প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ইদানীং জমজমাট সুদের ব্যবসা শুরু করেছ তিন বন্ধু রকি, বুলেট আর সাজু। বর্তমান সময়ে শর্টকাটে ধনী হওয়ার জন্য এ ব্যবসা নাকি সবচেয়ে ভালো। উচ্চ সুদে সাধারণ লোকজনদের টাকা ধার দেয় ওরা। খুব অল্প সময়ে তিন বন্ধুতে সুদের বিশাল সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছে। সুদের টাকা সময়মতো দিতে না পারলে নাস্তানুবাদ হতে হয় ওদের কাছে।
আজ শুক্রবার দিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাকে মুসল্লিরা মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে পবিত্র জুমার সালাত আদায় করেন। নামাজের কিছুপূর্বে ইমাম সাহেব বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে খুতবা প্রদান করেন। আজ তিনি, সুদ ও ঘুষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। বিষয়টি তিনজনের একদম ভালো লাগে না। ইমাম সাহেবকে গালিগালাজ করতে করতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসে ওরা। ওদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত এলাকার লোকজন। ওদের বিরুদ্ধে কিছু বললে ক্ষতি হবার অনেক সম্ভাবনা আছে। তাই ওদের ভয়ে সবাই মুখ বন্ধ রাখে। বাইরে এসে বলতে থাকে এই ইমাম সাহেব ভালো না। তার কথার ঠিক নাই। তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলেন। তাকে আর এ মসজিদে রাখা যাবে না। কদিন ধরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করলো মিথ্যা বানোয়াট এ ঘটনাটি। বিচার বসলো পরিষদ চত্বরে। মিথ্যার জয় হলো। ইমাম সাহেব মিথ্যা বদনাম নিয়ে চাকুরিচ্যুত হয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন। চেয়ারম্যান ছিলেন সুদখোর বুলেটেরই আব্বা। ছেলের পক্ষ নিয়েই সালিশের রায় ঘোষণা করলেন। ইমাম সাহেব হুজুর লোক বলে তিনি নাকি বিশেষ বিবেচনায় মাফ করে দিয়েছেন। চাকরি গেলো। তবে কোন শাস্তি দিলেন না। ইমাম সাহেবকে চাকুরিচ্যুত করার পর গ্রামে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। সবাই এখন অন্তরালে বলে বেড়াচ্ছে, হুজুর লোকটা খুব ভালো ছিল। তার প্রতি এটা অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু ওদের সম্মুখে কিছু বলার সাহস কারো হলো না। দিনকে দিন তিনজনের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়লো। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কপালে নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। কাউকে সুদে টাকা ধার দিলে সুদের সুদ, তস্য সুদ আদায় করে সর্বশান্ত করেই ছাড়ে। ওরা তিনজন যখন হনহনিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে কোন গ্রামে ঢোকে তখন ভয়ে গ্রামবাসীর কলিজা শুকিয়ে যায়। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েও যান। আজ ওরা এসেছে আফজাল মিয়ার বাড়িতে। সুদের টাকা আদায়ের উদ্দেশ্য। গত বছর মেয়ের বিয়ের সময় সে কোন উপায় না পেয়ে ওদের কাছ থেকে চড়া সুদে একলক্ষ টাকা নিয়েছিল। প্রতি মাসে তার সুদ বিশ হাজার টাকা। প্রায় একবছর ধরে আসল টাকার দ্বিগুণ টাকা সুদই দিয়েছে ওদের। এবার মাঠে ভালো ফসল ফলাতে পারেনি বলে দুমাস যাবৎ সুদের টাকা দিতে পারেনি আফজাল মিয়া। এই অল্প সময়ে মধ্যে সুদ আসল মিলিয়ে দুই লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আজ টাকা দেবার কথা ছিল তার। কিন্তু আফজাল মিয়া টাকার জোগাড় করতে পারেনি। ওরা এসে প্রথমে টাকা চেয়ে না পেয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। টিনের দরজায় ধরাম ধরাম করে করে সজোরে লাথি মেরে দরজা ভেঙে বাড়ির মধ্যে সদলবলে ঢুকে পড়ে।
এখন বর্ষাকাল চলছে। সবে আমনের জমি চাষ করে বাড়িতে এসে বিশ্রাম করছে সে। এর মধ্যেই এমন একটা ঘটনায় হতচকিয়ে গেল। হঠাৎ সুদারুদের নজর আফজালের গরুর দিকে পড়ল। ওর মোট চারটি গরু। দুটি হালের গরু আর দুটি গাই গরু। বেশ স্বাস্থ্যবান। কমপক্ষে চারটি গরুর দাম তিন লক্ষ টাকা তো হবেই। কোন কথা না বলে গরু চারটার দড়ি খুলে নিয়ে হনহন করে চলে গেল। অনেক অনুনয় বিনয় করেও কোন ফায়দা হলোনা। শেষে ওদের পা চেপে ধরলো আফজাল। কিন্তু ওরা সজোরে লাথি মেরে গরু নিয়ে চলে গেল। গরু নিয়ে যাওয়ার সময় ফ্যালফ্যাল করে পথের পানে চেয়ে রইল। সে এক করুণ চাহনি। তার চোখ ফেঁটে গড়িয়ে পড়ছিল তপ্ত লোনা জলের ধারা। আফজালের পা থেকে লাল রক্তের ধারা ফিনকি দিয়ে ঝরছে। ডান পা টাতে একটা জোঁক ধরেছে। এতো কিছুর মধ্যে খেয়াল করতে পারেনি সে। রক্ত চুষে জোঁকটা বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে। আফজালের ছয় বছর বয়সী ছেলেটা এসে বলল, আব্বা তোমার পায়ে তো জোঁক ধরেছে। রক্ত ঝরছে। ছেলেটাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লো আফজাল। ছেলেটাকে বুক জড়িয়ে নিয়েই বলতে লাগলো, এ আর কি জোঁক বাপ? কতই রক্ত খাবে? আসল রক্তচোষারা তো আমারে রক্তশূন্য করে দিয়ে গেল।