বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্কপ্রেমী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী খুবই প্রয়োজন
মোহাম্মদ হানিফ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হলো বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বর্তমানে বিতর্ক প্রতিযোগিতার কথা জানে না বা শোনে না এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক বা শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না বললেই চলে। অর্থাৎ প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম-বেশি সবাই বিতর্ক সম্পর্কে জানে।

চাঁদপুর জেলায় বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজক চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন ও চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি, যা সবার কাছে প্রসিদ্ধ। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে উক্ত প্রতিষ্ঠান দুটি সফলভাবে বিতর্ক অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আজ দেশ ও বিদেশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে বিতার্কিকরা পড়ছে এবং চাকুরি বাজারেও তারা এগিয়ে।

চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে যুগের পর যুগ। আজ চাঁদপুর কণ্ঠের বিতর্ক প্রতিযোগিতার কারণে চাঁদপুর জেলার অনেক শিক্ষার্থীই একজন ভালো মানের বিতার্কিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। চাঁদপুর জেলার প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরাই বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাঁদপুরের সুনাম বয়ে আনছে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা নিয়ে শিক্ষকের করণীয়

শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার অন্যতম কারিগর। শিক্ষক ছাড়া আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কল্পনা করা যায় না। এই শিক্ষকরাই সকল পেশার মানুষ তৈরি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোনো অনুষ্ঠানই বাস্তবায়ন করেন শিক্ষকরা। তাই একটি প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফল করার জন্যে শিক্ষকরাই মূল হাতিয়ার এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এই শিক্ষকরাই।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা নিয়ে শিক্ষকের কর্মকাণ্ড

অনেক বছর যাবত পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদেরকে তৈরি করা, অংশগ্রহণ সম্পর্কে চেতনা তৈরি করা, বাছাই করা, যাচাই করা, অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা, আন্তঃশ্রেণি বিতর্ক করা, দল গোছানো এবং সর্বশেষ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দল চূড়ান্ত করা, দলকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানো এবং হার-জিত মেনে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা--অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষক তার নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে এসব করে থাকেন।

দুঃখের বিষয়, এতো কিছু শুধু ওই শিক্ষক করলেও সহকর্মী অন্য শিক্ষকরা আন্তরিকতা দেখিয়ে বা বিতর্ক ভালোবেসে খুবই কম এগিয়ে আসেন সহযোগিতা করতে। সত্যিকার অর্থে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফল যে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া বা শ্রুতিমধুর, তা অনেকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ। সুতরাং বিতর্ক প্রতিযোগিতা নিয়ে যদি সবার আন্তরিকতা, ভালোবাসা মনে জন্মায়, তাহলেই তা মাঠে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার কতজন সহকর্মী আপনাকে সাহায্য করে, এই কথা শোনার পরপরই একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, শুধু আমিই। অথচ সবাই মিলে যদি চেষ্টা করে, তাহলে একটি দলকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এই অবস্থায় আনতে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সহ সবাই বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রতি আরও আন্তরিক হতে হবে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

প্রতি বছর যখন বিতর্ক প্রতিযোগিতার চিঠি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে, তখন অত্যন্ত আনন্দের সাথে চিঠি গ্রহণ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান চিঠি দিয়ে থাকেন। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক তার ব্যবস্থাগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে সব কিছুই প্রস্তুত করে থাকেন। এটা একটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিঃসন্দেহে আন্তরিকতা ও ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ। একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান সকল খরচ বহন করে শিক্ষার্থীদেরকে অনুষ্ঠানে পৌঁছান এবং অত্যন্ত ধৈর্য ধরে ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। সুতরাং প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভূমিকা না থাকলে কোনো ভাবেই তা সম্ভব নয়।

সমস্যা সমাধানে আমার শেষ কথা

যখন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার কথা শুনে, তারা অংশগ্রহণ করার জন্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে কিছু নিয়মনীতির কারণে সবাই সুযোগ পায় না। শত যাচাই-বাছাই করে যখন দেখি তারা বিতর্ক করতে আসে, তখন এমন এক অবস্থার সম্মুখীন হয়, যা প্রকাশ করতেও ভাবতে হয়। যাই হোক, একজন শিক্ষার্থী কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয় তা আলোকপাত করা হলো:--

বিতর্কের স্ক্রিপ্ট এমনভাবে তৈরি করে যেনো পরীক্ষার খাতা। আমার পরামর্শ : একটি কাগজকে চার ভাগ করে স্ক্রিপ্ট গোছান। কালার কলম দিয়ে স্ক্রিপ্টের নম্বর দিয়ে রাখলে ভালো হয়। তখন স্ক্রিপ্ট হাত থেকে পড়ে গেলেও সিরিয়াল নষ্ট হয় না। এতে করে বিতার্কিকরা বিচলিত হয় না। তাদের ধারাবাহিকতায় কোনো কমতি থাকে না। স্ক্রিপ্টে লেখা হবে পয়েন্টভিত্তিক। বিশ্লেষণভিত্তিক না আনলেই ভালো হয়। স্ক্রিপ্ট দেখে দেখে বলার নির্ভরতা কমাতে হবে। প্রয়োজনে একাধিকবার আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করতে হবে। কারণ “There is no shortcut way to success.” উচ্চারণের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, যাতে করে আঞ্চলিকতা না থাকে, থাকলেও যেনো পরিহার করে। অনেক শিক্ষার্থী ডায়াসে আসলে কাঁপতে থাকে। এমনকি কাঁপুনির জন্যে কথাও বলতে পারে না। তাই আমার পরামর্শ : প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় যদি একটি ডায়াসের ব্যবস্থা করা হয়, আর যদি ওই ডায়াসেই অনুশীলন করানো হয়, তাহলে অনেকাংশেই জড়তা দূর হবে। কোনো কোনো বিতার্কিকের মাইক্রোফোন ধরতে দেরি, কণ্ঠ, হাত-পা কাঁপতে দেরি হয় না। তাই আমার পরামর্শ : যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে একটি মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা করা হতো, আর যদি অনুশীলনের সময় সেই মাইক্রোফোন ব্যবহারের সুযোগ পেতো, তাহলে অনেকটাই জড়তা দূর হতো এবং মাইক্রোফোন ব্যবহার করাটাও শিখে যেতো। অনেকের সামনে কথা বলার অভ্যাস গড়ার জন্যে আমার পরামর্শ : যখনই বিতর্ক প্রতিযোগিতার চিঠি পৌঁছে, তখন থেকে যদি সকল শিক্ষার্থীকে একত্র করে বিতর্ক অনুশীলন করানো হয়, তখন তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবাই একটি ভালো ধারণা পাবে। আমার পরামর্শ : বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের যেই জড়তা আছে, তা শক্তিতে পরিণত হবে। উক্ত শেষ কথাগুলো যদি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনরা অনুসরণ করেন, তাহলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই কালক্রমে একজন জাতীয় বিতার্কিক হিসেবে পরিণত হবে। তাই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই হবে বিতর্কপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়