প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। পেশায় চিকিৎসক। জন্ম চট্টগ্রামে কর্ণফুলির তীরে চরণদ্বীপ গ্রামে। স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন চাঁদপুরে। তিনি একজন সব্যসাচী লেখক। তাঁর লেখক-খ্যাতির অধিকাংশই অর্জিত হয়েছে চাঁদপুরে অবস্থানকালে। আগামী ১০ অক্টোবর ২০২৩ তাঁর পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। প্রশ্নোত্তর আকারে নি¤েœ তা হুবহু পত্রস্থ করা হলো।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন।
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আমার জন্ম কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী ছবির মতো এক সুন্দর গ্রাম চরণদ্বীপে। মায়ের মুখে শুনেছি, আমি যখন তাঁর গর্ভে আসি তখন তিনি স্বপ্নে দেখেন, তাঁর কাছে তাঁর প্রয়াত খুড়ো শ্বশুর হাত পেতে ঔষধ চাইছেন। মা এই স্বপ্নের কাহিনী মাঝেমধ্যেই বলতেন। ছোটবেলায় মায়ের মুখে এ কথা অনেকবার শুনেছি। আমাদের গ্রামটি বৌদ্ধ পল্লি বিধায় সবারই ধারণা বুদ্ধ রাঙকূট হয়ে ব্রহ্মদেশে গমনকালে তাঁর চরণ এই জনপদে পড়েছিল। সেই উৎস থেকে গ্রামের নাম চরণদ্বীপ হয়ে থাকতে পারে।
আমি বেড়ে উঠেছি এক সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারে চার ভাই ছয়বোনের সংসারে। আমি জন্মক্রমে সপ্তম এবং ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। পিঠেপিঠি ছোটবোন থাকায় মেজদির কোলে কোলে বড় হয়েছি। আমার শৈশবের শুরুটা কেটেছে গ্রামে। এরপর ঊনিশ্শো সাতাত্তর সাল থেকে শহরে এসে আমরা সপরিবারে থিতু হই। এখানে এসেও আমি আমার শৈশবের কর্ণফুলিকে খুঁজে পাই। আলকরণে বাসা হওয়ায় তার খুব কাছেই ছিল কর্ণফুলির প্রবাহপথ। বিকেলগুলো কাটত তারই তীরবর্তী খেলার মাঠে ফুটবলকে তাড়িয়ে।
শহরে ইসহাক সাহেবের কম্পাউন্ডে আমাদের বাসা ছিল। সামনের একটুখানি আঙিনায় আমরা পেরেক ওঠানো লাটিম দিয়ে ক্রিকেটের আনন্দে মেতে থাকতাম। ঐ কম্পাউন্ডে আমরা ছিলাম মাঝখানে আর আমাদের বাঁ পাশে ইকবালেরা এবং ডান পাশে ছিল সমীরদের বাসা। সন্ধ্যা হলেই ইকবালেরা দরূদ শরীফ পড়তো, আমরা বাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধের সামনে প্রার্থনা করতাম আর সমীরেরা দিত সন্ধ্যাবাতি। সকালে আটটার আগে আগে স্কুলে যেতাম। সেখানে গিয়ে দেখতাম, ক্রুশবিদ্ধ যিশু কী সকরুণ নয়নে চেয়ে আছে! স্কুল কম্পাউন্ডের দক্ষিণে ছিল পাথরঘাটার বিখ্যাত গির্জা। ক্লাসরুম থেকে দেখা যেতো, মাতা মেরির কোলে শিশু যিশু, একমাথা কোঁকড়ানো চুল। ছোটবেলায় আমার বয়স যখন চার কি পাঁচ বছর, তখন আমাকে একটি বাঘা ধরনের পাগলা কুকুরে কামড়েছিল। কুকুর আমার চেয়ে বড় ছিল। আমাকে ঘাড়ে-গর্দানে বেশ ভালোভাবে কামড়েছিলো। আমার মা তখন পুকুরপাড়ে স্নান করতে গিয়েছিলেন। মা এসে দেখেন আমি রক্তাক্ত হয়ে আছি। এক এক জন মাকে এক এক রকম পরামর্শ দিতে শুরু করলো। কারো কথায় আমাকে পান পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়ানো হলো। কেউ কেউ পাশর্^বর্তী গ্রামে কোনো এক আত্মীয়া মহিলার কাছে নিতে বললো, যিনি স্বপ্নে নাকি কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক পেয়েছেন। পরেরদিন বাবা জানার পর আমাকে মা ও হিমাংশু কাকাসহ সদরঘাট রোডে রুনু মহাজনের কুকুরে কামড়ানোর ওষুধ আনতে পাঠানো হলো। সদরঘাট পোস্ট অফিস-গলিতে রুনু মহাজনের ঠিকানা। গলির মুখে মিউনিসিপ্যালিটির লাইটপোস্টে হিজ মাস্টার্স ভয়েসের গ্রামোফোনওয়ালা কুকুরের ছবি আঁকা ছিল যাতে মানুষ খুব সহজে চিনতে পারে। রুনু মহাজনের লোকেরা মায়ের হাতে ওষুধের পুরিয়া ধরিয়ে দিয়ে খাওয়ানোর নিয়ম বাতলে দিলো। বলতে শুনলাম, ওষুধ নাকি খুব গরম। তাই আঠার মাস আমাকে মাছ-মাংস-দুধ-ডিম খাওয়ানো যাবে না। আমি সেই যে খাদ্যের নিষেধাজ্ঞায় পড়লাম, এরপর মেয়াদ শেষ হলেও দীর্ঘদিন আমি মাংস খাওয়ার কোনো আগ্রহ বোধ করিনি। রুনু মহাজনের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি বাবা জেলা পরিষদে আবেদন করে আমার জন্যে চৌদ্দটা ইঞ্জেকশনের ( র্যাবিজ্ ভ্যাক্সিন) ব্যবস্থা করলেন। ইঞ্জেকশনগুলো মারার জন্যে আমাকে দিদিমার কাছে রাখা হয়েছিল। ইঞ্জেকশন মারতেন ডাঃ শায়েস্তা খান।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বলুন।
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আমার শিক্ষার হাতেখড়ি হয় গ্রামে। মায়ের কাছে শিক্ষার সূচনা হলেও আমাকে অক্ষরজ্ঞান অর্জনের জন্যে পাঠানো হলো এক গ্রামতুতো দিদির কাছে। এরপরে শহরে এসে সেন্ট প্ল্যাসিডস্ স্কুলে ভর্তির জন্যে কিছুদিন মেজদি পড়ালেখার তালিম দেয়। ভর্তি পরীক্ষার দিন স্কুল প্রাঙ্গণ ছিল লোকে লোকারণ্য। আমি এর আগে এতো লোক দেখিনি। ভর্তি পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর ছিল নাইন। লাইনের ভিড়ে অ্যাডমিট কার্ড হতে আমার ছবিটি পড়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে আমি বাবাকে ইশারা দিয়ে তা দেখাই। পরে বাবা আর একটি ছবি পাঠিয়েছিলেন কি না খেয়াল নেই।
স্কুলে আমাকে একবার ওয়ানের ক্লাসের শুরুতে এবং একবার টু-এর ক্লাসের শুরুতে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে গার্ডিয়ানসহ অফিসে দেখা করতে বলা হয়েছিল, যাতে ডাবল প্রমোশন নিতে আগ্রহী হলে তা বাস্তবায়ন করি। কিন্তু দুবারই আমার মা তা নাকচ করে দেন। তাঁর মাতৃসুলভ চিন্তায় তখন শিক্ষাজীবনের গোড়া শক্ত করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল। ি প্রপারেটরি ক্লাসে এবং ক্লাস ওয়ানে আমাকে বাসায় তালিম দিতেন একজন ে প্রৗঢ় ভদ্রলোক। আমার বাবা তাঁকে আংকেল ডাকতেন। তিনি ক্রমে ক্রমে আমার মায়েরও আংকেল হলেন এবং আমার সম্বোধনেও আংকেল হলেন। তাঁর নাম ছিল শ্রদ্ধেয় শরদিন্দু দস্তিদার। পরে জেনেছিলাম, তিনি খ্যাতিমান কবি ত্রিদিব দস্তিদারের বাবা ছিলেন। আংকেলের গোঁফ ছিল জেনারেল এম এ জি ওসমানীর মতো। তাঁকে একবার বলতে শুনেছি, তিনি গোঁফে তা দেওয়ার ভাতা পেয়েছিলেন।
অষ্টম শ্রেণি হতে আমার বড় মামার আগ্রহে আমি কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হই। স্কুলে গিয়ে সেই প্রথম জানতে পারি, দুষ্টু বড় ভাইয়েরা স্যারদের বিভিন্ন খেতাবী নামে ডাকতেন। এই নামকরণ আসলে কাদের অবদান তা বের করা গবেষকদের জন্যেও মুশকিল ছিল। আমরা যখন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষ তখন ঊনত্রিশে এি প্রল একানব্বইয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়। ক্যাম্পাসে গাছের সবুজ পাতাগুলো উষ্ণ বাতাসের লেলিহান শিখায় যেন পুড়ে বাদামী হয়ে গিয়েছিল। কলেজ ছেড়ে যখন মেডিকেল কলেজে উঠি তখন যেন এক রোমাঞ্চকর জগতে প্রবেশ করি। কলেজ ক্যাম্পাস হয়ে উঠে এক স্বপ্নের জগৎ।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : শৈশব-কৈশোরে কি সাহিত্যপাঠ ও সংস্কৃতিচর্চা করতেন?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : হ্যাঁ, শৈশব-কৈশোরে সাহিত্যপাঠ এবং সংস্কৃতি চর্চায় সমৃদ্ধ ছিল আমার জীবন। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন আমার মেজো মামার বিয়ে হয়। তার বিয়েতে প্রীতি উপহার হিসেবে প্রচুর বই পাওয়া গিয়েছিল। আমি বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বেড়াতে গেলে সেই বইয়ের সাম্রাজ্য পেয়ে যাই। রবীন্দ্রনাথের 'নৌকা ডুবি', 'যোগাযোগ ', ‘গল্পগুচ্ছ’, শরৎচন্দ্রের ‘বি প্রদাস’, ‘বিরাজ বৌ’, 'দত্তা', 'পথের দাবী', 'গৃহদাহ' আমি সেই সময়ে পাঠ শেষ করি। পাশাপাশি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ঝিন্দের বন্দী', বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালি ' বইগুলোও সেই সময়ে পড়া শেষ করি। শৈশবে আমি জুঁই খেলাঘর আসরের সদস্য ছিলাম। তখন আবৃত্তি ও উপস্থাপনার সাথে যুক্ত হই। খেলাঘরের নাটকগুলোতেও আমি অভিনয় করি। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে শিশু আনন্দমেলায় ‘রাজা ও রাজদ্রোহী’ নাটকে অভিনয় করে আমি তৃতীয় সেরা অভিনেতার পুরস্কারে পুরস্কৃত হই।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : লেখালেখির চিন্তা কিভাবে মাথায় এলো?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : জুঁই খেলাঘর আসরের সাথে যুক্ত হওয়ায় প্রতি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আসর বসতো। মাঝে মাঝে সেখানে স্বরচিত ছড়া পাঠ করতে হতো। খেলাঘর মহানগরীর আয়োজনে সাহিত্য বাসরে নিয়মিত যেতাম। শ্রদ্ধেয় আশীষ সেন দাদার আয়োজনে সেই সাহিত্য বাসরে নিয়মিত উপস্থিতির জন্যে আমি একটি বই পুরস্কার পাই। এই সাহিত্য বাসরেই আমি আমার প্রথম সার্থক ছড়াটি পাঠ করি। তখন বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় ছিল। স্পেনে হচ্ছিল বত্রিশ দলের ফুটবল মহারণ। ব্রাজিলের বিশ্ব তারকা জিকোর পাশাপাশি আর্জেন্টিনার একজন নতুন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের উত্থান ঘটে। তার নাম মাত্র সবাই জানতে শুরু করেছে। সে হলো ম্যারাডোনা। সবাই তাকে পেলের সাথে তুলনা করছিলো। এই ম্যারাডোনাকে নিয়েই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি আমার প্রথম সার্থক আট পংক্তির দুই স্তবকের ছড়াটি লিখি। একবার স্কুলে ধর্ম ক্লাসে হুজুর অকারণে আমাকে হাতে কাঠের স্কেলের বাড়ি মেরে শাস্তি দেন। আমি ছিলাম ক্লাসে ফার্স্ট বয়। হুজুর ক্লাসে কথা বলা বন্ধ না করতে পেরে সবার সাথে আমার হাতেও স্কেলের বাড়ি দেন। প্রতিবাদে তখন চার চরণের একটা ছড়ার জন্ম হয়। আমার ক্লাস টিচার পরের পিরিয়ডে আসলে অন্য ছাত্রবন্ধুরা তাঁকে এ ঘটনা জানায়। তিনি আমার ছড়াটি পড়েন এবং তা নিয়ে বড় হুজুরের কাছে যান। বড় হুজুর পরে ছোট হুজুরকে এ বিষয়ে সাবধান করে দেন। এই ছড়ার বদৌলতে আমাদের প্রিন্সিপ্যাল ধর্মক্লাসের সময় আমাদের স্কুলের হলরুমে বসার অনুমতি দেন। এর পর থেকে স্কুলে সবাই জেনে যায় আমার লেখালেখির বিষয়টি। আমার ইংরেজি শিক্ষিকা মিসেস আর ডি ক্রুজ পরে আমার লেখার খাতা আগ্রহ ভরে দেখতে চান। ক্লাস সিক্সে আমার আরেক পূজনীয় শিক্ষক মি. রেমন্ড দাস স্যার বাংলাদেশে পোপ জন পলের আগমন উপলক্ষে একটি স্তুতিকাব্য লেখেন। আমি লেখালেখি করি জেনে স্যার আমাকে সেই কবিতাটি পাঠ করে মতামত দিতে বলেছিলেন। এভাবেই ধীরে ধীরে আমি লেখালেখির জগতে ঢুকে পড়লাম।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় কার উৎসাহ পেতেন?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : অবশ্যই সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় বাবা-মায়ের উৎসাহ ছিল। তারপর খেলাঘরের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম, তারেক সোলায়মান সেলিম ভাইয়েরা উৎসাহ দিতেন। উৎসাহ পেয়েছি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দের কাছ থেকেও। আমার বাবার মাসতুতো ভাই শ্রীমান কাকা ছিলেন বাংলা বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি বাগ্মী যেমন ছিলেন তেমনি ছিলেন সৃজনশীল সাহিত্যপ্রেমী। আমার ছড়া ও লিমেরিকগুলো পড়ে তিনি বিরাশি সালের দিকে ছন্দ-মাত্রা ঠিক করে দিতেন। আমাকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সহজভাবে মাত্রা গুণতে শিখিয়েছিলেন আমার মেজদার বন্ধু ওল্ড প্ল্যাসিডিয়ান আলেক্স আলীম ভাই। তাঁর সহজ ছন্দের পাঠ আমার এখনও মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, এক মাত্রা কমবেশি হলে ছন্দ ততবেশি টাল খায় না। কিন্তু তাতে যদি বক্তব্য সুদৃঢ় হয় তবে তাতেই সই। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হই। আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন আজিজ স্যার। তিনি তখন পড়াতেন ‘মাঠের পারের দূরের দেশ।’ বলতে গেলে এটি ছিল 'পথের পাঁচালি' হতে সংকলিত ও সংক্ষেপিত। স্যারে পড়ানোর সময় আমি আর আমার বন্ধু শান্তনু একটা খেলা শুরু করি। খেলার বিষয় ছিলো স্যারের বলা শব্দকে সমার্থক শব্দ দিয়ে জুতসই করা। এরকম দুচারটা জুতসই প্রতিশব্দ দিতে দিতে একসময় উৎসাহবশে গলার আওয়াজ বেড়ে যায়। ফলে আমার শব্দটি স্যারে শুনে ফেলেন। স্যার তখন বললেন, কে রে বাবু তুই এতো সুন্দর একটা প্রতিশব্দ দিলি। সেই থেকে আমি স্যারের স্নেহের নজরে পড়ে যাই। ইকোনো কলমে গাঢ় করে লেখা আমার হস্তাক্ষর দেখে স্যার এরপর থেকে আমাকে দিয়ে প্রতিদিন নিজ ভাষায় একটা করে ভাবসম্প্রসারণ লিখতে দিতেন। কিন্তু এগুলো ক্লাসে পড়াতেন না। পরে স্যার একদিন আমাকে জানিয়েছিলেন, তোর এই লেখাগুলো আমাদের নতুন বই ‘উচ্চমানের বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা’ গ্রন্থে সংযোজন করেছি। বলতে গেলে এভাবেই আমি সকলের উৎসাহ ও অনুে প্ররণা পেয়েছি। অবশ্যই আরেকজন স্যারের কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন ক্লাস সিক্সের সময়ে জ্যামিতি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় বাবুল আইচ স্যার। তিনি আমাকে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও নবম শ্রেণির দলনেতা বানিয়েছিলেন বিতর্কে।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : প্রথম লেখা কবে লিখলেন? কবে প্রকাশিত হলো?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : প্রথম লেখা লিখেছি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন। ঊনিশ্শো বিরাশি সালের জুন মাসে। লেখাটি সে-বছরই দেয়ালিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর জুঁই খেলাঘরের অমর একুশের ভাঁজপত্রে ঊনিশ্শো তিরাশি সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন বাংলা ভাষার উপরে ছড়া প্রকাশিত হয়।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিলো?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। খুশির পাশাপাশি ভয়ও কাজ করতো। না জানি বড়রা কত ভুল ধরেন! কিন্তু সে ভুল কেটে যায় যখন তা পাঠ পর্যালোচনায় প্রশংসিত হয়।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : সচেতনভাবে কবে থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করলেন?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : সচেতনভাবে সাহিত্য চর্চা আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই শুরু করি। তখন বিভিন্ন ভাঁজপত্র, দেয়ালিকা ও স্মরণিকায় প্রকাশের উদ্দেশ্যে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করি। নবম শ্রেণিতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র চিন্তায় পাঠ পর্যালোচনা করি। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে উপস্থিত রচনা লেখায় প্রথম হই। এভাবে ধীরে ধীরে ছড়া ও সমিল পদ্যের পাশাপাশি আমি প্রবন্ধ লেখাতে যুক্ত হই।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : আপনি সাহিত্যের প্রায় সকল মাধ্যমে লিখেন। কোন্ শাখায় লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আসলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে কোনো লেখাই মনঃপূত হয় না। লেখার স্বাচ্ছন্দ্য নির্ভর করে সময় ও বিষয়বস্তু নিয়ে মগ্নতার উপরে। তারপরও বলতে হয়, মুক্তগদ্যে স্বাচ্ছন্দ্য কিছুটা বেশি।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : একটি লেখা কীভাবে তৈরি করেন? প্রথমে মাথার ভেতরে লেখাটি তৈরি করেন নাকি সরাসরি লিখতে বসে যান?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আসলে লিখতে বসার আগে মাথার ভেতরে সেই লেখার একটা বীজতলা তৈরি করতে হয়। মাথায় যদি লেখাটির একটা রূপরেখা ফুটে না উঠে তবে তা কাগজে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া কঠিন। মাথার বীজতলা ভালোভাবে তৈরি হলে লেখাটি আর হারিয়ে যায় না কিংবা লিখতে বসে বেগ পেতে হয় না। মনে করেন, আপনি ইলিশ নিয়ে লিখতে বসলেন। কিন্তু মাথায় যদি ইলিশকেন্দ্রিক বিষয়গুলো না গোছান তবে লিখতে গেলে পরের বিষয় আগে আসবে আর আগের বিষয় পরে চলে যাবে। ফলে তা যেমন পারম্পর্যতা ও ধারাবাহিকতা হারাবে তেমনি বিরক্তিও তৈরি করবে।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : আপনি মূলত কেন লিখেন? আপনার লেখার প্রধান উপজীব্য বিষয় কী কী?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আমি আসলে মনের ভেতরে এক ধরনের তাড়না অনুভব করি। সেই তাড়না হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে তাই লিখতে হয়। মনে যখন কোনো চিন্তার উদ্রেক হয় তখন তা ধরে রাখতে লিখি। সময়ের কিংবা সমাজের কোনো অসংগতিতে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবেও আমি লেখার দ্বারস্থ হই। আমার লেখার প্রধান উপজীব্য বিষয় হচ্ছে মানুষের জীবনকেন্দ্রিক সমস্যা ও তার বিস্তার এবং পরিণাম।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় আপনি কাদের দ্বারা প্রভাবিত?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় আসলে কারো প্রভাব বলতে গেলে আমার ওপর পড়েনি বা তৈরি হয়নি। আমি মূলত তাড়না ও তাগিদ থেকে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়েছি। কাউকে অনুসরণ করায় আমার যেমন মন নেই তেমনি কারও প্রভাবকেও আমি মানতে নারাজ। আমি আপন চিন্তার অনুসারী। পদ্য লেখায় শুরুতে সুকান্ত ও পরে জীবনানন্দ তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল। গদ্য লেখায় শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবি’ উপন্যাস এবং ‘দত্তা’ উপন্যাস আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল বলা যায়। শংকরের ‘ছেলেবেলার বন্ধু‘ উপন্যাসটিও আমাকে লেখার ব্যাপারে তাড়িত করেছিল।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : সমকালীন সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : সমকালীন সাহিত্য চর্চা আসলে গোষ্ঠীবাদিতা আর পদক- প্রলোভনে আটকে আছে। বলয়ভিত্তিক সাহিত্য চর্চার কারণে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য সাহিত্যিক উঠে আসছে না। তরুণদের অতিরিক্ত সুযোগ দেওয়ার প্রবণতাও লক্ষণীয়। এতে তৈরি হওয়ার আগেই তরুণরা প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে যোগ্যতার অধিক মাত্রায়। লেখার মানের চেয়ে লেখকের নাম ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ লেখা প্রকাশের মুখ্য অনুষঙ্গরূপে বিবেচিত হচ্ছে। সম্পাদনার নামে আসলে সংকলক হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। যোগ্য সম্পাদক নেই, কিন্তু প্রকাশনা থেমে নেই। ফেসবুকের কল্যাণে অপরিণত লেখা পাঠকের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে রুগ্ন সাহিত্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে পাঠকের রুচিবোধ। পাঠক তখন প্রকৃত সাহিত্যিককে সহজে নিতে পারে না। কারণ যে শিশু সারাদিন দুধভাত খেতে অভ্যস্ত সে শিশু ঝোলভাত খেতে গেলে হাজারবার উহ্-আহ্ নিয়ে অনর্থ ঘটাবে। সমকালীন বিশ্বসাহিত্যে ডায়াস্পোরা সাহিত্যিকদের কদর বেড়েছে। মাতৃভাষা না হলেও কেবলমাত্র প্রচার ও জনি প্রয়তা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় ইংরেজিতে লেখার প্রবণতা বেড়েছে।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : একজন সাহিত্যিকের সামাজিক বিশেষ কী কী দায়-দায়িত্ব রয়েছে?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : একজন সাহিত্যিকের সামাজিক দায়-দায়িত্ব বেশি। জনগণের কণ্ঠকে নিজের লেখায় ধারণ করাটা একজন সাহিত্যিকের বিশেষ দায়িত্ব। এক্ষেত্রে সাহিত্যিকের দায় হলো নিজের প্রাজ্ঞতা দিয়ে এ ধরনের বিষয়কে রুখে দেওয়া। যেমন ধরেন, বাঙালির মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা অত্যন্ত ক্ষীণ। কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে ব্যবহার করে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার প্রবণতা বাঙালির অধিক। এক্ষেত্রে লেখকের বিশেষ দায়-দায়িত্ব হলো মানুষকে বিজ্ঞানের যুক্তি ও তত্ত্বকে মেনে নিতে ও মানিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করা। আবার নিজের লেখার মাধ্যমে পাঠকের মধ্যে দেশে প্রম জাগ্রত করাটাও লেখকের দায়িত্ব।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে কোনো আপোষ নেই। আমাদের শেকড় ও অভ্যুদয়কে জানতে হলে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন হলো মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়। বঙ্গবন্ধু হলেন আমাদের মহানায়ক ও জাতির পিতা। কাজেই দেশকে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে সঠিক ইতিহাসকে ধারণ ও লালনের কোনো বিকল্প নেই।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : আপনার প্রথম বই কবে প্রকাশিত হয়? বইয়ের উপজীব্য বিষয় কী ছিলো?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় দুহাজার পাঁচ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বইটির নাম, ‘তোমার নিবীতে অন্য কেউ।’ এটি একটি তিনফর্মার কাব্যগ্রন্থ। ে প্রম ও বিরহ, দ্রোহ ও দ্বন্দ্ব এই কাব্যগ্রন্থের মূল উপজীব্য।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : এখন পর্যন্ত আপনার অনেক বই বের হয়েছে। এর মধ্যে সেরা কোন্টি?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : আমার কাছে প্রতিটি বইই সেরা। আমার এক একটা বই এক এক স্বাদের। তবে বিশেষভাবে বলতে হলে আমি তিনটে বইয়ের কথা বলবো, যেগুলো আমার কাছে ভিন্নমাত্রার আনন্দদায়ক। একটি হলো ‘ইলিশের বাড়ি’ নামে ছড়াগ্রন্থ। এটিতে ইলিশের জীবনবিষয়ক সকল কিছুই ছড়ার ছন্দে লিপিবদ্ধ আছে। এটি একটি গবেষণাধর্মী ইলিশি ছড়াগ্রন্থ। এতে ইলিশের প্রকারভেদ, জন্ম, রেসিপি ইত্যাদি সব ধরনের তথ্যকে ছড়ায় ছন্দোবদ্ধ করা হয়েছে।
এই গ্রন্থের দুটো ছড়া আমাদের মেঘনাপাড়ের মাটি ও মানুষের নেত্রী ডাঃ দীপু মনি আপা নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই ছড়াগ্রন্থে আমিই প্রথম ডিমওয়ালা মা ইলিশকে সন্তান প্রসবের জন্যে বাপের বাড়ি আসা গর্ভবতী মেয়ের সাথে তুলনা করেছি। আমিই প্রথম জাটকা ইলিশকে চাঁদপুরের নাতি আখ্যা দিয়েছি।
আরেকটি গ্রন্থ হলো ‘জনকের অমৃত জীবন’। এটি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রামের কাহিনীকাব্য। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রচিত হলেও বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে কাহিনী কাব্য আর নেই। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত এই কাব্যগ্রন্থটি সংক্ষেপে ও যথাযথভাবে বঙ্গবন্ধুকে আগামী প্রজন্মের মধ্যে জানিয়ে দিবে। অন্য আরেকটি গ্রন্থ হলো প্রজ্ঞা- প্রসূন। এটি একটি প্রবন্ধ সংকলন। প্রবন্ধগুলো যেমন মুক্তচিন্তাকে ধারণ করে তেমনি অনেক বিরল তথ্যকেও জানিয়ে দেয়।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনের প্রাপ্তিগুলো কী কী?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনের প্রাপ্তি নেহায়েতই খারাপ নয়। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পাঠকের ভালোবাসা ও মনোযোগ। বাংলাদেশের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির মতো একজন বিজ্ঞ ও বিদুষী মানুষের স্নেহ, স্বীকৃতি ও প্রীতি প্রাপ্তির পেছনে সাহিত্য-সংস্কৃতির অবদান অনস্বীকার্য। আমি ঊনিশ্শো ঊননব্বই সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় উপস্থিত রচনা লেখায় প্রথম হয়ে তৎকালীন ফার্স্ট লেডির কাছ থেকে মেডেল গ্রহণ করি। এরপর দুহাজার নয় সালে দ্য ডেইলি স্টার ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আয়োজনে সেলিব্রেটিং লাইফ শিরোনামে বাংলা গানের লিরিক্স প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করি। দুহাজার একুশ সালের চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা দুহাজার তেইশ সালে আমাকে অর্পণ করা হয়। লোক সংস্কৃতি গবেষক/সৃজনশীল সংগঠক হিসেকে আমাকে এই সম্মাননা অর্পণ করেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি মহোদয়। এছাড়াও আমি বিভিন্ন সময়ে চতুরঙ্গ সম্মাননা, বিশ্ববঙ্গ সম্মাননা, ইনার হুইল ক্লাব সব্যসাচী লেখক সম্মাননা, ছায়াবাণী লেখক সম্মাননা ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছি। মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালীন বিতর্কে শ্রেষ্ঠ বক্তা ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনের অপ্রাপ্তি আছে?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : না, তেমন কোনো অ প্রাপ্তি নেই। তবে মফস্বলে জীবন যাপনের কারণে প্রচার- প্রসারের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পাঠকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : নবীন লেখকদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী কী?
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : নবীন লেখকদের উদ্দেশ্য বলতে হয়, প্রাপ্তিকে মাথায় রেখে সাহিত্য চর্চা করা ঠিক হবে না। প্রকৃত সাহিত্য চর্চা করলে প্রাপ্তি নিজে এসে ধরা দিবে। সাহিত্য চর্চায় যশ প্রার্থীকে অধ্যবসায়ী যেমন হতে হবে তেমনি নতুন পথ সৃষ্টি করতে হবে। নতুন পথের পথিকই হবেন আগামী দিনের কাঙ্ক্ষিত সাহিত্যিক।