প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৫৪
এসি ব্যবসায়ীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় মামলা
চাঁদপুর শহরের জিটি রোডে এসি ব্যবসায়ীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং চাঁদা না পাওয়ায় হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ শাহাজাহান সরকার (৫৬) কথিত 'সালে বাহিনী'র ভয়ে থানায় মামলা করতে পারেন নি। পরে চাঁদপুর সদরের বিজ্ঞ আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চাঁদপুর জেলা পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। এদিকে মামলার বাদী ও সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরের খবর পেয়ে সালে বাহিনীর প্রধান সাক্ষীদেরকে রাজনৈতিক মামলায় ঢুকিয়ে শিক্ষা দেবেন বলে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছেন। বিজ্ঞ আদালতে দায়েরকৃত সি.আর. মামলা নং- ১১৩০/২০২৪ সূত্রে জানা যায়, বাদী একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকায় ১৫৪ নম্বর মতিঝিল কুলমার্ট ইন্টারন্যাশনাল লিঃ প্রতিষ্ঠান দিয়ে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবসা করেন। তার জন্মস্থান চাঁদপুর শহরের দক্ষিণ জিটি রোডের সরকার বাড়ির মালিকীয় দখলীয় সম্পত্তির কিছু অংশে তিনি দারুস সুন্নত আজিজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে আসামি সালে আহমেদ বেপারী চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যু। আসামির নির্দিষ্ট কাজকর্ম না থাকায় চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতা করা তার পেশা ও নেশা। গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ৯টার সময় উত্তর জিটি রোডস্থ ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বাদীকে আটকে নগদ ৩০লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা আদায় করার জন্যে আসামি তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি বাদীর গলায় ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে ১ ফর্দ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এ সময় আসামিসহ ৮/১০ জন সন্ত্রাসী বাদীকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে চাঁদার টাকা দেওয়ার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে জায়গা ভরাট করতে দিবে না। পরে ৩ নভেম্বর রোববার সকাল অনুমান ১০টার সময় বাদী তার পৈত্রিক সূত্রে মালিকীয় দখলীয় বি.এস. ১৯২ নং খতিয়ানের ২৩০৪ দাগের মোট ৬০ শতাংশ ভূমি মাটি ভরাট করছিলেন। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসামিসহ উক্ত অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন সন্ত্রাসী বাদীর কাছে পূর্বে দাবিকৃত ৩০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। 'বাদী কিসের চাঁদা দিবে' বললে আসামিসহ উক্ত সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড, কাঠের আদল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বাদীকে মারধর ও মারাত্মক জখম করে। এমনকি বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় চেপে ধরে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। বাদী বহু কষ্টে প্রাণে রক্ষা পায়। পুনরায় আসামী বাদীর ডান চোখ নষ্ট করার জন্যে বাদীর ডান চোখে ঘুষি মেরে মারাত্মক জখম করে। বাদীর ডাক-চিৎকারে সাক্ষীগণসহ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিসহ অজ্ঞাতনামারা চলে যায়। এমনকি মামলা না করার জন্যে হুমকি-ধমকি দেয়। অভিযুক্ত সালে আহমেদ বেপারির পিতার নাম মৃত মোঃ আঃ সামাদ পাটোয়ারী। পুরাণবাজারে জন্মগ্রহণ করলেও প্রথমে গুয়াখোলা এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। পরে তিনি উত্তর জিটি রোডে সম্পত্তি ক্রয় করে বাড়ি করেন। এরশাদের আমলে জাপার টিকিটে চাঁদপুর থেকে এমপি নির্বাচন করে তার ভরাডুবি ঘটে। ১৯৯১-১৯৯৬ আমলে বিএনপির সাথে মিলে-মিশে সুযোগ-সুবিধা নেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী বনে যান এবং এ সময়ও অনেক সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেন। ২০০৮-২০২৪ আওয়ামী লীগ আমলে পুরোদমে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ডে অনেক কিছু হাতিয়ে নিয়ে আঙ্গিল ফুলে কলা গাছ বনে যান। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি একবার অর্থ সম্পাদকও ছিলেন। উত্তর জিটি রোড এলাকায় দীর্ঘ বেশ ক’বছর যাবত বসবাসের সুবাদে অপরাধীদের নিয়ে গড়ে তোলেন 'সালে বাহিনী'। তার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০ জন। জাপা-বিএনপি-আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ফায়দা নিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায়। বিশেষ করে জিটি রোড উত্তর ও দক্ষিণ এলাকাসহ চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার গরিব-দুঃখী-অসহায় মানুষের ওয়ারিশের সম্পত্তি এবং বায়না সূত্রে বিভিন্ন সম্পত্তি কিনে দুর্বল ও অসহায় মানুষের ওপর চড়াও হওয়া তার স্বভাব। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের আমলে তার দাপটে মানুষজন আতঙ্কে থাকতেন। তিনি মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে জজ কোর্ট ও ফৌজদারি কোর্ট এবং থানায় তার বাহিনীর সদস্যদের দলবদ্ধভাবে ব্যবহার করতেন। তিনি বাদী এবং সাক্ষীদের যথাক্রমে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্যে এবং সাক্ষী না দেয়ার জন্যে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করতেন। এ ব্যাপারে সালে আহমেদ বেপারী বলেন, আমি শাহজাহান সরকারের কাছে মোট ২৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পাওনা আছি। গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) উক্ত টাকা আমাকে দেয়ার কথা ছিল সাবেক কাউন্সিলর মালেক বেপারীর অফিসে। কিন্তু তিনি উক্ত টাকা না দেয়ার পাঁয়তারা করে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। গত শনিবার রাতে মুঠোফোনে তিনি জানান, ২৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা প্রদানের কোনো (দালিলিক) প্রমাণ তার কাছে নেই।