প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৫০
ভাইয়ের দেওয়া আগুনে পুড়লো আরেক ভাইয়ের ঘর!
দেবর ও শাশুড়িকে বিবাদী করে থানায় অভিযোগ দায়ের
বিদ্যুৎ সংযোগ কিংবা চুলার অস্তিত্ব নেই ঘরটিতে। তবুও আগুনে পুড়ে গেছে ঘরটি। ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধের জের থেকেই যে এ আগুনের উৎপত্তি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই প্রতিবেশীদেরও। তবে এ আগুন কি প্রতিশোধের আগুন নাকি নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টা--সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তারা। ঘটনার বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে উভয় পক্ষই।
|আরো খবর
৮ অক্টোবর মঙ্গলবার মধ্যরাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুঠিয়া গ্রামের মিজি বাড়ির মাসুদ মিজির ঘরে। তিনি একজন প্রবাসী। ঘটনার দিন তার স্ত্রী রুনা বেগম বাড়িতে ছিলেন না। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে মাসুদের বোন রানু বেগম বলেন, আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি ঘরসহ জমিটি আমার বড়ো ভাই মাসুদের কাছে বিক্রি করে দেই। আমার মেঝো ভাই খোরশেদ আলম কাজল হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, কীভাবে জায়গা খেতে আসে আমি দেখে নিবো। মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ঘরে আগুন লাগার বিষয়টি জানতে পারি। প্রতিদিন আমার ভাই কাজল তার মোটরসাইকেলটি তার ভবনের সিঁড়ির নিচে রাখলেও মঙ্গলবার রাখেননি। তাছাড়া আগুনের বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবেশীরা আগুন নিভাতে উদোম গায়ে ছুটে এলেও কাজলের গায়ে সন্ধ্যায় পরিহিত পাঞ্জাবী ছিলো। আমার ধারণা, সে-ই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ভুক্তভোগী মাসুদের স্ত্রী রুনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার ননদ রানু বেগমের কাছ থেকে ঘরসহ জমিটি ক্রয় করে আমার স্বামী মাসুদ মিজি। শুরু থেকেই আমাদেরকে এ ঘরে থাকতে দিবে না বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন আমার ভাসুর খোরশেদ আলম কাজল। প্রবাস জীবনের শুরু থেকে দীর্ঘ সময় আমার স্বামী তার কাছে টাকা-পয়সা পাঠিয়েছেন। অথচ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উল্টো টাকা আদায় করেছে কাজল। বিভিন্ন সময়ে সে আমাকে মারধরও করেছে। এমনকি আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও প্রদান করেছে। তার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে আমাদের বিরোধ নেই। সে-ই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
কাজলের ছোট ভাই মো. হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ ১৭ বছর আয় করে কাজলের কাছে টাকা পাঠিয়েছি। আমার এ ভাই আমার টাকাগুলো খেয়ে ফেলেছে। আমার ঘর সে দখল করে রেখেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে সে আমার কাছে ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করেছে। যখন আগুন লেগেছে, সে একাই বাইরে ছিলো এবং সে-ই প্রথম চিৎকার দিয়েছে। কেউ কি পাঞ্জাবী পরে ঘুমায়? আমি তাকেই দেখেছি প্রথম। প্রবাসে থেকে আমরা কি অপরাধ করেছি?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজলের মেয়ে বলেন, আমি নিজ চোখে দেখেছি, আমার ছোট্ট আব্বু (মো. হোসেন) বালতি নিয়ে অন্ধকারে দৌড় দিয়েছেন। আমার ধারণা, আমার বাবাকে ফাঁসাতে তিনিই আগুন দিয়েছেন। 'বালতি দিয়ে আগুন জ্বালায় নাকি নেভায়' সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব সে দেয়নি। ঘটনার বিষয়ে কাজলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মাসুদের স্ত্রী রুনা বেগম বাদী হয়ে দেবর খোরশেদ আলম কাজল ও শাশুড়ি সুফিয়া বেগমকে বিবাদী করে বুধবার ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোচালা টিনের ঘরটির সম্পূর্ণ অংশ পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে ঘরে থাকা সকল তৈজসপত্রও৷ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় 'কে আগুন লাগালো ঘরে' এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করার দাবি স্থানীয়দের।