প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:৩৯
সন্তান, সংসার ও চাকরি সামলিয়েও বিসিএস ক্যাডার চাঁদপুরের মেয়ে শিফা
সদ্য ঘোষিত ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন সারাবান তাহুরা শিফা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। তার এই ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়াটা মোটেও সহজ ছিল না। সন্তান সামলেছেন, চাকরি করছেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাছাড়া,সংসার সামলানোর দায়িত্ব তো আছেই। এরমধ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য।
|আরো খবর
সারাবান তাহুরা শিফার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া ঐতিহ্যবাহী সাদি মৌলভী বাড়ি । ৩ আগস্ট সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে, এতে তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ৩য় স্থান অর্জন করেন।
চাঁদপুর শহরের মসজিদপট্টি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মেসার্স মৌলভী ট্রেডার্সের মালিক মোঃ শওকত আলী মিয়া ও রত্নগর্ভা গৃহিণী মনোয়ারা বেগমের ১ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সারাবান তাহুরা শিফা মেজো।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আলীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।
শিফা ছোট বেলা থেকেই ছাত্রী হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী, কর্তব্যপরায়ণ ও বিনয়ী ছিলেন। তেজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে গ্রামে এসে বহরিয়া নুরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একই বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি
এবং পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে সফলতার সাথে এইচএসসি পাশ করেন। উভয় পরীক্ষাতেই পেয়েছেন জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে শিক্ষা বোর্ডে ২য় স্থান অর্জন করেন। পরে চান্স পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যান বিষয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যথাক্রমে সিজিপিএ ৩.৭৪ ও ৩.৭৫ অর্জন করে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। তার বিয়ে হয় মাষ্টার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বর্তমানে সরকারের অডিট বিভাগে কর্মরত মতলবের ছেলে শাহ আলম শিবলীর সাথে। তবে তা তার সাফল্যের পেছনে বাধাঁ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বরং অনুপ্রেরণায় পেয়েছেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।
এক সন্তান, সংসার এবং চাকরি করেও বিসিএস জয়ের গল্প বলতে গিয়ে সারাবান তাহুরা শিফা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয় এবং এ বছর সরকারি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি হয়। সময় তেমন পেতেন না। তবে স্বামীর সহযোগিতা এবং নিজের একাগ্রতার কারণেই এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।
শিফা বলেন, আমার বাবা-মা, ভাই-বোন এবং স্বামী আমাকে শুরু থেকেই উৎসাহ দিয়ে গেছেন। ফলে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পেরেছি। তাদের উৎসাহ না পেলে হয়তো আজ এতদূর আসা সম্ভব হতো না।
কর্মজীবী কিংবা বিয়ের পরও যেসব নারী বিসিএসসহ সরকারি চাকরি করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে শিফা বলেন, ‘নারীদের সংসারের চাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক, এর মধ্যেও সময়টা বের করে নিতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক পড়াশুনা করলে সাফল্য আসবে বলে আমি মনে করি। স্কুল শিক্ষক জনাব হাছান খান বলেন, `শিফাকে আমি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। ও যেমন কর্তব্যপরায়ণ ছাত্রী ছিল তেমন ধার্মিকও ছিল। আসলে পর্দা বা ধার্মিকতা লেখাপড়া বা উন্নতির অন্তরায় নয়। ওর জন্য শুভ কামনা রইলো।'
মেয়ের সাফল্যের বিষয়ে তার বাবা শওকত আলী মিয়া বলেন, ‘তার পরিশ্রমই তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।মেয়েকে নিয়ে আমি অনেক গর্ব করি।’