শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সাহিত্য ও গণতন্ত্র

মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া
সাহিত্য ও গণতন্ত্র

সাহিত্য হচ্ছে ভাষার বহুমাত্রিক অনিন্দ্য রূপ। সাহিত্যের কলম ভাবনায় স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখায়। ফুটিয়ে তোলে সুন্দরের সৌন্দর্য। সভ্যতার সোপানে অসঙ্গতি তুলে নিগৃহীত হয়েও পরিশেষে হয়ে উঠে ধ্রুবতারা। সাহিত্যের কলরবে উদয় হয় যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না। ইন্দ্রিয়তে আলোড়িত হয় ভাবনার আদান-প্রদান। ফুটে উঠে কবিতাণ্ডগল্প-নাটক-উপন্যাস-রম্যগল্প সৃজিত ভাষায়। সাহিত্যের ভাষায় থাকতে হয় মাধুর্য, কল্পনায় পরিশীলিত পরিযায়ী শব্দচয়ন। উদ্ভব বিক্ষিপ্ত অহেতুক বিদ্রোহ শব্দ জুড়িয়ে সাহিত্যাঙ্গনে টিকে থাকা দুষ্কর। এক কথায় বলা যায়, সাহিত্য হচ্ছে সভ্যতার নিপুণ শৈলীর ছোঁয়ায় শব্দমালার সম্মিলন।

সাহিত্য শব্দ রচনার বিপরীতে আজকাল শব্দ স্বরে ‘সুশীল সমাজ’ নামে এক শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে। অনেকাংশে প্রকারান্তরে সুজন বিদ্যার আড়ালে কুজনের চরিত্র ফুটে উঠে। রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে সুশীল সমাজের কুশলীবরা কথা বলার পারঙ্গমতায় রাজনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে গণতন্ত্র চর্চা সাবলীলভাবে করছেন।

গণতন্ত্র। এরিস্টোটল ও প্লেটোর গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ভিন্ন রূপে মতপার্থক্যে বিদ্যমান। তথাপিও সর্বাধিক মতে, মনের ভাব আদান-প্রদান করে ইচ্ছে অনুযায়ী মতামত প্রদান/প্রকাশ করাকে ‘বাক স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র’ বলে। গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব নির্বাচন। সংখ্যাধিক্যের জ্ঞানকে প্রাধান্য দিলে কর্মপরিবেশ সুচারুভাবে সম্পূর্ণ করা যায়। সর্বজনগ্রহণযোগ্য মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে দক্ষ নেতৃত্বগুণের ‘নেতা’ নির্বাচিত করলে অর্থবহ ফলাফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতা/নেতৃত্ব নির্বাচন ও গণতন্ত্রের অলঙ্কার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ‘সরকারপ্রধান বা সংসদীয় নেতা’ নির্বাচনের একটি গাইডলাইন জাতীয় সংসদের সংবিধান দ্বারা গৃহীত স্বীকৃত, যা বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারপ্রধান বা গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ পরিস্থিতি জলবায়ু ও ভৌগোলিক আঞ্চলিকতায় একেক দেশে একেক মানদ-ে-কর্মকাণ্ডে পরিচালিত হয়। যাতে নিজ নিজ ভূখণ্ডের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের বাংলাদেশ আজ বায়ান্ন পেরিয়ে। এরই মধ্যে গণতন্ত্রের মধুর শব্দশ্রুতি বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে সামরিক যাঁতাকলে পিষ্ট ছিলো দীর্ঘ বছর। এইচওয়েল বলেন, গণতন্ত্রের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নির্বাচন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গণতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণীত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য, ধর্মকর্মের একটি স্বতন্ত্র পরিবেশ প্রণিধানযোগ্য। বিশেষ করে, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি প্রগতিশীল পরিবেশ/আবহ বিরাজমান থাকা চাই। নচেৎ, নিকটবর্তী আফগানিস্তান-পাকিস্তানের পরিণতি বরণ করতে হবে। সময়ের অপেক্ষায় সুযোগসন্ধানীরা। যদিও মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন সোনালি সূর্যকে কালো মেঘে আচ্ছন্ন করতে পারবে না অন্ধকারের প্রেতাত্মা বাহিনী।

আমার জন্মভূমি। আমার সোনার বাংলাদেশের জন্মণ্ডইতিহাস নিয়ে অজস্র কবিতাণ্ডগল্প-নাটক-প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো স্বাধীন দেশ নিয়ে এতো সাহিত্য চর্চা হয়নি। এই বিরল সৃষ্টি করেছেন ভাষা ও স্বদেশ সাহিত্যপ্রেমীরা। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের দুঃসময়েও কবিতাণ্ডগল্প-নাটকের মাধ্যমে জন্মভূমির ইতিহাস-চেতনা জাগ্রত রেখেছেন সাহিত্যবোদ্ধাগণ। যার জ্বলন্ত উদাহরণ : বৈরী পরিবেশেও জননন্দিত সাহিত্যিক ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ পাখির কণ্ঠে ‘তুই রাজাকার-তুই রাজাকার’ শব্দচয়ন করা। তাঁর ওই দুঃসাহসিকতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কবিতাণ্ডগল্প-উপন্যাস বিশেষ করে সাহিত্যের আদিরূপ কবিতায় সবর হয় সাহিত্যমহল। মুক্তিযুদ্ধকালীনও কবি-সাহিত্যিকরা মুক্তিসংগ্রামের শব্দমালা দিয়ে স্বাধীনতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীন দেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হয়ে যথার্থই কবি-সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করেছেন। বাঙালির প্রথম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’কে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দিয়ে। ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল’ রণসংগীত মূল্যায়নে ও জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করে কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীন ভূখণ্ডে নাগরিকত্ব প্রদান করে অনন্য সাহিত্যপ্রেমের ইতিহাস রচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার কন্যা গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েও পিতার ঔরসজাত রক্তের প্রবহমান ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

ইতিহাসের মহাদুর্যোগপূর্ণ বিভীষিকাময় মুহূর্ত ‘করোনা’কালে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সকল স্তরের প্রতিভাবানদের আর্থিকভাবে প্রণোদনা দিয়ে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র কবি-সাহিত্যিকদের খোঁজখবর ওই চরম দুঃসময়ে রাখেনি। মানবতার জননী রাষ্ট্রনায়ক সীমিত অর্থভাণ্ডার দিয়ে অসীম প্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সাহিত্যিকদের স্বাস্থ্য ও সন্তানদের পড়ালেখায় বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে এটা বিরল যে, করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের আর্থিক মন্দাবস্থায় চৌষট্টি জেলায় এক যুগে জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন উদযাপন করে বাংলাদেশ। এটি এক বিস্মিত ঘটনাবহুল সোনালি অধ্যায় সাহিত্য ভুবনে। এসব সম্ভব হয়েছে সাহিত্যপ্রেম ও রাষ্ট্রনায়োকচিত দার্শনিক মনস্তাত্ত্বিক মনোবলের প্রতিফলনে এবং উপযুক্ত উন্মুক্ত জনসংযোগের পরিবেশ বিদ্যমান থাকায়। এই পরিবেশের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিবারবর্গের এক যোগে এক সুরে এক কলমের বর্ণমালার পালতোলা হাওয়ায় সুর মিলাতে হবে। পাশাপাশি সকল চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং রক্তগঙ্গার বিনিময়ে সম্প্রীতির অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কলমসৈনিকদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ও নৈতিকতার দৃষ্টিকোণে সর্বোচ্চ মেধাশ্রম প্রয়োগ সাময়ের দাবি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্ত প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার উর্বর সোনাফলা জমিনে স্বকীয়তা রক্ষায় সমবেত হই উজানের নৌকায়।

সাহিত্য ও গণতন্ত্রে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণে মুখরিত হোক আগামীর দিনলিপি। জয় বাংলা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়