রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

স্মৃতির মণিকোঠায় চাঁদপুর কণ্ঠ

এ এ বিল্লাল
স্মৃতির মণিকোঠায় চাঁদপুর কণ্ঠ

আলহাদুলিল্লাহ। নতুনকে জয় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়ে ত্রিশ বছর পূর্ণ করলো প্রিয় চাঁদপুর কণ্ঠ। এই পথপরিক্রমায় ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের মানুষের কাছে চাঁদপুর কণ্ঠ হয়ে উঠেছে আস্থার প্রতীক।

লেখালেখির নেশা আমার স্কুল জীবন থেকেই। তখন মতলব থেকে ঢাকা যাওয়া এতো সহজ ছিল না। পত্রিকা পড়াটা আমার নেশা ছিলো। আস্তে আস্তে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে মতলব ডিগ্রি কলেজে স্নাতক পড়াবস্থায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের চিঠিপত্র কলামে এলাকার সমস্যা নিয়ে লিখতাম। ডিগ্রি পরীক্ষার পর অবসর। কী করবো যখন ভাবছিলাম তখন মাথায় আসলো সংবাদকর্মীর কাজ করবো। এই পরিকল্পনায় প্রথমে ঢাকার একটি সাপ্তাহিকে সংবাদ লেখা শুরু করি।

কোনো এক বিশেষ কাজে ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে চাঁদপুর গেলে রেলওয়ে বুক স্টল থেকে চাঁদপুর কণ্ঠ ক্রয় করি এবং সাথে সাথেই মাথায় আসে চাঁদপুর কণ্ঠে আমি সংবাদ লেখার জন্যে চেষ্টা করে দেখতে পারি। যেই চিন্তা সেই কাজ। সোজা চলে গেলাম রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে। দেখা হয়ে গেলো জনাব কাজী শাহাদাত ভাইয়ের সাথে। তিনি বললেন, কী চাই? আমি আমার পরিচয় ও নারায়ণপুর এলাকার গুরুত্ব বুঝিয়ে বললাম, আমি চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে চাই। তিনি আমাকে বললেন, নিউজ দেন, তারপর দেখা যাবে।

চলে এলাম। এলাকায় এসে বেশ কিছু নিউজ লিখে সরাসরি চলে গেলাম চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে। নিউজ জমা দিয়ে চলে আসলাম। আমার প্রথম নিউজ ছাপা হয় নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের একটা অনুষ্ঠান নিয়ে। ঐ থেকেই যাত্রা শুরু চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে।

মূলত চাঁদপুর কণ্ঠের কারণেই আমার লেখালেখির ভিত মজবুত হয়। এক ধরনের নেশা জন্মায় নিউজের প্রতি। এভাবেই এক সময় আমার ব্যক্তিসত্তা পত্রিকার জগতে একাকার হয়ে যায়। আগে টুকটাক লিখলেও সংবাদকর্মী হিসেবে মূলত হাতেখড়ি হয় চাঁদপুরের জনপ্রিয় এই পত্রিকায়।

১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে মতলব দক্ষিণ উপজেলার একেবারে অজপাড়াগাঁও নারায়ণপুর থেকে যখন সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি, তখন সংবাদ লিখে সেটা এখনকার মত সাথে সাথে পত্রিকা অফিসে পৌঁছানোর কোনো সুযোগ ছিল না। বুক পোস্ট করে পাঠিয়ে দিলে একদিন পরে পত্রিকা অফিসে পৌঁছাতো। কারণ তখন কমপিউটিং প্রযুক্তি এবং ই-মেইলের ব্যবহার এতো জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ছিল না। ডিজেলচালিত ফোর স্ট্রোক বেবিট্যাক্সি ছিলো তখন একমাত্র আধুনিক বাহন। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলে কাদাযুক্ত রাস্তায় গাড়ি ঠেলে নারায়ণপুর থেকে মতলব যেতে হতো। এমন চিত্র চাঁদপুর জেলার প্রায় উপজেলায় কম-বেশি ছিলো। তারপরও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে একদল তরুণ এবং উদ্যমী সংবাদকর্মীর সম্মিলনে সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে আজকে জেলার জনপ্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে রূপান্তরিত হয়েছে। যা ভাবতেই মনের মাঝে এক ধরনের আনন্দ শিহরণ জাগে।

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে জনাব কাজী শাহাদাত ভাইয়ের স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। নিউজ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছেন ও সাহস দিয়েছেন, যা ছিলো আমার জন্যে পরম পাওয়া। চাঁদপুর কণ্ঠে নিউজ করার কারণে আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন এলাকার এক প্রভাবশালী। আমাকে ছায়া ও সাহস দিয়েছেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রাণ জনাব ইকবাল-বিন-বাশার স্যার ও জনাব কাজী শাহাদাত ভাই। বলেছেন কিছুই হবে না, মিথ্যা মামলা। পরে আসলেই কিছু হয়নি। চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি সাহসিকতার সাথে। কোনো চাপ, হামলা-মামলাকে আমি পাত্তাই দেইনি। এই পাত্তা না দেওয়ার কারণ জনাব কাজী শাহাদাত ভাই ছিলেন আমাদের সাহসিকতার প্রাণশক্তি। ২০০২ সালে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি আসে। কিন্ত আল্লাহর দয়ায় আমাকে কিছুই করতে পারেনি।

একটা পত্রিকার সম্পাদক যদি স্বচ্ছ হয়, তাহলে ওই পত্রিকায় যতো লোক কাজ করবে তারাও স্বচ্ছ ও সুন্দর হবে। চাঁদপুর কণ্ঠে যারাই কাজ করছে ও করতো, তারা সবাই মেধাবী ও শিক্ষিত। একদিন তৎকালীন মতলব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলছিলাম (নামটা আমার মনে নেই)। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আপনাদের চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটা অনেক ভালো লাগে। কারণ জেলা শহরের একটা পত্রিকায় ভুল বানান নাই, সম্পাদকীয় অনেক চমৎকার, আবার বিভিন্ন পাতাও বের হয়। আমি সত্যিই মুগ্ধ চাঁদপুর কণ্ঠের ওপর। তাঁর কথা শুনে গর্বে বুকটা ভরে যায়।

আমার জীবনে কখনো কারো কাছে মাথা নিচু করে কথা বলিনি, চামচামি তো দূরের কথা। আমার খুব কাছের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিউজ করেছি চাঁদপুর কণ্ঠে। অথচ ওই চেয়ারম্যান চাঁদপুর কণ্ঠের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে একজন কাজী শাহাদাতের পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের জন্যে।

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে অনেক রাত চাঁদপুর শহরের হোটেলে থাকতে হয়েছে আমার। যা দেখে বার্তা সম্পাদক শহীদ ভাই আমাকে বলতেন, তুই একটা পাগল। আসল কথা আমি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। একদিন চাঁদপুর কণ্ঠে আমার এলাকার ৮টি নিউজ ছাপা হয়েছিল। যা দেখে মিলন ভাই বলেছিলেন, আজকে বিল্লাল কণ্ঠ হয়ে গেছে চাঁদপুর কণ্ঠ। আমি অজপাড়াগাঁ থেকে কাজ করলেও চাঁদপুর কণ্ঠের এক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন দেই। যা দেখে মতলবের গোলাম সারওয়ার সেলিম ভাই বলেছিলেন, তুমি কেমনে পারো? আমি বিনয়ের সাথে বললাম, মানুষ আমাকে ভালোবাসে।

চাঁদপুরে ক’টি দৈনিক পত্রিকা থেকে আমাকে অফার দেয়া হয় কাজ করার জন্যে। আমি বলেছি চাঁদপুর কণ্ঠই আমার জন্যে উপযুক্ত। যার জন্যে এখনও চাঁদপুর কণ্ঠে মাঝে মধ্যেই নিউজ লেখি। আমি চাঁদপুরের বর্তমান ও সাবেক অনেক এমপি, মন্ত্রীর গাড়িতে ঘুরেছি, তাদের সাথে কথা বলতে কখনও দ্বিধা হয়নি। পৃথিবীর সব মানুষের সামনে আমি কথা বলতে পারি, কিন্ত একমাত্র কাজী শাহাদাত ভাইয়ের সামনে গেলে আমি গুছিয়ে কোনো কথা বলতে পারি না। তাঁর দিকে তাকিয়েও কথা বলতে পারি না। এটার কারণ আমি তাঁকে অনেক ভালোবাসি।

যাদের স্মৃতিতে চাঁদপুর কণ্ঠ আজও মনের মণিকোঠায় জেগে আছে তাদের নাম না নিলেই নয়। তাদের প্রত্যেকেই এখন চাঁদপুর এবং চাঁদপুরের বাইরে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যারা তারা হলেন : সর্বজনাব মির্জা জাকির, মহিউদ্দিন সরকার, গিয়াসউদ্দিন মিলন, বিএম হান্নান, শহীদ পাটোয়ারী, এসএম আন্ওয়ারুল করীম (সদ্য প্রয়াত), মাহবুবুর রহমান সুমন, রহিম বাদশা, মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন, জিএম শাহীন, মিজানুর রহমান, সেলিম রেজা, শাহাদাৎ হোসেন শান্ত প্রমুখ।

উপজেলা পর্যায়ে চাঁদপুর কণ্ঠের এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী সংবাদ কর্মীর মধ্যে ছিলেন ও আছেন : মতলব উপজেলার গোলাম সারওয়ার সেলিম, ইকবাল হোসেন, শ্যামল চন্দ্র দাস ও আক্তার হোসেন, মতলব উত্তরের মাহবুব আলম লাভলু ও হুমায়ুন কবির; হাজীগঞ্জের জাকির হোসেন; কচুয়ায় মানিক সরকার; ফরিদগঞ্জের মানিক পাঠান, প্রবীর চক্রবর্তী সহ আরো অনেকে। এদের সবার মধ্যমণি হিসেবে যিনি কাজ করেছেন, তিনি এখনও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আপন মহিমায়। তিনি হলেন শ্রদ্ধাভাজন কাজী শাহাদাত। আর যিনি এই পত্রিকাটি মেধা মনন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্যে জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছেন তিনি হলেন পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার।

লেখক : সৌদি আরব প্রবাসী; চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়