশ করলেও ভালোভাবে কুলি করতে হবে। ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। ছয় মাসে না হলেও বছরে একবার দাঁতের চেকআপ করাতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?

রাশেদা আক্তার : অবসরে পরিবার বিশেষ করে মেয়েকে সময় দিই। বইসহ নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া, বাগান করা আমার সখ। তাছাড়া আমি নানা সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত। সেখানে সময় দিই। আমি নারী এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করি। আমার স্বপ্ন তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা। যাতে তারা স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।

উল্লেখ্য, ডেন্টিস্ট রাশেদা আক্তার ফেমাস ডেন্টাল কেয়ার ও চাঁদপুর বেলভিউ হাসপাতালের পরিচালক। চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি তিনি একজন সক্রিয় সংগঠক। তিনি সামাজিক সংগঠন ‘আপন’-এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। এছাড়াও বিশে^র অন্যতম বৃহৎ সেবামূলক সংগঠন রোটারী আন্দোলনের সাথে তিনি জড়িত। তিনি চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাব ও আমরা আলোকিত নারী সংগঠনের জয়েন্ট সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়