প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:১০
পৌর এলাকার সকল খালসমূহ উদ্ধার করে সংষ্কার করা হবে : পৌর মেয়র
ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার অংশে বিদ্যমান নাপিত বাড়ির খালটি দিন দিন সরু হয়ে আসছে। ক্ষমতাবান কতিপয় ব্যক্তিবর্গ নিজেদের সুবিধার্থে, নিজেদের সম্পদের সাথে সংযুক্ত করে নিচ্ছে খালের অংশ। অবৈধভাবে খালের দখলকৃত অংশেই ব্যবসার প্রসারতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মাণ করছে স্থায়ী অস্থায়ী স্থাপনা। যা এখন পরিণত হয়েছে নিজস্ব সম্পত্তিতে।
|আরো খবর
চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার অংশে বৃটিশ আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী লোহারপুলের নীচ দিয়ে প্রবাহিত নাপিতবাড়ির খালটি ছিল দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের সুপরিচিত নৌপথ। এই খাল দিয়েই গহনা নৌকা থেকে শুরু করে ছোঠ ছোট পাল তোলা নৌকা যাতায়াত করত অনায়াসে। প্রমত্তা মেঘনার বিশাল জলরাশি আর প্রচণ্ড ঢেউয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে নিরাপদ নৌপথ হিসেবে মহাজনরাও এ পথেই এগিয়ে যেত তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে। নাপিত বাড়ির এই খালটি চাঁদপুর শহরের অংশে থাকা ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত হয়ে লোহারপুলের নীচ দিয়ে গিয়ে, তা' মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত হওয়ায় খালটির গুরত্ব ছিল অনেক বেশী।
বর্তমান সময় সড়ক পথের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হওয়ায় ধীরে ধীরে এ খালের গুরুত্ব অনেকাংশে কমে যাওয়ায় তা' সংস্কারের অভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে এক শ্রেণীর দখলবাজরা। তারা নিজেদের প্রয়োজনে ধাপে ধাপে খালের দুই পাড় ভরাট করেছে নীরবে নিঃশব্দে। গড়ে তুলেছে কাঁচা, পাকা ভবন। খালের সম্পত্তি রক্ষায় যাদের দেখার কথা ছিল, তারাও নীরবে নিঃশব্দে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন দখলকারীদেরকে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছে, দখলদাররা দখল করে খুশি, আর ব্যবস্থা গ্রহণকারীরা তাদেরকে দখল করার সুযোগ দিয়ে খুশি। এমনটাই চোখে পড়েছে পুরানবাজার লোহারপুল অংশের নাপিত বাড়ির খালের বর্তমান অবস্থা দেখে।
অবশ্য এস্থানে থাকা খালের দু' পাড় দখল করতে দখলকারিদের তেমনভাবে মাটি ভরাট করতে হয়নি। খালের দুপাশে গড়ে উঠা অটো রাইসমিলের ছাই তুষ এক্ষেত্রে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। খালটি সংস্কার না হওয়ার ফলে খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গিয়ে পানি প্রবাহিত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও খালটি তার হারানো যৌবনে ফিরে আসতে পারছে না নাব্যতা সংকটের কারনে।
নাপিত বাড়ি খালটি লোহার পুল সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিদিন নারী পুরুষ এইখালের পানিতেই তাদের ভান্ড বাসন, ধোয়া মোছা থেকে শুরু করে নিত্য কর্ম স্নান কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকেন। তাদের এই সুবিধার কথা চিন্তা করে চাঁদপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল করিম পাটওয়ারী সাহেব, এ স্থানে কয়েকটি পাকা ঘাটলাও নির্মাণ করে দেন। কিন্তু খালের নাব্যতা কমে যাওয়ায় এবং পানির স্বচ্ছতা না থাকায় এখন তেমন করে কেউ আর এখানে তাদের নিত্য শৌচ কর্ম সম্পন্ন করতে পারছেন না।
যদি খালটি পুনঃ উদ্ধার পূর্বক সংস্কার করা যায়, তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বৃদ্ধি পাবে খালটি ব্যাবহারে মানুষের সুবিধা।
এ ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। যিনি নান্দনিক চাঁদপুর গড়া ও ব্যবসায়িক হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে অনার স্বপ্ন দেখিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, অচিরেই পর্যায়ক্রমে পৌর এলাকার সকল খাল পুনঃ উদ্ধারসহ সংস্কার করবেন। ফিরিয়ে আনবেন চাঁদপুরে ঐতিহ্য, রক্ষা করবেন পরিবেশের ভারসাম্য।
পৌর মেয়রের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, চাঁদপুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কল্পে শহরের মাঝে থাকা খালগুলো দৃস্টি নন্দন করা হবে। পুরানবাজারের লোহারপুল চত্বরে থাকা নাপিত বাড়ির খালের দুই পাড় উদ্ধারপূর্বক তা' বাধাই করে দৃস্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হবে। এ স্থানে থাকা পাকা ঘাটলাগুলো সংস্কারপূর্বক ব্যবহার উপযোগী করা হবে। এজন্য পৌরমেয়র এস্থানে থাকা মিল মালিকদের সহযোগীতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী ওয়াদা পুরণে আমি যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। আর এজন্য মাননীয় সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি আমাকে যথেষ্ট সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরো বলেন, চাঁদপুরবাসীর সহযোগীতা অব্যাহত থাকলে আমাদের স্বপ্ন অবশ্যই পুরণ হবে।