প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
শুভর এমন কথা শুনতেই কেঁদে দেয় নুপুর। শুভ বিব্রত হয়। কী করবে ভেবে উঠতে পারে না। শুভ একটু কাছে ঘনিয়ে এসে বলে, কান্না করো না। কাকী ঘরে আছে। শুনলে নানা কিছু ভাবতে পারে। ঝামেলা বাড়বে। ভাববে আমি আবার কিছু বলেছি কি না?
এবার নুপুর শুভকে জড়িয়ে ধরে। শুভর বুক যেনো নিরাপদ আশ্রয়। বুকের মধ্যে আগলে ধরে কান্না যেনো আরো উথলে ওঠে। শুভ মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, কেঁদো না। কী হয়েছে বলো?
- আমার কিছু ভালো লাগছে না। মনটা খুব খারাপ।
শুভ নুপুরকে আরো শক্ত জড়িয়ে ধরে। আরে পাগলি আমি আছি তো। আমি থাকতে তোমার এতো খারাপ লাগবে কেন? তুমিতো আমার প্রাণ। তুমি আমার পৃথিবী। তোমার মন খারাপ দেখলে আমার ভালো লাগে বলো?
- আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের মাঝে দৃশ্য ও অদৃশ্যমান একটা দেয়াল দাঁড়িয়েছে। তুমি এ দেয়াল ভাঙবে কীভাবে?
- সে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি তোমার জন্যে সবকিছু করতে রাজি আছি। তোমার ফালতু চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আজ থেকে তোমার সব চিন্তা আমার। তুমি কোনো চিন্তা করবে না। এবার নুপুর একটু স্বস্তি পায়। আস্থা পায়। কিন্তু মনে যে শঙ্কা দানা বেঁধেছে তা সরাবে কীভাবে বুঝ পায় না। নিজেকে শুভর বুক থেকে আলগা করে। তারপর বিভিন্ন কথা বলে। কিন্তু গত রাতের কিছুই শুভকে বলে না নুপুর। শুভ নুপুরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। নিপু বিকেলের দিকে শুভকে ফোন করে। কিরে কল দিছিলি?
- হুম। তোর ফোন বন্ধ কেনো? অনেকবার কল দিয়েছি। তোদের বাড়িতে গিয়েও তোকে পেলাম না। নুপুরের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে এসেছি। কাল দেখা হবে আজ আর আসবো না। আর তুই বাড়ি যা। কাকী মা চিন্তা করছে।
- আমিতো বিকেলেই চলে এসেছি।
- সকালে বেরিয়ে কোথায় গেছিলি? কাকী মা খুব চিন্তা করছে।
- ঠিক আছে। আমি মার সাথে কথা বলেছি।
রাত হয়। আরেকটা পূর্ণিমা রাত। একটা রাত কতো ঘটনার সাক্ষী হয়। ভালো মন্দ কিংবা সুন্দর অসুন্দরের।
গতকালের ন্যায় আজও নুপুরের কাছে যায় নিপু। কাছে গিয়েই বলে, চলো।
- কোথায়?
- চলো বাইরে যাই। আখড়ার কাছে গিয়ে নিরিবিলি কিছু সময় কাটাই। গল্প করি।
- আমার ভালো লাগে না। আমি যেতে পারবো না। তাছাড়া আমার মনও ভালো নেই। প্লিজ আপনি আমাকে বিরক্ত করবেন না। গতরাতেও আমি ঘুমোতে পারিনি। আজ আমাকে একটু ঘুমোতে দিন।
- ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়। চলো অল্প কিছু সময় থেকে চলে আসবো। আরে চলো চলো। কোনো সমস্যা হবে না। চলো না। নিপুর অনেক চাপাচাপির পর এক প্রকার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাধ্য হয় নুপুর। না গেলে নিপু পাগলামি করতে পারে।
যদিও ফের ঘরেই নুপুরের সিদ্ধান্ত জানাতে চায় নিপু। নুপুর কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। আর শুধু মাথা নত করে বসে আছে। খুব ছোট্ট স্বরে কথা বলছে দুজন। পাশের কেউ যেন শুনতে না পায়। দ্বিতীয়বার নিপু বলে, চলো বাইরে যাই। আজও পূর্ণিমা রাত। দুজনে রাত দেখবো। গল্প করবো। কিছু কথা বলবো।
- এতো রাতে মানুষ দেখলে কী বলবে? আমি পালানো জায়গা খুঁজে পাবো না।
- কিচ্ছু হবে না। চলো যাই।
নুপুর ভাবে আচ্ছা দেখি সে কী বলতে চায়। আর বিষয়টি যেন বেশি দূর না গড়াতে পারে সে ব্যবস্থাই করতে হবে। এখানেই চাপা দিতে হবে বিষয়টি। স্পষ্ট জানিয়ে দেবো অযথা আমার পেছন পেছন ঘুরে সময় নষ্ট না করে যেন। তারপর দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির দক্ষিণ পাশে আখড়ার কাছে আসে। এখানো রাতের বেলায় সাধারণত মানুষ আসে না। অনেকেই বলে এখানে ভূত-পেত্নী থাকে। কেউ কেউ বলে জ্বীন-পরীও থাকে। অনেকে অনেক কিছু দেখেছে বলেও শোনা যায়। অথচ মধ্যরাতে একজোড়া যুবক-যুবতি একসাথে এখানে আসা খুবই দুঃসাহসী কাজ। স্থানের ভয় যতোটা, সমাজের ভয় তার হাজারগুণ বেশি। পূর্ণিমা রাত হওয়ায় ভয়টা একটু কম লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ রাতের বেলায় নিপুও কখনো এখানে একা আসে না। যদি মনে প্রেম খেলে সাহস বেড়ে যায় কয়েকগুণে যে কারো মনে। নিপু হাত ধরে নুপুরের। নুপুর আবার হাত সরিয়ে নেয়। কুয়াশায় ভেজা ঘাসের উপর দুজন বসে থাকে। কিছু সময়। কোনো কথা নেই। শুধু নিরবতা। নিপু মনে মনে একটু বিরক্ত হয়। তবে এতো রাত করে কেন এখানে আসা। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই নিপুর সঙ্গে বের হয় নুপুর। যদি কথাই না বলো। অথবা কিছু বিনিময় না হয় তবে এখানে এসে কি লাভ বলে নিপু। তাহলে এখানে এসেছি কী করতে?
- আমিতো আসতে চাইনি। আপনি জোর করাতে এসেছি। এখন বলুন কী বলবেন?
- আমি এই প্রথম কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছি। আর সে হচ্ছো তুমি। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি।
- তাহলে সেদিন সকাল সকাল গিয়ে শুভকে নিয়ে আসলেন কেন?
- এনেছিতো কী হয়েছে? তার সাথে সম্পর্ক করতেই হবে এমনতো কোনো কথা নেই।
- কিন্তু আমারও তো ভালালাগা মন্দলাগা থাকতে পারে তাই না?
- না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। আমি তোমার জন্যে যা খুশি তা করতে পারি।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ তর্ক চলে দুজনের। তখন গভীর রাত। এক পর্যায়ে কোনো তর্কের আওয়াজ শোনা যায় না। রাগ করে নিপু নুপুরকে রেখে চলে আসে। কিন্তু রেখে আসাটা বিভৎস। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। রাত চলে যায়। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা : [email protected]