সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ২০:৫৬

ফরিদগঞ্জে প্রবাসী ছেলের মৃত্যু নিয়ে পরিবারে শোকের মাতম

পরিবারের দাবি, হত্যা করে লাশ রশিতে ঝোলানো হয়েছে

প্রবীর চক্রবর্তী
ফরিদগঞ্জে প্রবাসী ছেলের মৃত্যু নিয়ে পরিবারে শোকের মাতম

একমাত্র ছেলের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না জন্মদাতা বাবা ও গর্ভধারিণী মা। ছেলের লাশের কফিন বাড়িতে রেখেই দিনভর ছুটেছেন হাসপাতাল, থানা ও আদালত প্রাঙ্গণে। যদিও শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে ছেলেকে জানাজাশেষে দাফনের মাধ্যমে শেষ বিদায় দিয়েছেন হতভাগ্য বাবা মিজানুর রহমান কালু। অথচ তার আশা ছিলো, ছেলের মামা শ্বশুর ওমানে থাকায় সেখানে তার ছায়ায় ছেলেটি ভালো থাকবে। এ আশায় সংসারে অর্থনৈতিক স্বস্তি নিয়ে আনার জন্যে একমাত্র পুত্রকে প্রবাসে পাঠান। কিন্তু রক্ষকই ভক্ষক হয়ে জীবিত ছেলেকে লাশ বানিয়ে বাড়িতে পাঠালো--এমন দাবি তার। তিনি বলেন, একটি পরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি তারা, আমার পুত্রবধূকে কৌশলে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে পরে আমাদেরকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানায়। আজ ৭ দিন পর আমার ছেলের মরদেহ বাড়ি আসলেও পুত্রবধূ স্বামীর লাশ দেখতে পর্যন্ত আসেনি। তার মানে একথা নিশ্চিত, তারা আমার ছেলের মৃত্যুর সাথে জড়িত। আমি আমার ছেলের হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান থেকে আসা মো. রাব্বি (২৭)’র কফিনের সামনে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে এ কথাগুলো বললেন হতভাগ্য বাবা। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার।

প্রবাসে মৃত্যু হওয়া রাব্বি এ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী গ্রামের বাবুর বাড়ির বাসিন্দা মিজানুর রহমান কালু ও মিসেস মায়া আক্তার দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান। গত ৩ মাস পূর্বে প্রবাসে যাওয়া রাব্বির রোববার (৬ জুলাই ২০২৫) ওমানে রহস্যজনক মৃত্যু হয়। শনিবার (১২ জুলাই) রাতে মরদেহ দেশে ফেরত আনা হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত থানাসহ বিভিন্ন স্থানে বিচারের জন্যে ঘুরে অবশেষে লাশ দাফনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে তিনি আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে রাব্বির লাশ শনিবার (১২ জুলাই ২০২৫) রাতে বাড়ি আসার পর রোববার (১৩ জুলাই ২০২৫) বাড়ির উঠানে কফিন রাখার পর আশপাশের মানুষজন ভিড় করে। তারা সন্তানহারা বাবা-মায়ের আর্তনাদের সাথে সাথে রাব্বির ১০ মাস বয়সী সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন করেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর গত ৩ বছর পূর্বে কড়ৈতলী গ্রামের মুদি দোকানি মিজানুর রহমান কালুর ছেলে ও একই এলাকার বাবুল মিয়ার মেয়ে নুপুর আক্তার ভাবনার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে ১০ মাস বয়সী নুহান নামে এক সন্তান রয়েছে। গত ৩ মাস পূর্বে মো. রাব্বি জীবিকার তাগিদে তার মামা শ্বশুর জহিরের দেয়া ভিসায় শ্রমিক হিসেবে ওমানে পাড়ি জমান।

মিজানুর রহমান কালু জানান, সে বিদেশে যাওয়ার পর তার মামা শ্বশুর তাকে বেশ কয়েকবার মারধর করে। সর্বশেষ ৩ জুলাই ওমানে কর্মরত অবস্থায় রাব্বিকে তার মামা শ্বশুর জহির মারধর করে। বিষয়টি স্থানীয় কফিলকে জানালে তিনি দেখবেন বলে জানান। এরই মধ্যে গত ৬ জুলাই সকালে আমার পুত্রবধূ নূপুর আক্তার ভাবনাকে তার আরেক মামা শরীফুল ইসলাম আমাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যায় এবং ওইদিনই দুপুুরে ওমানে থাকা জহির হোসেন আমার ছেলে রাব্বী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেয়।

প্রবাসে রাব্বীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের কথা জানিয়েছে রাব্বীর চাচাতো ভাই জসিমসহ আশপাশের লোকজন।

এদিকে রাব্বির মামা শ্বশুর মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, রাব্বির আত্মহত্যার বিষয়টি ওমানের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। আমার ভাগ্নি নূপুর আক্তার ভাবনাকে মারধর করার চেষ্টা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অন্যান্য মানুষের উপস্থিতিতে ভাগ্নিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছি। রাব্বির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকেও মারধর করা হয়েছে।

প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সেলিম জিতু জানান, আমিও রাব্বির মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি, বিষয়টি দুঃখজনক। আমিও চাই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাগ্রহণ করুক। আমি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়