প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৯:২৩
চলছে আইন না মানার প্রতিযোগিতা

জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি ও হানাহানি তথা আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে বিজ্ঞ আদালত উভয় পক্ষকে শান্ত করতে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে স্থিতাবস্থা বজায়ের আদেশ জারি করে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। পুলিশ গিয়ে উভয় পক্ষকে নোটিস প্রদানের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা প্রদান করে আসে। কিন্তু সম্প্রতি আদালতের নির্দেশনা না মানার একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কখনো রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে, কখনো পুলিশকে ম্যানেজ করে, আবার কখনো গায়ের জোরে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ তথা আদালত আবমাননা করে। ফরিদগঞ্জে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের লড়াইরচর গ্রামে।
|আরো খবর
ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম, আলমগীর গং আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছুদিন পর পর নিজেদের মতো করে সৃজনকৃত বাগান থেকে গাছ কেটে সাবাড় করছে, আবার বাগানের গাছ কেটে সেখানে ভবন করার জন্যে গভীর নলকূপ স্থাপন করছে।
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান জানান, গত দুই বছর ধরে থানা ও আদালতে ঘুরছি জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে সুবিচার পাওয়ার আশায়। উভয় পক্ষ জমি নিয়ে মামলা করলেও আমি আদালতের আদেশ মেনে রায়ের অপেক্ষায় থাকলেও প্রতিপক্ষরা কোনো কিছুই মানছে না। আমার মামলায় আদালত কয়েক দফায় ১৪৫ ধারা জারি করে উভয় পক্ষকে নিষেধাজ্ঞাকৃত জমিতে কোনো কাজ না করার নির্দেশনা দেয়। আমি সেই নির্দেশনা মানলেও তারা মানছে না। এমনকি প্রতিপক্ষও একইভাবে আদালত থেকে ১৪৫ ধারা জারি করে নিয়ে আসলে আমি সেই নির্দেশ মানলেও তারা পক্ষ হয়ে তা মানছে না। এ যেনো আইন না মানার প্রতিযোগিতা।
জানা গেছে, চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও বিরামপুর বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সঙ্গে প্রতিবেশী সাহাবুদ্দিন বেপারী ওরফে সাবু উল্লা বেপারী এবং সাইফুল ইসলাম গংয়ের সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। এ নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একাধিক অভিযোগ ও আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা চলমান অবস্থায় বাদী ও বিবাদী নালিশি সম্পত্তিতে না যাওয়ার বিধান থাকলেও অভিযুক্তরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কয়েক দফায় দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। গত ১২ জুলাই ২০২৫ (শনিবার) ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বিরোধকৃত স্থানে গিয়ে উভয় পক্ষকে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কথা (মামলা নং- ৮৭৬/২০২৫) জানায়। কিন্তু তিনদিন না যেতেই বুধবার (১৬ জুলাই ২০২৫) প্রতিপক্ষ সাইফুল ইসলাম গং নিষেধাজ্ঞাকৃত জমিতে ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে গভীর নলকূপ স্থাপন শুরু করেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ বুধবার (১৬ জুলাই ২০২৫) দুপুরে পুনরায় ঘটনাস্থলে কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসলেও কতক্ষণ তা বন্ধ থাকে তার ঠিক নেই।
মিজানুর রহমান জানান, বারংবার আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কখনো গাছ কাটছে, কখনো নির্মাণ কাজ করছে। গত ৩০ জুন ও ১ জুলাই দফায় দফায় নালিশি ভূমিতে সৃজনকৃত বাগান থেকে বেশ কিছু সুপারি গাছ কেটে ফেলে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম 'আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে' কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে বাড়ি করবো। দুইদিন আগে গভীর নলকূপের যন্ত্রপাতি এসেছে। কতোদিন বসিয়ে রাখবো! তাই তা বসানোর কাজ করছি।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আইন না মানার সংস্কৃতি মোটেও ভালো নয়। আদালতের নির্দেশনা মেনে চলা সকলের জন্যে বাঞ্ছনীয়। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যাতে আইনশৃংখলার বিঘ্ন না ঘটে।