সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

প্রবাসী বাঙালি শিশুদের কথা ভেবে শিক্ষকতা পেশায় আসি
অনলাইন ডেস্ক

প্রবাস মানে ব্যস্ততা। কমন এ ব্যাপারটি সবার জানা। এ ব্যস্ততার ফাঁকে জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়। কামরুন নাহার তুলি এর বাইরে নয়। বর্তমানে সময়ে নারীরা দেশ-বিদেশে সফলতার দৃষ্টান্ত বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন নিজের মেধা, শ্রমের মাধ্যমে। একজন নারী স্বামী-সংসার সামলিয়ে প্রবাসে শিশুদের বাংলা শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন এটা দেশের জন্যে অনন্য গর্ব বলাই যেতে পারে। জলকন্যা-খ্যাত ভেনিসের খুব কাছেই ত্রেভিজো সেখানেই স্বামী, সন্তানেরর নিয়ে বসবাস করছেন তুলি এবং ভালো আছেন। ২০০৭ সালে একজন গৃহিণী হিসেবে ইতালি পারি জমান কালের পরিবর্তনে সংসারের পাশাপাশি নিজের মেধাকে আরও গতিশীল রাখতে প্রবাসে শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন। খুব সম্মান আর সফলতার সাথে ত্রেভিজো বাংলা স্কুলে প্রবাসে উঠতী বয়সের ছেলে/মেয়েদের বাংলা শিক্ষা প্রদান করছেন তিনি। ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসের থেকে স্কুলটি চালু করা হয়। এখনো পর্যন্ত বেশ সুনামের সাথে স্কুলের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা তার সেজন্যে দেশ-বিদেশের সবার দোয়া প্রত্যাশা করছেন। তুলির স্বামী কামরুল হাসান রাসেল স্কুলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

কামরুন নাহার তুলির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লেখক ও সাংবাদিক জমির হোসেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

কামরুন নাহার তুলি : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা পেশায় কিভাবে এলেন?

কামরুন নাহার তুলি : ইতালি ত্রেভিজো শহরে আগে কোনো বাংলা স্কুল ছিলো না। এখানকার বাচ্চারা ইতালিয়ান ভাষায় পড়ালেখা করে। বাংলা লিখতে ও পড়তে পারতো না। তারা বাবা-মায়ের সাথেও বাসায় ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলতো বেশি। কারণ বাংলা সেখানোর কোনো স্কুল ছিলো না। এতে আমাদের মাথায় চিন্তা এলো যে একটা সময় গিয়ে হয়তো এখানকার বাচ্চাগুলো বাংলা লিখতে ও পড়তে পারবে না। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলা শিক্ষা বাচ্চাদের দেয়ার উদ্দেশ্যে ত্রেভিজো বাংলা স্কুল আমরা কয়েকজন মিলে নিজ উদ্যোগে গঠন করে শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করি। এভাবেই আমার শিক্ষকতায় আসা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হিসেবে প্রথমদিন কেমন কেটেছে?

কামরুন নাহার তুলি : শিক্ষিকা হিসেবে আমার প্রথম দিনটিতে অসম্ভব সুন্দর একটা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। এখানকার বাচ্চারা ইতালিয়ান স্কুলে পড়ে বিধায় তারা কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে বাংলায় ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারছিলো না। বাংলা লিখতে ও পড়তে পারে না। তখন আসলেই নিজেকে সেই মুহূর্তে গর্বিত মনে হয়েছিলো যে ইতালিতে একটা বাংলা স্কুল গঠন করতে পেরেছি বলেই আজ বাচ্চারা এই স্কুলে এসে আজ বাংলা শিখতে পারছে। তখন তাদের বাংলা শিখাতে পেরেও খুব আনন্দ লাগছিলো। কারণ বাংলা মায়ের ভাষা। এই বাংলা ভাষা বাচ্চাদের শিখাতে পারছি। সত্যিই একটি ভালো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ছাত্রজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।

কামরুন নাহার তুলি : আমার ছাত্রীজীবন অনেকটাই আনন্দময় কেটেছে। এসএসসি মুসলিম মডার্ন একেডেমী থেকে, এইচএসসি আদমজী ক্যান্টনম্যান্ট কলেজ থেকে এবং সমাজবিজ্ঞানে অনার্স তিতুমীর কলেজ থেকে। বিয়ের পড় স্বামীর পাঠানো ভিসায় ইতালি চলে আসার কারণে পড়ালেখা সম্পন্ন করতে পারিনি। ছাত্রীজীবনে আমার অনেক মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার মধ্যে একটি বলছি, আমি যখন এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষা দিই আদমজী ক্যান্টনম্যান্ট কলেজে আর্স থেকে। রেজাল্ট এর আগে প্রধান শিক্ষিক ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক আমার আব্বাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেন। এটা শুনে আমাতো ভয়ে শেষ। কেনো দেখা করতে বললো? আমি কি তাহলে রেজাল্ট খারাপ করেছি? অনেক ভয়ে ছিলাম না জানি আব্বাকে কি বলবে? পরে দেখা করতে গেলাম বাবাসহ। আমার বাবাকে আমার ইসলামের ইতিহাস পরীক্ষার খাতা বের করে দেখালেন। বললেন, আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন ছাত্রী দেখেনি যে কি না এতো পৃষ্ঠা নিয়েছে এবং এতো ভালো লিখেছে। ও অল্প সময়ে এতো লেখা লিখেছে যা কখনো দেখিনি। আপনার মেয়ে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে। এমন মেয়ে আপনার ঘরে জন্মেছে। শিক্ষকের কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমার বাবা আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করেছে। সেই দিনের কথা আমি কখনো ভুলবো না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাদের সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কী পার্থক্য লক্ষ্য করেন?

কামরুন নাহার তুলি : আমাদের সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কিছুটা পার্থক্যতো আছেই। যেমন আমাদের সময়ের অনেক বানান আর এখনকার বানানে মিল নেই। অনেক বানান পরবর্তন হয়েছে। অনেক উচ্চারণ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের সময়ে এতো সুযোগ-সুবিধা আমরা পাইনি কিন্তু এখন ছাত্র-ছাত্রীরা চারিদিক থেকে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি শিক্ষামন্ত্রী হলে বিশেষ যে তিনটি কাজ করতেন?

কামরুন নাহার তুলি : আমি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলে যে ৩টি কাজ করতাম তা হলো প্রথমত, আমি প্রবাসে বেড়ে উঠা বাংলাদেশী বাচ্চাদের জন্যে একটা বাংলা স্কুল গঠনের ব্যবস্থা করে দিতাম। দ্বিতীয়ত, সেই স্কুলে তাদের বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা করে দিতাম এবং তৃতীয়ত সেই স্কুলে প্রতি বছর বই বিতরণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, সুশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ব্যবস্থা করতাম। যেনো বিদেশের মাটিতে বড় হয়েও বাচ্চারা যেনো বাংলা পড়তে, বলতে ও লিখতে পারে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষার্থীদের জন্যে খেলাধুলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

কামরুন নাহার তুলি : শিক্ষার্থীদের জন্যে খেলাধুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের কিছুটা সময় খেলার সুযোগ দিলে শারীরিক মানসিক বিকাশ ঘটে। তাদের মন প্রফুল্ল থাকে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বিদ্যানিকেতনটি সম্পর্কে কিছু বলুন।

কামরুন নাহার তুলি : আমার স্কুলে বাচ্চাদের পড়াতে অনেক ভালো লাগে। নিজের কিছু জ্ঞান তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পেরে অনেক আনন্দিত। তাদের কিছু শিখাতে পারছি এর থেকে ভালো কাজ আর কি হতে পারে। স্কুলের বাচ্চারা আমাকে শিক্ষিকা হিসেবে মান্য করে, সম্মান করে এটা অনেক বড় পাওয়া। চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় ছাত্র কারা? কেনো প্রিয়?

কামরুন নাহার তুলি : স্কুলের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী আমার প্রিয়। আমার সন্তানের মতোই আমি আদর করি। তারাও আমাকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। যখন ক্লাসে ঢুকে সালাম দেয় খুব ভালো লাগে। আর ছাত্রছাত্রীরা যখন আমাকে শিক্ষক হিসেবে মান্য করে ও ভালোবাসে, তখন খুব ভালো লাগে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা জীবনের একটি আনন্দের ঘটনা বলুন।

কামরুন নাহার তুলি : শিক্ষকতা জীবনের অনেক আনন্দের ঘটনা আছে। সব বলেতো শেষ করা যাবে না। তবে একটি বলতে চাই সেটা হচ্ছে শিক্ষিকা হিসেবে ইতালির মাটিতে বাচ্চাদের বাংলা শিক্ষা দেয়ার জন্যে এবং বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার জন্যে দুবার শিক্ষিকা সম্মাননা পেয়েছি-এটাই আমার অনেক আনন্দের বিষয় ছিলো। এছাড়া স্কুলে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করি। অংকন প্রতিযোগিতা, ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ পালন করি। আমরা সবাই মিলে পিকনিকে যাই। সকল শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রী মিলে একসাথে কবিতা, গান, গল্প, কৌতুক বলে। আমরা অনেক আনন্দ করি, মজা করি। স্কুলের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের খুবই আনন্দে কাটে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়