রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

একাকীত্ব
অনলাইন ডেস্ক

‘আমার মতো বড় একা কেউ কি আছে আর,

বিন্দু বিন্দু অশ্রু দিয়ে সিন্ধু হয় যার’

এই কবিতাটি যতবারই পড়ি না কেন মন ভরে না। প্রতিবারই মন ভিজে ওঠে অশ্রুজলে। অশ্রুজল যেন কোন বাধাই মানে না। তার গতিতেই ভয়ে যায়। তার পরের লাইনে অবশ্য রয়েছে,

দুঃখই যার চিরসাথী

নির্ঘুম কাটে রাত্রি"।

মনে হলো আমার মতোই তার মনে ভারী দুঃখ। যেন এই দুঃখ কাউকে বলার নয়। কাউকে বুঝানোর নয়। নিরবে শুধু নিজের কাছেই রেখে দেওয়া। আর নিজের একাকীত্বের সাথে বেড়ে ওঠা। না, না বেড়ে উঠা বলতে গেলে বুলেট হবে। পথ চলা বা একাকীত্বের সাথে বন্ধুত্ব করা। এই কবিতাটি লিখার সময় অনেক মানুষকে দেখেছি। এবং আমার মতোই অনেক মানুষের একাকীত্বতা অনুভব করেছিলাম। যেগুলো কোন ধন-সম্পদ দিয়ে পূরন করার নয়। তাদের মনে শুধু ব্যথা আর বেদনা, বড় বেদনা।

তাদের জীবনের ধারা গুলি যখন আমি খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি তখন আমি বুঝতে শিখেছি, একাকীত্বতার যন্ত্রণা। তাদের মনের আর্তনাদ আমার এখনো কানে বাজে। তাদের মন তাদের ঘর সব ভাঙা। ঠিক তেমনি খুব ছোট্ট একটা গল্প বলি চলুন না আপনারা ও শুনবেন। তবেই বুঝবেন একাকীত্বের সাথে বেড়ে উঠা বা পথ চলা কতটা দায়।

গল্পটা আমার খুব কাছের এক বান্ধবীকে নিয়ে। তার নাম কেয়া। তার জীবনের আগাগোড়া বেদনায় মোড়ানো। সে চাঁদপুর জেলায় নানার বাড়িতে জন্মেছিলো। জন্মের পরেই মাকে নিয়ে একাই জীবন চলা। সেই কাল থেকে নানার বাড়িতেই বেড়ে উঠা। সেখানেই আশ্রয় নিয়েছিলো। সেখান থেকেই লেখাপড়া শুরু করেছিলো। সে খুব ভালো নৃত্য করতো। জন্মের কিছু বছর পরেই মা আবার ও বিয়ে করে নেয়। তার জীবন নতুন করে সাজাতে। যাকে বিয়ে করেছিলে তিনি ছিলো একজন সমাজ সংস্কারক। মানে বিধবা মহিলাদেরকে বিবাহ দেন। তিনিও তার স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে কেয়ার মাকে বিয়ে করে নেয়। বিয়ের কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলো উনি মানুষটা ভালো না। নানান মহিলাদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। কি আর করার দ্বিতীয় বিয়ে তাই শত কষ্টের মাঝেও মেনে নেয় তাকে।

এসব কিছুই কেয়া দেখছিলো তবে কিছুই বলছিলো না। মুখ বুঝে তার মায়ের অবস্থানটা দেখছে। কি আর করার আছে কেয়ার। সেতো নিজেই ছোট। তবে যত বড় হতে লাগলো ততই যেন কষ্ট ও বাড়তে লাগলো। দিন দিন যেনো আরো চুপচাপ হতে লাগলো কেয়া। কেয়া তখন মাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে।

দেখতে লাগলো তার সৎ বাবার জঘন্য আচার-ব্যবহার। মদ খেয়ে এসে বাসায় চিৎকার চেঁচামেচি করতো। তার মাকে ধরে খুব মারধর করতো। কেয়ার মা বাসায় বাসায় কাজ করে কেয়াকে কোন রকম পড়াতো। সরকারি স্কুলে দিয়েছে যেন অন্তত পড়াশোনাটা সে করতে পারে। কিন্ত কেয়ার বাবার রোজ সকালে কেয়ার মার কাছ থেকে টাকা চাইতো টাকা না পেরেই খুব করে মারতো আর কেয়া বাধা দিতো তবে তার কপালে ও মারটা জুটে যেতো তাকেও ছাড়তো না। কেয়ার মৃত বাবাকেও ছেড়ে কথা বলতো না। যেন পশু থেকেও অদম হয়ে গিয়েছে। পশুদের মায়া করলে ও পশুরা মায়ার প্রতিদান দেয়, তবে এই লোকের ভিতরে কোন মায়া, অনুভূতি, ভালোবাসা কোনটাই ছিলো না। একদিনের কথা, সকালে ঘুম থেকে উঠেই কেয়া দেখে তার বাবা ঘুমিয়ে আছে আর মা মাটিতে পড়ে আছে। মাকে দরতেই দেখে মায়ের অবস্থা খারাপ। তাই সে বাহির থেকে ভ্যান এনে তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই ডাক্তার চেক-অ্যাপ করে বলে।

ডাক্তার : ওনাকে এভাবে কে মেরেছে?

কেয়া : বাবা (কেঁদে কেঁদে)।

ডাক্তার : কি, এমনভাবে মেরেছে কি করে?

কেয়া : আমার মায়ের কি হয়েছে ডাক্তার? মা কথা বলছে না কেন (কেঁদে কেঁদে)?

ডাক্তার : তোমার মা ঠিক হয়ে যাবে। ঔষধ দিয়েছি তাই ঘুমাচ্ছে। (মনে মনে, কি করে এত ছোট শিশুটাকে বলি তার মা যে আর নেই এই পৃথিবীতে)।

কেয়া : মা সেই সকাল থেকে ঘুমাচ্ছে। আমার সাথে কথা কেন বলছে না (কেঁদে কেঁদে)?

ডাক্তার : বলবে তো। নিশ্চয়ই বলবে। তুমি আগে বলো তোমার মায়ের এই অবস্থা কি করে হলো।

কেয়া : কালকে রাতে বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল মদ খাওয়ার জন্য। মা দেয়নি বলে মাকে খুব মেরেছে। আমি ধরেছি বলে আমাকেও মেরেছে। মাকে অনেক মারছিলো। আমি ধরেছিলাম বলে আমাকে রুমে মারার ভয় দেখিয়ে মাকে গিয়ে মুখ চেপে ধরেছিলো। তারপর আরকিছু মনে নেই আমার (কেঁদে কেঁদে)।

ডাক্তার : আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখন এই আন্টিটার সাথে থাকো। আমি তোমার মাকে ঔষধ দিয়ে আসছি।

কেয়া : আচ্ছা।

ডাক্তার : তোমার বাসাটা জানি কোথায়?

ডাক্তার সাথে সাথে ঠিকানা নিয়ে পুলিশের সাহায্যে কেয়ার বাবাকে আটক করে ফেলে। কেয়ার মাকে ও দাপন করে ফেলে। এরপর থেকে কেয়া সম্পূর্ণ একা হয়ে যায়। কেয়াকে একটা অনাথ আশ্রম নিয়ে নেয়। সেখানেই সে বড় হতে লাগলো। সেখানেই পড়াশোনা করতে লাগলো। সে সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলো। একাই নতুন জীবনের ধারা খুঁজতে লাগলো।

নিজেকে খুব একা রাখতে শুরু করলো। নিজেকে নিজের মতো করে একা একা জীবনের নতুন ধারা শুরু করতে লাগলো। সে এখন নিজের সাথেই নিজে কথা বলে। নিজের সবটুকু ডাইরীকে জানায়। কেউ কথা বলতে আসলেও কারো সাথে কথা বলে না। সবার থেকে দূরে থাকতো। প্রয়োজন ব্যতীত কারো সাথেই কথা বলতো না। এমন কি আশ্রমের ম্যামদের সাথে ও না। এভাবেই চলতে লাগলো তার জীবন।

১৮বছর হওয়ার পর সেখান থেকে সে চলে আসে। তবে তার এত বছর ও কোন ভালো বন্ধু হতে পারে নাই। এখন কলেজে পড়ে। টিউশন করে নিজের খরচ নিজেই বহন করে। কলেজ, নিজের পড়া, টিউশন করেই দিন কাটায়। তবে রোজ যেই সময় ফ্রী হয় তখনই লিখতে বসে যায়। কারোর সাথেই প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। তার তেমন কোন বন্ধু বান্ধব নেই। আমার সাথে টুকিটাকি বললেও তেমন ভাবে বলে না। মুখে কোন হাসি নেই। শুধুই বেদনার ছাপ ভেসে আসে। নাই কোন আনন্দ। মনে হয় তার থেকে দুঃখি আর কেউ নেই। তার থেকে কষ্টে আর কেউ নেই। তার মতো একাকী এ পৃথিবীতে অন্য আর একটিও মানুষ নেই। একাকীত্বের যার নিত্য দিনের সাথী। তার মতো কারো পৃথিবী এত অন্ধকার নয়।

তাই আমি তার জন্য বলবো।

আমার মতো বড় একা কেউ কি আছে আর?

বিন্দু বিন্দু অশ্রু দিয়ে সিন্ধু হয় যার,

দুঃখই যার চির সাথী

নির্ঘুম কাটে রাত্রি।

একাকীত্বের দুঃখ কষ্ট বুকে ভরা হাহাকার।

আমার মতো কার পৃথিবী জমাট অন্ধকার।

কার আকাশের তারাগুলো কালো মেঘে ঢাকা

কার জীবন চির আচল নিয়তির সব চাকা।

কেউ কি আমার মতো

বুকে নিয়ে হাজার ক্ষত।

ধুকে ধুকে করছে আজ কঠিন সময় পার।

আমার মতো চির একা কোথায় আছে আর ?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়