বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

অসমাপ্ত দ্বিতীয় দশকের অপূর্ণ বাংলা কবিতা জ্যোতি ও জঞ্জালের অপুষ্ট প্রজ্বালন
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

কালের আদি নেই, অন্ত নেই। কাল অসীম, কাল অনন্ত। কালের প্রবহমানতার নিরিখে শতক বা সহস্রাব্দের কোনো বিশেষত্ব নেই। দশকতো কোন র্ছা! মানুষের জীবন দিয়ে কালের তুলনা করলে মনে হয় কাল বুঝি স্থির। কাল বসে আছে চুপটি করে কিংবা তার বর্ণমালায়। কবির কবিতা দিয়ে কালকে ধরতে চেয়ে শব্দের জালে ফাঁদ পাতলে মনে হয় কালেরা অনেক প্রাণ। কালের অনেক গুটি। কবির কবিতা কালের সেই অগণন গুটির কয়েকটা যেন। আদতে কাল, কবিতা বা জীবনের আয়ু সময় দিয়ে পরিমাপ্য নয়। অসীম, অনন্ত কালের কান্তারে জীবন বা কবিতা সময়ের কাছে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়। কেবল মরণশীল, জন্ম-মৃত্যুর সীমার মানুষের কাছে তাকে দশকের ফ্রেমে বিবর্ধিত করে দেখা।

কবিতার ক্ষেত্রে দশকের ফ্রেমে আটকানো আজ যেনো ব্যাধির রূপ নিচ্ছে ক্রমশ। সমস্ত সৃজনশীলতাকে দশকের বিভাজনে কী প্রমাণ করার প্রয়াস তা আজও পরিষ্কার নয়। দশকের বিভক্তিতে কবিতা কি অধিক শিল্প সম্পন্ন হয় নাকি কবিতার বিশে¬ষণ সহজ হয় তা বোধগম্য নয়। দশক নিজেই কি কবিতার কোনো বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, নাকি নির্ধারণ করে দেয়? দশকের কবিতা বলতে কি তাতে সময়ের বৈশিষ্ট্য উৎকীর্ণ বা বিকশিত থাকে? কালোত্তীর্ণ কবিতা দশকের পরোয়া করে না। ভালো কবিতা সর্বদাই সমকালীন আবেদনপুষ্ট। তারপরেও দশকের বিভাজনে যদি কবিতার চর্চা বাড়ে, কবিতায় রসের ধারার স্রোত বাড়ে তবে দশকে দশানন হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। আদতে দশক বিভাজনে কবিতার চর্চা বাড়ছে কি? কিংবা কবিতা কি এতোটাই রসান্বিত হতে পেরেছে- যতটা দশক বিভাজন নিয়ে মাতামাতি? শেষ তারকা কবি অকাল প্রয়াত রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল¬াহ। তার পরে এমন কোনো কবিকে আদৌ আমরা পেয়েছি কি যার কবিতা একেবারে আপামর পাঠকের কণ্ঠে কণ্ঠে? দশক বিভাজন যদি কবিতাকে জনপ্রিয়ই করতে না পারলো তবে তাতে সময় ব্যয়ের বিলাসিতা আদৌ কেন?

দশক বিভাজন নিয়ে এমনিতেও আছে বিভ্রান্তি। পশ্চিম বাংলায় যেটা প্রথম দশক, বাংলাদেশে তা শূন্য দশক। তাহলে শূন্যকে জায়গা ছাড়তে গিয়ে প্রথমকে বঞ্চিত করা কেন? শূন্যের কি আদৌ কোনো দশক থাকতে পারে? আবার দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত বজায় থাকে অঙ্কের নামে দশক। দুই অঙ্কের নামে দ্বিতীয় দশক। কিন্তু তিনে গিয়ে তা আর তৃতীয় দশক থাকছে না। হয়ে যাচ্ছে বোদ্ধাদের ভাষায় তিরিশের দশক। তেমনিভাবে চলি¬শের দশক, পঞ্চাশের দশক, ষাটের দশক, সত্তরের দশক, আশির দশক, নব্বইয়ের দশক ইত্যাদি। দশক মানেই এক অঙ্কের নামের সাথে সাযুজ্য রেখে পরিচিত হওয়ার কথা। তা না হয়ে দশক হয়ে যাচ্ছে দুই অঙ্কের নামের পরিচয়। এভাবে দশকের পরিচয়ে বিভিন্নতা আসলেও আমাদের কাছে বিস্ময় ঠেকে বৈকি।

একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। দশকের পেটে আরো বছর চারেক জন্ম যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এরই মধ্যে অনেকের কাছে দ্বিতীয় দশকের কবিতাকে মলাটবন্দী করে সংকলনের প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। এটা অনেকটাই শীত না আসতেই আগাম শীতের সব্জিকে বাজারে নিয়ে আসা। যদি ভালো দাম মিলে-- বিষয়খানা এমনই হয়তো বা। অর্থাৎ দশক না ফুরাতেই গরম গরম কবিতার কচুরি আর আলুর ডালনা পাঠকের পাতে পরিবেশন। এই প্রয়াসে বাণিজ্যের বিষয়টি অনুল্লে¬খিত থাকলেও সংকলনটি অপূর্ণ থেকে যায়। অবশিষ্ট চারটি বছরে হয়তো এমন সব কালজয়ী কবিতার জন্ম হবে, যে কারণে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকটি বাংলা কবিতার ইতিহাসে ধ্রুবতারা হয়ে গেঁথে যেতে পারে। যদিও শিরোনামে সংকলনগুলো দুষ্ট নয়। এমনই একটি সংকলন হাতে পড়েছে, যার নাম অখণ্ড বাংলার দ্বিতীয় দশকের কবিতা। সম্পাদক নিজেই একজন দ্বিতীয় দশকের কবি। সংকলনটি হাতে আসায় একসাথে অনেক কবির অনেক কবিতা পড়ার সুবর্ণ সুযোগ মিলেছে। তারই আলোকে দ্বিতীয় দশকের বাংলাদেশের কবিতা নিয়ে কিছু বলার পীড়ন অনুভব করছি বেশ কিছু দিন থেকেই। বইটি পড়তে পড়তে এখনও পর্যন্ত বাংলা কবিতায় অনতিক্রম্য কবি জীবনানন্দ দাসকে মনে পড়ে যায়--সবাই কবি নয়। কেউ কেউ কবি। কিংবা কবি রফিক আজাদের স্বৈরাচারী ক্ষমতালোভীকে উদ্দেশ্য করে বলা খেদোক্তির চরণটিও মনে পড়ে যায়। সঙ্গত কারণেই সংকলনের সকল শব্দ শিল্পীকে কবি বলার সময় এখনও উপনীত হয়েছে বলে মনে হয়নি। গভীর রাতে নিঃশব্দে সময়কে জাগিয়ে রেখে কবিতা পড়তে পড়তে ক্রমশ মনে হয়েছে আমি মায়াবী কুহকিনীর গোলক ধাঁধায় ঘুরছি তো ঘুরছি। বের হওয়ার কোনো পথ তৈরি করতে পারছি না। অধিকাংশ কবিতাই এমন যার সবক’টা শব্দকে অর্থে ও প্রয়োগে জানা-বোঝা গেলেও কবিতাকে ধরতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এবং শেষে এমনও হয়েছে- কবিতায় ঢুকেছি কেবল, বের আর হতে পরিনি কিংবা কবিতা হতে বের হওয়ার পথটা করতে পারিনি। ভাবের এতো বেশি উল্ল¬ম্ফন, কথার এতোবেশি মারপ্যাঁচ, তাতে মনে হয়েছে আমি কোনো জাঁদরেল উকিল না হলে নিদেন পক্ষে মোক্তারের হাতে পড়েছি। পরাবাস্তবতা কখনো নিজেই পরাস্ত হয়েছে মাত্রা ছাড়ানোর কারণে। কোথাও কোথাও মনে হয়েছে আরোপিত। মানুষকে দ্বিবীজপত্রী পাখির সাথে তুলনা করা সমস্ত পরাবাস্তবতাকেই যেন হার মানায়। [মানুষ এক দ্বিবীজপত্রী পাখি / বিষম বিন্দু / অনন্যা মন্ডল] বিজ্ঞানে উদ্ভিদ হতে পারে দ্বিবীজপত্রী। প্রাণী নয়। আবার প্রাণী একাধারে উদ্ভিদ এবং একাধারে পাখি তাও সম্ভব নয়। কেননা উদ্ভিদের সাথে মাটির সম্পর্ক আর পাখির সাথে আকাশের। ঘোর ভেঙ্গে গেলে তখন বোধ জাগে, কবিতার নামে কতিপয় প্রলাপ বাসা বেঁধেছে দশকের দেয়ালে। একই কবির আরেক কবিতা ‘পাখিদিন’ কবিতার শেষ দুটি চরণ- ওরা কে অন্ধকার পড়ে,/দ্যাখো সমস্ত পাখিদিন আকাশে খরিদ হয়ে গেছে। শেষ চরণে এসে চোখ ছানাবড়া করে কপালে না তুলে উপায় নেই- জগাখিচুড়ি এক নতুন ভাষারীতির উদ্ভব দেখে। আকাশকে ক্রেতা ধরলে আমরা পেতাম- আকাশ খরিদ করে ফেলেছে। আবার আকাশকে বিচরণক্ষেত্র ধরলে আমাদের বলতে হয়- আকাশে বিক্রি হয়ে গেছে। তখন বুঝেই নিতে হয় ভাষার দুর্বলতা যার আছে। বাক্যের গঠনে যার এখনো অপরিপক্কতা আছে তাকে আর যাই হোক কবি বলা চলে না। অতিমাত্রায় উত্তরাধুনিকতা আর পরাবাস্তবতাবোধের চিন্তায় কবিতা নিয়ে মকশো করতে করতে এক সময় কবিতা আর কবিতা থাকে না। হয়ে উঠে মস্করার বিষয়। বিশেষত একক পংক্তির কবিতায় কবি অব্যয় অনিন্দ্য যখন পাসওয়ার্ড নামক কবিতায় বলেন, “ঈশ্বরের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে সব আপেলে পাসওয়ার্ড দিয়ে দাও।” আদতে কবিতার নামে এইসব অপচর্চা বন্ধ করতেই হবে একসময়।

দ্বিতীয় দশকের অধিকাংশ কবিতাই গন্তব্যহীন, অস্পষ্ট এবং নি®প্রাণ। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন- কবিতা বলে না, কবিতা বাজে। কিন্তু সে রকম বেজে ওঠার কবিতার আকাল যেন পড়েছে অখণ্ড দ্বিতীয় দশকের অপূর্ণ সংকলনে। এইরকম একটি গন্তব্যহীন অস্পষ্ট এবং নি®প্রাণ শব্দমালার সমাহার আমরা পাই সুলতান স্যান্নাল-এর ‘গ্রেট ডার্কনেস’-এ, যেখানে তিনি বলছেন- ইনলাইটেন ঘাতিকা নেচে নেচে থেমে যায় ইজম/চলনে, এই বনোজাত ইনসমনিয়ার রাতে আঁধারে/আলপনা আঁকে এক উদ্যান পালক নিরালায়। শিল্পীর ভাষ্যে অনিবার্য বিন্যস্ত সুশৃঙ্খল শব্দমালাই কবিতা। কিন্তু বস্তুত উপর্যুক্ত উদাহরণে কেবল অহেতুক শব্দ আমদানির কর্মটাই চোখে পড়ে, কোনো শিল্পের ছবি ফুটে উঠে না।

দ্বিতীয় দশকের কবিদের মধ্যে কবিতার প্রাঞ্জলতা এড়িয়ে বড়ো বড়ো টানা গদ্যে গদ্য কবিতার প্রতি প্রলুব্ধ হতে দেখা গেছে, যাদের অধিকাংশই আদতে গদ্য নাকি কবিতা তা বুঝে উঠতে ব্যর্থ হতে হয়। এটা সময়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাছে নিজের পরাজয় নাকি শিল্প নির্মাণের অতি সচেতন প্রয়াস তা নির্দ্বিধায় বলা যায় না। তানভীর পিয়াল-এর ‘তিলক কামোদ’, নুসরাত নুসিন-এর ‘বিন্দুবিসর্গ’, হিজল জোবায়ের-এর ‘এই শাস্ত্র নীতি বিরুদ্ধ’ কবিতাগুলো দীর্ঘ ও টানা গদ্যের বিধায় কবিতার কাছে তাদের দূরত্ব বেড়েছে অনতিক্রম্য হয়ে।

কবিতায় মগ্ন হয়ে এই কথা বলা যায়, দ্বিতীয় দশক বোধ হয় বিমূর্তায়নের দশক, একক পংক্তির কবিতা নির্মাণের দশক এবং কবিতাকে কবিতা হতে টেনে অস্পষ্ট করণের দশক। কেননা- ওজিয়াস মানিকের ‘নর্তকী’, সুমন ইউসুফের ‘বমগার্টেন মহাজনেষু’ কবিতাগুলো এ রকম ধন্দ তৈরির কবিতা, যাতে পাঠক পাঠ শেষে কুয়াশাই দেখে কেবল।

বাংলা কবিতায় এখনও জীবনানন্দ অনতিক্রম্য, তা আবারও দ্বিতীয় দশকের কবিদের কবিতায় প্রবাদ হয়ে ফুটলো। সত্যিকার অর্থেই জীবনানন্দ আরো কতদিন যে অনতিক্রম্য হয়ে থাকবেন তা বলা মুশকিল। যত সহজে নজরুল রবীন্দ্রনাথ হতে ছুটেছেন বা মধ্যতিরিশের কবি শামসুর রাহমান তিরিশের জীবনানন্দে বুঁদ হয়েও তাকে দূরে রাখতে পেরেছেন, তেমনি দ্বিতীয় দশকের কবিরা এখনও পেরে উঠেছেন বলে মনে হয়নি। তারই আলামত মেলে ‘সূর্যের গা চুইয়ে টুপটাপ সন্ধ্যা ঝরে পড়ে’ (বিস্ময় চিহ্নের মতো), ‘সাথে যদি তারা উড়তে শেখায়’, ‘দেয় ডানা ধার’, ‘ধার দেব ডানা’ ইত্যাদি কবিতার পংক্তিতে। এমনকি বনলতা সেন যে এখনও ভিন্ন নামে বেঁচে আছে কবিতায় তা টের পাই লেবিসনস্কুর ‘মাছসেপাই’ কবিতায়- ‘তুমিও ফিরে আসো দেবদাসী সেন’- চরণের মধ্যে। কবি ডাল্টন সৌভাত হীরা ‘সৃজা’ কবিতায় জীবনানন্দকে ছাড়াতে গিয়ে ভাষাকে যে রকম টকিয়ে তুলেছেন তাতে বুঝা যায়, সংকলনটি নির্মোহ হয়নি বরং পরিচিতের মধ্যেই আবদ্ধ থেকেছে। (ধর টিউশনি সেরে বাড়ি আসতেই তুমি/সৃজা, টিউশনি সেরে ধর খুঁজতেছ গাড়ি/ রোডে ড্রাইভারি করা কিছু উৎসাহী গাড়ি/নিতে চায় তোমারে নিকটে; ঠিকমতো পাশে। দ্বিতীয় দশকের কবির চোখে মানুষ কালের অধিক বিবর্তনবাদী। তাই হয়তো তার হাতে কবিতার বিবর্তন হতে হতে এক সময় নান্দনিকতা ছেড়ে কবিতা হয়ে উঠে ফর্দ এবং ফিরিস্তি। কেননা ‘সুন্দরবন নয়, সুন্দর শশ্মান’ আমাদের ফিরিস্তি দেয়-

আপনারা কী চান?

১২০ প্রজাতির মাছ!

২৭০ প্রজাতির পাখি!

৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী!

৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ!

আপনারা কী চান?

২২৫ প্রজাতির শুশুক!

৪৫১ টি ইরাবতী ডলফিন!

কখনো কখনো চাওয়া-পাওয়ার ফর্দ হয়ে কবিতারা বলে উঠে- ‘১। একটি সিলিং ফ্যান ২। একটি তালা ৩। একটি চাবি দিয়ে চলে যাওয়া। বিনিময়ে নিয়ে যাও লাল গালিচা’। কবিতা কি আর তখন কবিতা থাকে?

দ্বিতীয় দশকের কবি হয়ে যারা লিখছেন তাদের অনেকেরই বয়স কুড়ি বছরের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। অর্থাৎ এই বয়সে পরিণতির চেয়ে আবেগের বাহুল্যটা বেশি তৈরি হয়। জীবন ও জগৎকে দেখার গভীর দৃষ্টি এখনও তৈরি হয়নি। তারপরও তাদের কবিতার শিরোনামগুলো অনেক সুন্দর ও নান্দনিক। যেমন : বিরুদ্ধ হরফের সুর, জলমগ্ন পাথরের পাশে, নিপাতনে সিদ্ধ সঙ্গীত, চাঁদ বহুকাল চাঁদ থাকার পর, অশ্রু ও অনিদ্রার গাথা ইত্যাদি। কবিদের নাম দেখে মনে হয় অধিকাংশ নামই ছদ্ম নাম বা কবি-নাম। যেমন : কাল্পুরুষ, গিরীশ গৈরিক, সাম্য রাইয়ান, সৌম্য সালেক ইত্যাদি।

কবিতা সতত প্রবহমান নদীর মতো। কখনো জোয়ারের জলে কল্লে¬াল নিয়ে ছোটে, কখনও ভাটার টানে শীর্ণকায়া থাকে। কখনো দীর্ঘ সময় ধরে সরল ঋজু ধারায় চলে আর কখনো বাঁক নেয়। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে কবিতা ধারণ করে পরিবেশবাদী চিন্তা। কেননা জলবায়ু বিপর্যয় এখন বড় ঝুঁকি। এ কারণেই কবিও তার কবিতায় সমকালীনতা ধারণ করে বলেন, ‘গাছ বেহেশতে যাবে বিনা হিসাবে’ কিংবা আর একটু বিস্তারিত ভাবে ‘বীজতলা থেকে চুরি গেছে গ্যালনের সব অক্সিজেন’। দ্বিতীয় দশকের কবিতায় এক মুখ্য বিষয় হয়ে উঠে সামাজিক অস্থিরতা, মাদক অনিবার্য ভাবেই গ্রাস করে কবিতাকেও। তাই কবিও আক্ষেপে বলতে ছাড়েন না- ‘সব্জি আবাদের বদলে ইয়াবার আবাদ যখন লাভজনক/ তখন হাটে যাবার কথা মনে হলেই/ কৃষক-কৃষাণীর মন কেঁদে উঠে।

মানবজীবনের সবচেয়ে বড় ফসল তার সন্তানেরা। কিন্তু তরুণ টগবগে সন্তান যখন নেশার ঘোরে মাতাল হয়ে মারমুখী হয় তখন মনে হয় সমস্ত ফসল বোধ হয় চিটা ধানে ভরে গেছে। সেই আকুতিও আমরা দেখতে পাই দ্বিতীয় দশকের কবিতায়-কিষাণীর কুলা হতে/ ধান থেকে উড়িয়ে দিতে দেখেছি চিটা/চিটার মর্মমূলে কোন্ সে ব্যথা কার দোষে/ মাটিতে লুটালে মন টের পাবে কি? সমাজ এমন চিটা ফসলে নয়, আদর্শ তারুণ্যে ভরে উঠুক, ভরে যাক। যাপিত জীবনের কুটিলতা এবং দগ্ধ আর্তনাদ দ্বিতীয় দশকের কবিতায় ধরা দেয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়। কবিতায় এখন খোঁজ পড়ে সরলের সংজ্ঞার। কবিই বলেন দৃঢ় উচ্চারণে-....... ও সরল কীভাবে বুঝব তুমি কে? তবে কি সুপারির খোলে চড়ে ফিরে যেতে হবে শৈশবে? চিত্রকল্প নির্মাণে দ্বিতীয় দশকের কবিরা বেশ পরিশ্রমী এবং সফল বলে মনে হয়। কেননা আমরা বলতে শুনি-

উঠোনের জামরুল গাছটি নির্জনতা খোঁজে।

.................................................

জামরুল গাছটি নির্জনতা গায়ে মাখে।

............................................

জামরুল গাছটি নির্জনতা শোনে। (জামরুল গাছ/ রিকি দাশ)

আমরা আরো মুগ্ধ হই যখন ‘ডিটেকটিভ চোখ’ নিয়ে কবি বলেন,

যে চোখে বন্দী পৃথিবী

....................................

সে চোখ কাজল পরেছে অন্য চোখের পাড়ায়.......।

মানবজীবনের টানাপোড়েনও দ্বিতীয় দশকের কবিদের ছুঁয়ে যায়, ব্যথিত করে। তখন তারা হয়তো আর্তনাদের স্বরে বলে উঠে, কী এক রক্তাক্ত কাঁচি ছেঁটে দেয় মাঠ ও কবিতার উন্মত্ত স্বর। কবির মনে ও মননে যাপিত জীবনের বেদনায় ক্ষরণের নদী ছোটে। পাওয়া না পাওয়ার জীর্ণতায় ক্লিষ্ট হয়ে কবিও নিঃসঙ্গ হয়ে উঠে দ্বিতীয় দশকে। যদিও তাদের অনেকেই এখনও সংসারের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হননি। তবুও কবির অন্তর দিয়ে তারা উপলব্ধি করেন প্রত্যেকটি বেদনা। নর-নারীর সম্পর্কের ভিতরে বিশ্বাসের কুঞ্চন দেখে নবীন কবিকেও বলতে হয় খেদভরে ‘পরাগে বিশ্বাস না থাকলে ফুলকে প্ল¬াস্টিক মনে হয় (তাসনুভা অরিন)’। তবুও দিন শেষে কবির আশ্রয় থাকে কবিতা। কবিতার শরণ নিয়ে কবিকে বলতেই হয়--কে কবে কান্না গুণে রাখে কবিতার কাছে? দ্বিতীয় দশকের কবিরা কবিতাকে যেমন খুব বেশি করে গদ্যের নিকটে নিয়ে যাচ্ছেন তেমনি তাদের কবিতায় ভিন্ন এক প্রবণতাও লক্ষ্যণীয়। একই শিরোনামে এক থেকে একাধিক অঙ্ক দিয়ে দ্বিপদী, ত্রিপদী বা এক চরণী রচনার প্রবৃত্তি তারা সজ্ঞানে চর্চা করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ভালো যেমন- একের ভিতরে অনেক কবিতার রস মিলেছে, তেমনি দু-একটা দুর্বল হলে তা পুরো শিরোনামভুক্ত কবিতার গায়েও বর্তায়। রুহুচণ্ডালের বায়স্কোপ/বিধান সাহা এবং আরো অনেকের কবিতার নির্মাণশৈলি এমনই। অনেক কবিই আবার মধ্যযুগের চৌপদী সমিল পদ্য বিন্যাসে কবিতাও লিখেছেন দ্বিতীয় দশকে এসে। পরিমানুষ/আল ইমরান সিদ্দিকী কবিতায় আমরা দেখি-

পরিমানুষ, পরিমানুষ

কিসে ঢাকিস একাকিত্ব? তোর, নিপল ঘিরে কালো বৃত্ত

রাত্রি চলে যায়!

.....................

অন্ধকারে পুমাবেড়াল আঁচড়ে তুলরে তরল ও লাল

আসার পিছে যাওয়া রাখি ভূত-ভবিষ্যৎ নিংড়ে ডাকি

আয়।

একই কবিকে আমরা ‘প্রাণায়াম রিপ্রাইজ বা উলেন সূর্য’

শিরোনামে নিরেট গদ্য কবিতার কবি হিসেবেও পাই।

দ্বিতীয় দশকের কবিদের মধ্যেও আমরা প্রাচীন কিছু শব্দকে প্রাচীনভাবেই ব্যবহার করতে দেখি। তখন মনে ফিরে ফিরে আসে পোশাকের ফ্যাশনের কথা। বেলবটম গিয়ে আবার তা পালাজ্জো নামে ফিরে আসে আধুনিক নারীদের পরণে। ঠিক এমন এক কবিতার দেখা আমরা পাই কবি ইমেল নাইমণ্ডএর ‘পাখির চোখে’ কবিতায়। কবি যখন বলেন- দৈনিক পাললিক সভ্যতা আকার নিমিত্তে যে সকল/কল্পনাপ্রসূত অনুমানকে সম্ভাব্যতার নিরিখে সাজাই, তখন আমরা বিভ্রান্ত হই। কবিতার দশক তবে কি ধীরে ধীরে পুনরাবর্তী হয়? ঠিক একই কবি আবার ‘শিলালিপিতে অস্পষ্ট নাম’ এবং ‘বিভ্রমের আলাপন’ শিরোনামে দুটি দীর্ঘ ঠাঁট গদ্যে কবিতা উপহার দেন তারও আগে। তখন বুঝে নিতে হয়, কবি জেনেশুনেই পিছনে তাকান, পিছনে ছুটে যেতে চান যেখানে কবিতার মধুভা- অমৃত হয়ে হাতছানি দেয় কবির মননে।

পৃথিবীর ইতিহাস বিপ্লবের ইতিহাস। কবিতার ইতিহাসও বিপ্ল¬বের ইতিহাস। বিপ্ল¬বের মাধ্যমে যেমন পৃথিবী পেয়েছে তার সভ্যরূপ তেমনি কবিতাও বিপ্ল¬বের ধারায় অবগাহিত হয়ে চর্যাপদের সহজিয়া চর্যা হতে হয়ে উঠেছে আজকের উত্তরাধুনিক কবিতা। বিপ্লব তাই কবিদের এবং কবিতার এক অনন্য প্রিয় বিষয়। দ্বিতীয় দশকের কবিরাও বিপ্ল¬ব হতে দূরে নয়। তাদের কবিতাতেও বিপ্লব ও বিপ্ল¬বী সোচ্চার হয়ে উঠে যখন কবিকে আমরা বলতে শুনি - তৃতীয় বিশ্বের সকল তরুণ বস্তুত বিপ্লবী। কিন্তু তাদের মাত্র একটি হাত। আর একটি পা জিম্মি। (তৃতীয় বিশ্বের কবি/ উপল বড়ুয়া)

উত্তরাধুনিক খুব বেশি কবিই আজকাল কবিতার নান্দনিক নির্মাণশৈলি নিয়ে চিন্তিত নন। আজকালকার কবি মাত্রেই আবেগবাহনে চড়ে শব্দকে ইচ্ছেমাফিক জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নিরীক্ষণের অভিলাষে। তার ফাঁকেও নান্দনিক চর্চার কবি দ্বিতীয় দশকেও আমরা পেয়ে যাই বরাত জোরে। আমরা রাহুল ঘোষ-এর কবিতা ‘ মনু-রসায়ন’-এর দেখা পাই যার নির্মিতি (৮+৬)-এর ক্ল্যাসিক্যাল আঙ্গিকে, যেখানে চতুর্দশপদী ঝংকৃত হয়ে উঠেছে ধ্রুপদী নিক্কণে। আমরা মুগ্ধ হই, নিবেশে বিমোহিত হই যখন পড়ি-

‘জলের জ্যামিতি ধরে তোমার ঠিকানা

প্রমাণিত হয়ে গেলে দুলে ওঠে মনু।

আমি বহু আগেকার বাউলের চেনা

মনিপুরী মেঘদলে রাখি কামধেনু!’

কবি প্রাণের টানে কবিতার ব্যাকরণ-বিজ্ঞানে নিবেদিত হন উত্তরাধুনিক কবিতার ছন্নছাড়া যাযাবরী উল্ল¬ম্ফনে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে। আমরা কবির কণ্ঠে পাই তারই অবসন্ন গান-

‘প্রত্নের ডাকে আজো ফিরে এলে চিঠি

আমি একা ঠিকানার পাড় ধরে হাঁটি’!

নবীন কবিদের হাতে মিথ কখনো বহুতল দালানের পরিকল্পিত ভিতের মতো কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো বা মগডালে চড়ে বসার পরেই আমদানি হয়েছে। ফলে সেই মিথের ব্যবহারে কবিতার দেহ পাণ্ডিত্যভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছে। তেমনি এক কবিতা ‘গ্যালাতিয়া’, যাতে কবিতার দেহে মিথ নয় বরং মিথের পুকুরে কবিতা পড়ে গিয়ে অক্সিজেনের জন্যে ছটফট করে চলেছে। বরং তরুণ কবি সৌম্য সালেকের ‘অশ্রু ও অনিদ্রার গাথা’ কবিতায় মিথ ও আধ্যাত্মিকতার পরিমিত ব্যবহার কবিতার দেহে আনে মূর্ছনা।

একুশ শতক নারীর ক্ষমতায়নের শতক। দেশে-বিদেশে নারী রাষ্ট্রনায়কের নেতৃত্ব এবং সমাজ নির্মাণে নারীর অপরিহার্য অবদান আমাদের সেই সত্যের মুখোমুখি করে। দ্বিতীয় দশকের কবির কবিতায় অনিবার্যভাবে নারীরা উঠে আসে চনমনে হয়ে।

মদ খেলে মেয়েরা শুধু পেয়ারা গাছের গল্প বলে।

ঘোর গ্রস্ত চোখে ভুলে যায়

চন্দ্রাবতীর অন্তহীন অপেক্ষা আর অপমান।

তারা এলাচ বনে তুমুল নৃত্যের ঘোরে

একের পর এক তীর গাঁথতে থাকে শরীরে।

রক্তাক্ত হবার মুহূর্তেও মেয়েরা ভাবে,

মিটসেফে তুলে রাখা খাবার গরম করার কথা।

(মেয়েরা/শাফিনুর শাফিন)

নারী যেমন কবিতায় তার ক্ষমতায়নের জন্যে উঠে আসে কবিদের হাতে, তেমনি নারী মা হিসেবেও দ্বিতীয় দশকের কবিতায় তার স্থান উজ্জ্বল করে রাখে। ‘আত্মখুনের স্কেচ’ শিরোনামে সৌম্য সালেকের প্রথম কাব্যগ্রন্থে একজন কালো মায়ের গল্পে মনে হয় আমার, তোমার বা তার মায়ের বেদনার কথা বলা হচ্ছে। বড়ো দীর্ঘশ্বাসের গল্প ‘কালো মায়ের গল্প’ কবিতাটি। তেমনিভাবে ‘মা’ কে নিয়ে নিখিল নওশাদ বলছেন-

‘মা আসলে নারী

কতো যে লিখেছি তার বুকে,

লিখেছে পৃথিবীও বহু’।

আজও একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে মা নারী রয়ে যায়। সমাজের চোখে মা মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। বাঙালি সামাজে আজও মা নারীর পরিচয়ে পায় স্বামীর লাঞ্ছনা কিংবা সমাজের রক্ত চক্ষুর আস্ফালনের যন্ত্রণা।

কবি রিল্কে রশীদের কবিতায় দ্বিতীয় দশকের কবিতা হয়ে উঠে দিন বা মাসের ডায়েরি কিংবা জার্নাল, যাতে বিদিত থাকে ঘটে যাওয়া সুন্দর-অসুন্দরের রোজনামচা। এরই পাশাপাশি কবি হাসিবুল আলম কবিতায় শতকিয়া বা ধারাপাতের আমদানি করে একটি গল্প নির্মাণ করেন, যা বলার জন্যে তিনি টুকরো টুকরো সেই নির্মাণকে বিশ্লেষণ করেন। এই প্রয়াসে কবিতা যতটুকু ঋদ্ধ হয় তার চেয়ে শিশুকে বর্ণমালা শিক্ষণের মতো কবিতাণ্ডবীক্ষণের প্রয়াস বেশি পরিলক্ষিত হয়। বলা বাহুল্য, কবিতার চেয়ে অঙ্কের বিভাজন রেখা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই তৈরি করে পাঠান্তে। একই কবির কবিতা ‘জার্নি টু হ্যাভেন’ সে আরেক মহাকাণ্ড। কবিতার গায়ে কেবল কতগুলো শব্দ কমা নামক বিরাম চিহ্নের আঠায় লেগে লেগে কোলাজ তৈরি করেছে, যা না হয়েছে কবিতা, না হয়েছে কোনো মুক্ত গদ্য। বরং মনে হয়েছে শিক্ষার্থীকে শব্দার্থ শিখানোর অনবদ্য প্রয়াস।

দ্বিতীয় দশকের অপূর্ণ পথ পরিক্রমায় কবিতা এখনো তার পূর্ণ অবয়ব অর্জন করেনি। খণ্ড খণ্ড করে কবিতা সম্পর্কে কিছু বলা গেলেও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়নের সময় উপনীত হয়নি। এরকম অপূর্ণ দশক নিয়ে কবিতার সংকলন স্বল্প পরিসরে অল্প সময়ে অনেক কবিও কবিতাকে হাতের মুঠোয় এনে দিলেও সংকলনভুক্ত হওয়ার কারণে অকবিতাগুলোও কবিতার বরমাল্য পেয়ে যায়।

কবিতা এক চলমান সভ্যতা, কবিতা এক অনন্ত ছায়াপথ। এই ছায়াপথের অপ্রতিম যাত্রায় কবিতা আদৌ দশকে আবদ্ধ থাকবে নাকি দশকমুক্ত হয়ে কালজয়ী হবে তা ভবিষ্যতের বিষয়। তিরিশের দশকের পঞ্চপা-বের এক মহারথী সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় ‘ছন্দ স্বাচ্ছন্দ্যই কবির অভিজ্ঞান’। কিন্তু কবিতা যতই এগিয়ে যাচ্ছে ছন্দমুক্তি তার চেয়ে তীব্র বেগে ঘটে চলেছে। শত বছরেরও আগে কবি নজরুল যেমন বলেছিলেন- ,থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, তেমনি কবিতাও যেন ছন্দের এই বদ্ধ ঘরে বদ্ধ আর থাকেনি, থাকবে না। কবিতা ছুটে যাবে ইথারে ভেসে ভেসে অনন্তে। দ্বিতীয় দশকের কবিতা দেখে এই বোধ জন্মে- আগামীর কবিতা হয়তোবা ক্রিয়াপদহীন, অব্যয়হীন হয়ে উঠবে, যাতে কেবল বিচ্ছিন্ন শব্দই কবিতার দেহে ধারণ করে কবিতা হবে শব্দস্তূপ, যার যা আকাঙ্ক্ষা সে তাই চেয়ে নেবে সেই শব্দস্তূপ থেকে। আর এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দশকের কবির ভাষাতেই বলতে হয় চূড়ান্ত কথা- কবিতা হবে ঈশ্বরের নির্জনতার ভাষা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়