রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

অর্ক! অর্ক!
অনলাইন ডেস্ক

প্রতিদিনই এ পথ দিয়ে স্কুলে যায় অর্ক। কখনো বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে যায়, কখনো একা একা। পথ দিয়ে যেতে কখনো তার বিন্দুমাত্র ভয় লাগেনি। গা-ও ছম ছম করেনি। স্কুলে যাওয়ার এ পথে একটা ঝোপ আছে রাস্তার পাশে। রাস্তাটা পায়ে চলা পথ। গাড়ি এখনও এর বুকে ওঠেনি। অর্ক কখনো কখনো মনে মনে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে এ পথ দিয়ে যায়। টেলিভিশনে ডিসেম্বর মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী গান বাজায়। সে রকম একটা গানের কলি ভাঁজতে ভাঁজতে অর্ক পথ চলছে আজ। সে ছাড়া আশেপাশে আর কেউ নেই। তার গানের শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে আসছে না আপাতত। স্কুলের পড়া মাথায় ভাবতে ভাবতে আর গানের কলি ভাঁজতে ভাঁজতে সে পথ চলছিল। এমন সময় সে শুনতে পেলো, কে যেন তাকে ফিসফিস করে ডাকছে, অর্ক, অর্ক! ডাক শুনে অর্ক এদিক ওদিক তাকায়। কাউকে দেখে না। কাউকে না দেখে সে মনে করলো হয়তো কোন বন্ধু দুষ্টুমি করে ডাক দিয়ে লুকিয়ে গেছে। সে আর পেছনে না তাকিয়ে সোজা স্কুলে চলে গেল।

স্কুলে এসে সে সম্ভাব্য দু-একজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলো যারা তার ধারণা এ কাজ করতে পারে। কিন্তু কেউ সেদিন স্বীকার করলো না। অর্ক ধন্দে পড়ে যায়। সে ঘরে এসে কাউকে কিছু বলে না। বললে যদি তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে! এমনিতেই সবাই বলে, সে নাকি ঘুমের মধ্যে কথা বলে। একবার নাকি ঘুমের মধ্যে কাউকে মারতে গিয়ে নিজেই তার দাদীর গায়ে ঘুষি মেরে দিয়েছে। তার দাদী অবশ্য ব্যথা পাননি। অর্ক ঘুমুলে তার মা একদিন ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করে ভালোভাবে। আসলে ঘুমের মধ্যে অর্ক স্কুলে যা ঘটে তাই-ই আওড়াতে থাকে।

ঘরে এসে অর্ক বিষয়টা নিয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু কোন কূল-কিনারা পায় না। যথারীতি পড়তে পড়তে টেবিলে সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন আবার স্কুল টাইমে সে ঐ পথ ধরে হেঁটে হেঁটে যেতে থাকে। আজকে তার সাথে তার বন্ধু সুরুজ আসে। ঠিক গতকাল যে জায়গায় এসে ডাক শুনেছিল, আজকেও সেই একই জায়গায় তারা এসে শুনতে পায়, অর্ক অর্ক! গতকালের চেয়ে আজকের ডাকটা আরো পরিষ্কার। মনে হচ্ছে কাছেপিঠে কোথাও ডাকের উৎস। অর্ক ও সুরুজ দুজনেই অবাক হয়ে যায়। কিন্তু তারাও ডাকের হদিশ পায় না। দুজনে পরামর্শ করে। কী করা যায়। ঠিক হলো, দুজনেই তাদের বাবাকে এ কথা বলবে। ওনারা যা করে তাই হবে।

ঘরে গিয়ে অর্ক ও সুরুজ তাদের যার যার বাবাকে জানালো এ কথা। এবার চারজনে একসাথে হয়ে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করে নিলো। ঠিক হলো, আগামীকাল ভোরে তারা চারজনেই আবার সেই জায়গায় যাবে। তারপর যা হওয়ার হবে। কথা মোতাবেক সকাল সাতটায় তারা সেই পথে যাত্রা শুরু করলো। চারজনের হাতে চারটা লাঠি। ভয় পেয়ে নয়, কাজে লাগতে পারে ভেবে তারা লাঠি হাতে নেয়। ঠিক দশ মিনিট পরেই তারা পৌঁছে যায় সেই অবাক ডাকের স্থলে। এবার আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে ডাকটা। অর্ক অর্ক। অর্ক ও সুরুজের বাবা বুঝে যায় কোন স্থান হতে ডাকটা আসছে। তারা দ্রুত সেই স্থানে পৌঁছায়। গিয়ে দেখে, জঙ্গলাকীর্ণ একটা পুরানো কবরের মতো। চারজনে আটহাতে পরিষ্কার করে নেয় সে স্থান। ক্রমশ কবরটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সূর্যের আলো কমলা হতে হতে দেখা যায়, সেই কবরের গায়ে কিছু একটা খোদাই করা আছে। ভালোভাবে খেয়াল করে চারজনেই। লেখা আছে, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ইউনুছ। ৬/১২/১৯৭১। চারজনের আর বুঝতে বাকি রইল না। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে ঘুমিয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ। তাঁর কবর ঢেকে গেছে জঙ্গলে। কেউ খবর রাখেনি।

অর্কদের দেখে ধীরে ধীরে মানুষ জমায়েত হতে শুরু করে। সবাই নিজের মতো করে গল্প বানাতে থাকে। এক সময় গ্রামের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বি মতিলাল এসে দাঁড়ায়। কবরের মাটি নিয়ে তিনি কপালে ঠেকান। তারপর অশ্রুসজল চোখে তিনি বলতে থাকেন, এই সেই ইউনুছ, যার একারই বীরত্বে দশজনের একটা পাকিস্তানী সৈন্যদল লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল এই গ্রাম থেকে। কিন্তু আফসোস, তাকে পিছন দিক থেকে গুলি করে মেরে ফেলে রাজসকার বাচ্চু। অনেকদিন তোকে খুঁজছি রে ইউনুছ। কে জানত! এই জঙ্গলেই তুই ঘুমিয়ে আছিস্!

ইতোমধ্যেই অর্কর বাবা স্থানীয় থানায় খবর পাঠায়। থানার ওসি খবর পেয়ে দলবল নিয়ে এসে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে। তারপর কবরের চারপাশে ঘেরা দিয়ে রাখে। যে জঙ্গল এতদিন পরিত্যক্ত ছিলো, আজ অর্কদের কল্যাণে তা হয়ে উঠল গ্রামবাসীর গৌরবের স্থল।

উপজেলা প্রশাসন এসে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে ফুল দিয়ে সম্মান জানায়। পরদিন পত্রিকায় খবর আসে, স্কুলছাত্র অর্ক আর সুরুজের কৌতূহলে আবিষ্কৃত হলো মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদ ইউনুছের কবর। এরপর থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় অর্ক আর কখনো তার নাম ধরে ফিসফিসিয়ে কাউকে ডাকতে শোনেনি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়