প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ছোটবেলা থেকেই মানুষ গড়ার কারিগর অর্থাৎ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সানজিদা বেগম। তাই একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করেন। ¯œাতক পর্ব শেষ হবার পর নিজ এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিস শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ¯œাতকোত্তর শেষ হবার পর শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার প্রয়াসে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড. সম্পন্ন করেন তিনি। এম.এড. অধ্যয়নকালীন সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করাকালে স্বামীর কর্মস্থল প্রবাসে পাড়ি দেন তিনি।
সানজিদা বেগম বর্তমানে সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের শিক্ষাঙ্গন বিভাগে মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নেন জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
সানজিদা বেগম : আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা পেশায় কিভাবে এলেন?
সানজিদা বেগম : খুব সুন্দর প্রশ্ন। এর উত্তর একটু বড় করেই দিতে হবে। শিক্ষক হবো এমন একটা মানসিক প্রস্তুতি আমার ছিলো। আমার বড় দুই বোন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে শিক্ষক হওয়ার বীজ রোপিত হয়ে গিয়েছিলো। ¯œাতক পর্ব শেষ হবার পর নিজ এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিস শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। ¯œাতকোত্তর শেষ হবার পর শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার প্রয়াসে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড. সম্পন্ন করি। এম.এড. অধ্যয়নকালীন সরকারি চাকুরিতে যোগ দিই। সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করাকালে স্বামীর কর্মস্থল প্রবাসে চলে আসি। পরবর্তীতে এখানকার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিন কেমন কেটেছে?
সানজিদা বেগম : কিছুটা আবেগ, কিছুটা অস্থিরতা তো কাজ করেছেই। কিন্তু চাঁদকুড়া শিশুরা যখন আমাকে খুব আন্তরিকভাবে গ্রহণ করলো তখন খুব ভালো লেগেছে। জীবনভর পড়েছি। আর যখন নিজে পড়ালাম সেই ভালো লাগাটুকু শব্দ বা বাক্য দিয়ে বোঝানা সম্ভব কি? শিক্ষকতার মাধ্যমে মনে আনন্দ পাই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ছাত্রজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
সানজিদা বেগম : আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিলো তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে। বাবার চাকুরি সুবাদে আমরা সেখানে অবস্থান করছিলাম। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আমি ঢাকার শের-এ বাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হই এবং সেখান থেকেই কলা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করি ইডেন সরকারি কলেজ থেকে। সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বি.এড. করি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাদের সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কী প্রার্থক্য লক্ষ্য করেন?
সানজিদা বেগম : অল্প কথায় এর উত্তর দেয়া কঠিন। তবে অনেক পার্থক্যই পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে আমার চোখে ধনাত্বক এবং ঋণাত্বক উভয় ধরনের পার্থক্যই দৃষ্টিগোচর হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ: শিক্ষার্থীদের জন্যে খেলাধুলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সানজিদা বেগম : শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা যেমন শরীরকে পুষ্ট করে তেমনি মনকেও রাখে সতেজ। খেলাধুলা নিয়মানুবর্তিতাও শিক্ষা দেয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বিদ্যানিকেতনটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
সানজিদা বেগম : আমাদের বিদ্যালয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সৌদি সরকারের শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যে নির্ধারিত নীতিমালার আওতাধীন একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিভাবকদের মধ্যে থেকে সরাসরি ভোটে বা সিলকশনের মাধ্যমে গঠিত একটি পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা আছে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন এবং বাংলা কারিকুলামকে অনুসরণ করে থাকে। এখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রও রয়েছে। দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় এখানে পাবলিক পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ফলাফল আশাব্যঞ্জক। সেরা দশের মধ্যেও এই প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে কয়েবার।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় ছাত্র কারা? কেনো প্রিয়?
সানজিদা বেগম : সব শিক্ষার্থীরাই আমার কাছে প্রিয়। তবে একটু হেরফেরতো থাকেই। লেখাপড়া যাদের ধ্যান-জ্ঞান, আচার-আচরণে যারা ভদ্র এবং সহপাঠী ও শিক্ষকদের প্রতি যারা আন্তরিক তারা অবশ্যই আমার কাছে একটু বেশি প্রিয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা জীবনের একটি আনন্দের কথা বলুন।
সানজিদা বেগম : শিক্ষকতা জীবনে রয়েছে হাজার আনন্দ। কোন্টা রেখে কোন্টা বলি। তবে একদিন খুব বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম আমার প্রিয় শিক্ষার্থীটি যখন তার কাক্সিক্ষত বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করার সুখবরটি দিয়েছিলো এবং আমাকে সর্বোচ্চ সম্মানটুকু প্রদর্শন করেছিলো।