সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০

রোদে পোড়া পালিশ
অনলাইন ডেস্ক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

অন্য দিনের মতো নিয়ম করে ভোর নামে। প্রভাতে সূর্য উঁকি দেয়। কিন্তু শান্তিপুর গ্রামের মানুষ একটা খারাপ খবর দিয়ে দিন শুরু করে। বৈদ্য বাড়ির আখড়ায় মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। একটা মেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কেউ বলছে দম আছে। কেউ বলছে নাই। কেউ বলছে মৃত, কেউ বলছে জীবিত। এখনো বেঁচে আছে। এমন কথা শুনতে শুনতে বাড়ির সবাই ছুটে আসে। ছুটে আসে নিপু, আসে অলকাণ্ডশোলকা। সবাই। সকাল ফেরিয়ে দুপুর গড়াতে থাকে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ চলে আসে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসে। এর ফাঁকে চলে আসে নুপুরের বাবা। নুপুরের বাবা এসেই মূর্ছা যায়। নুপুরকে আজ সাথে করে বাড়ি নিয়ে যাবার কথা।

ওদিকে সবাই বলাবলি করছে, রাতে আখড়ার এখানে কেনো আসলো মেয়েটি? এ জায়গা ভালো না। পুলিশকে বুঝানো হচ্ছে এখানে মানুষ দিনের বেলায়ও একা আসতে ভয় পায়। ও কেনো এখানে আসলো? পুলিশ দ্বন্দ্বে পড়ে। আসল ঘটনা কী? শরীরের আঘাতের চিহ্ন নাই। বোঝা যাচ্ছে না কীভাবে কী হলো। পুলিশ লাশ সুরতহাল শেষ করে। খুনের মতো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্যে লাশ থানায় নিয়ে যেতে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাড়ির লোকজন বাধা দিতে লাগলো। স্থানীয়দের দাবি এখানে ভূত-পেত্নীর আনাগোনা বেশি। উপস্থিত শ শ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে লাশ আর থানায় নেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী লাশ সৎকার করতে হবে। তবে মাটি দিতে বলছে কেউ কেউ। কিন্তু নিপু খুব স্বাভাবিকভাবেই বলছে, দাহ করাই শ্রেয়। পাপ মোচন হবে।

ঘুম থেকে উঠার পর বৈদ্য বাড়ির মৃত্যুর ঘটনা কানে আসে। কিন্তু ঘটনার অন্তরাল জানা হয় না। বৈধ্য বাড়ির ঘটনা বলে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে। দ্রুত ছুটে আসে আখড়ায়। নুপুর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। যেন শুভর একগুচ্ছ স্বপ্ন নিথর পড়ে রয়েছে। বুকের ভেতর শুধু গুমড়ে উঠে দীর্ঘশ্বাস। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারে না। বুকের ভেতর যে ব্যথার নহর বয়ে যাচ্ছে তা কেউ দেখে না। দেখবেও না। কারো প্রিয় মানুষ না ফেরার দেশে চলে গেলে দহন কেমন হয়? যার চলে যায় সেই তা খুব বেশি অনুভব করে। যে ক্ষত বয়ে চলেছেন নুপুরের বাবা তার থেকে কতটুকু কম বা বেশে শুভর? চোখের কোনো বেয়ে গড়িয়ে পড়া নোনাজল দু হাতে মুছে। বুকের ভেতরের দহন সরাতে পারে না। একপর্যায়ে নিপুর কাঁধে মাথা রেখে চক্ষুজল বির্সজন দেয়। নিপু শান্ত¦না দেয়। থাক, আমিতো তোর জন্যে কম চেষ্টা করিনি। সৃষ্টিকর্তার কি খেলা এতো অল্প সময়ে নিয়ে গেলো এতো চমৎকার একটি গোলাপ। কতো মিশুক আর ভদ্র ছিলো নুপুর। দেখ দেখ এখনো যেন একটা পরী ঘুমিয়ে আছে। শুভর ভেতর থেকে কান্না যেন আরো বজ্র্যের মতো বেরিয়ে আসে।

সবাই অবাক! কেন শুভ মেয়েটার জন্যে এতো কাঁদবে। কেন এতো মায়া? সবাই মায়ার দৃষ্টিতে দেখলেও পুলিশ নিপুকে দেখা শুরু করলো সন্দেহের চোখে। নুপুর হিন্দু মেয়ে আর শুভ মুসলিম। ঘটনা কি? শুভ এতো কাঁদবে কেন? পুলিশ এবার একটা ক্লু পায়। পুলিশ শুভকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় নিয়ে আসে। থানায় নানান জিজ্ঞাসা। পুলিশ প্যাঁচিয়ে প্রশ্ন করলো কিন্তু খুব বেশি কিছু পেলো না। তবে কীভাবে নুপুরের সাথে পরিচয় সে বিষয়টি শেয়ার করলো শুভ। সম্পর্ক কতোদূর পৌঁছালো ততোদূর জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে মামলাটি মূল ট্র্যাকে আনতে সময় লাগবে। কারণ প্রত্যক্ষভাবে কারা জড়িত বিষয়টি অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। পুলিশ একটা ঘোরপাকের মধ্যে পড়ে। ওসি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় ঘটনার আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা বুঝতে পারছে না বিষয়টি আসলে কী? তবে মেয়েটি খুন হয়েছে এটা নিশ্চিত। অবশ্য ভূত-পেত্নির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে পুলিশকে। তবে এমন ঘটনায় এলাকায় নানা মানুষের মাঝে কানা-ঘুষা শুরু হয়েছে। কি হতে পারে। একেক জন একেক কথা বলছে। বিবিধ মত বাতাসে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু কোনো কথাই ভিত্তি হিসেবে ধরতে পারছে না পুলিশ।

এলাকায় একটা উটকো ভাব তৈরি হয়েছে। কেউ বলছে, এ মেয়েকে কে বলছে এখানে আসতে। আর আসলেই এতোদিন বেড়াতে হয় নাকি? কেউ বলছে বলছে বেড়াতে এসেছে ভালো কথা। রাতের বেলায় আখড়ায় কী? এখানেই বা কী করতে গেছে। অবশ্য অনেকেই বলাবলি করছে, ঘর থেকে আখড়ায় তাকে ভুতে তুলে নিয়ে গেছে। তবে মেয়েটি ঘর থেকে বের হলো কেনো? যদি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয় তবে কাউকে নিয়ে বের হলো না কেন? এমনও তো হতে পারে কারো সাথে নুপুর বের হয়েছিলো। কিন্তু কার সাথে বের হবে?

রাত নয়টার দিকেতো সবাই একসাথে ভাত খেয়েছিলো। তারপর সবাই যারযার মতো করে ঘুমিয়ে গেছে। তারপর কি এমন ঘটলো যে মেয়েটি ঘর থেকে বের হতে হবে। অবশ্য এবার সন্দেহের তীর অলকা ও শোলকার দিকে। কারণ দিনের বেলায় নুপুর ওদের সাথেই মিশতো। খেলতো আড্ডা দিতো। গ্রামের পাড়া মহল্লায় ঘুরতো। একটি মেয়ে মারা গেছে যেখানে মানুষ শোকে কাতর হবে মানুষ। উল্টো নানান প্রশ্ন মানুষের মনে দানা বেঁধেছে। শোকও যেন কয়েক গুণ হয়ে ধরা দিচ্ছি। অল্প কয়েকদিনেই বাড়ির সবার সাথে কত আপন হয়ে গেছে মেয়েটি। এর ফাঁকেই ঘটলো এতো বড় ঘটনা।

সেদিনতো নিপুর মা মজা করে বলেই ফেলেছিলো নুপুরকে বউ করে ঘরে তুলবে। অল্প কয়েকদিন পরেই সৌদি আরব থেকে বাড়ি আসবে বিমল। আগে থেকেই তার জন্যে মেয়ে দেখা হচ্ছে। অনেক জায়গায় মেয়ে দেখা হয়েও গেছে। বিমল অবশ্য আগেই বলে দিয়েছে বাবা মায়ের পছন্দই তার পছন্দ। এমনটি সব প্রবাসী ছেলেরাই করে। যদিও বিদেশ যাবার আগে বিমল একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে ছিলো। মানুষ জানে বিমল মেয়েটিকে বিয়ে করেছে। সবশেষ জানো গেলো বিয়ে হয়নি। বিমল বিগত সাত বছর সৌদিতে আছে। ততোদিনে ওই মেয়েকে তার পরিবার অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।

অবশ্য আজকাল যে দিন পড়েছে বিদেশ থেকেই ফেসবুক-ইমোতে সম্পর্ক করে দেশে এসে শুধু বিয়ের কাজ সারে। বিমল দ্বিতীয়বার এমন ভুল করার কথা নয়। কারণ এর আগের মেয়েটিকে নিয়ে তার সম্পর্কে মানুষ নানা কথা বলাবলি করেছিলো। যদিও এখন এমন হচ্ছে যে, মুঠোফোনে বিয়ে করছে। শুধু কি তাই বিদেশ থেকেও এখন বাংলাদেশের চলে আসছে বিদেশি মেয়েরা। বর্তমানে বাংলাদেশের মেয়েরা একপ্রকার আতঙ্কে আছে। যেভাবে বিদেশ থেকে মেয়ে আসতে শুরু হয়েছে এদিকে দেখা যাবে বাংলাদেশের মেয়েরা আইবুড়ো হয়ে যাচ্ছে বিয়ে হচ্ছে না। দেশে একটা অরাজকতা শুরু হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে আবার ছেলের বাড়িতে মেয়ে পক্ষ এসে মেয়ে বিয়ে করে থেকে যাচ্ছে। কি তাজ্জব যুগ চলে এসেছে। অনেকেই বলে কেয়ামত আর বেশি দূরে নাই। যেসব অবস্থা দেখতে হচ্ছে কেয়ামত দেখারও বেশি সময় লাগবে না। যা কিছুই হোক নুপুরকে বাড়ির বউ হিসেবে রেখে দেবার যে কথা বলেছিলো নিপুর মা; সে কথা এবার গাছ হতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে ডালপালা গজাচ্ছে। তবে কি এ ঘটনার সাথে নিপুর মায়ের কোনো হাত আছে?

এ কথা থেকে তো আর কাউকে অপরাধী ভাবা যায় না। সন্দেহ করা যায়। কিন্তু এমন একটা মেয়ে এমন দুর্ঘটনায় পড়বে তা কিন্তু কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। খুব ভদ্র শান্ত আর সুন্দরের যেন তুলনা হয় না। ভালো মানুষ নাকি বেশি দিন বাঁচে না। কিন্তু মেয়েটিরতো তেমন বয়স হয়নি যে; চলে যেতেই হবে। এলাকার সবাই একটা ঘোরপাকের ভেতরে আছে। পুলিশ আছে বিপাকে গ্রামের মধ্যে এতো বড় একটা ঘটনা অথচ পুলিশ কোনো ক্লু বের করতে পারছে না। এটা পুলিশেরও ব্যর্থতা বলা চলে।

যেহেতু পরিবারটি হিন্দু, সেহেতু তারা খুব বেশি ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না। কারণ পুলিশি ঝামেলা জিলাপির মতো প্যাঁচানো। লাশ কাটা-ছেড়া। নানা বিষয়। সব ঝামেলা এড়িয়ে গ্রামের মাদবর হদ্দাইন্না সবাই নুপুরের লাশ থানা থেকে নিয়ে আসতে জড়ো হয়। থানায় গিয়ে পুলিশকে বলে নুপুরের লাশ দিয়ে দেন। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু পুলিশতো খুব সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। পুলিশ বলছে, নিয়ে যাবেন ভালো কথা। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কি জবাব দেবো আমরা? পুলিশ চিন্তায় পড়ে যায়। সবার সাথে নিপুও হাজির। শুভতো আগে থেকেই থানায় অবস্থান করছে।

কিছুদিন আগে এলাকার এক বখাটের অত্যাচারে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি গ্রামের ময়মুরব্বিরা ফায়সালা করেছিলো। পুলিশকে বুঝিয়ে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহ করা সম্ভব হয়েছিলো। অবশ্য সে ছেলের বিরুদ্ধে গ্রামের শালিশ অভিযোগ প্রমাণ পায়। পরে তার কাছ থেকে কিছু টাকা জরিমানা করে মেয়েটির পরিবারকে দেয়া হয়েছিলো। নুপুরের ক্ষেত্রে পুলিশ কোনো ভাবেই ছাড় দিতে চাচ্ছে না। আগের ঘটনাটি নিশ্চিত আত্মহত্যা ছিলো। আর এটি সেরকম ঘটনা নয়। এটি নিশ্চিত হত্যাকাণ্ড। হয়তো ঘটনার রহস্য বের করা জটিল হবে। তারপরেও পুলিশ বিষয়টিকে খুব সহজে ছাড়বে না।

ঘটনার পর থেকে নিপু শুভ থেকে একটু আলাদা থাকছে। নিপু কোনো কথা বলছে না। অবশ্য শুভ ভাবে একটা পছন্দের মেয়ে এভাবে মারা যাবে তা কী করে হয়। শুভ একটু শক্ত হয় । যা হবার হয়েছে নিপুর সাথে একটু কথা বলি।

থানা এরিয়ায় বসেই শুভ নিপুকে ফোন করে। কয়েক দফায় কল করার পর কল রিসিভ হয়।

- কিরে তুই এতো গুমট হয়ে আছস যে? তুই নুপুরের সাথে সবশেষ কখন কথা বলেছিস।

- আমরা রাতে একসাথে ভাত খেয়েছি। তারপর সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি। পাশের রুমে আমি। আর ঠিক উত্তরের রুমটাতে নুপুর ঘুমিয়ে ছিলো। ওই খাটে বাবা মা ঘুমাতো। কিছুদিন পর বড় দাদা বাড়ি আসবে তাই তারা এখন আর এ খাটে ঘুমায় না। পুরানো ঘরেই মা বাবা ঘুমায়। নুপুরের সাথে আমার ছোট বোন ঘুমিয়ে ছিলো। ওতো ছোট ঘুমিয়ে গেলে দিনদুনিয়ার খবর থাকে না। আমি দক্ষিণের রুমে ঘুমিয়েছি। এছাড়া কিছু বলতে পারবো না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এমন খবর শুনি। তারপর তোকে জানাই।

- আমি ভাবছি। এখানে অন্য কিছু আছে। যদি রাত দশটার দিকে তোরা একসাথে ঘুমিয়ে পড়িস। তবে নিশ্চয় তৃতীয় পক্ষ এখানে সম্পৃক্ত আছে। আমি বিষয়টি দেখছি। আমি লাশ ময়নাতদন্তের দাবি জানাবো। কারণ নুপুর এভাবে মরতে পারে না। কোনো বিষয় নিশ্চয় আছে। অবশ্যই এর পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে হবে। নিপু কিছু না বলে মাথা নত করে ফোন রাখে। নিপুর আচরণে একটা বিশদ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। কেমন যেন নিরব হয়ে গেছে। অবশ্য এতো বড় একটা ঘটনা সেতো নিরব হতেই পারে। মন খারাপ হতেই পারে। শুভ দ্রুত ছুটে যায় ওসির রুমে। (চলবে)

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়