শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:১১

যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যু: বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি গভীর ষড়যন্ত্র?

মো.জাকির হোসেন
যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যু: বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি গভীর ষড়যন্ত্র?
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী নয়, বরং দেশের জনগণের শেষ ভরসার জায়গা। যখনই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়, যখন মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তখনই তারা আশ্রয় খোঁজে সেনাবাহিনীর কাছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে প্রতিটি জাতীয় সংকটে সেনাবাহিনীর গৌরবময় ভূমিকা দেশের মানুষের মনে অগাধ বিশ্বাস তৈরি করেছে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মাঝে মাঝে কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন কিছু করে বসেন, যা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, বরং সেনাবাহিনীর সুনাম ও মর্যাদার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। কুমিল্লার পাঁচথুবি ইউনিয়নের যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনাটিকে আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেখছি।

ঘটনার পেছনের রহস্য কী? তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। গত ২৬ জানুয়ারি তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন, এবং ৩১ জানুয়ারি ছিল তার বাবার কুলখানি। বাবার কুলখানিতে অংশ নিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগের রাতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন তার পরিবার জানতে পারে, তিনি আর বেঁচে নেই।

পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তৌহিদুল ইসলামের শরীরে ছিল নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন। পরিবারের দাবি, তাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। অথচ কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি বলেছেন, থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না! তাহলে প্রশ্ন ওঠে—কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাকে কেন তুলে নেওয়া হলো?

নারায়ণগঞ্জ সেভেন মার্ডার কাণ্ড: ইতিহাসের শিক্ষা ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল, যা এখনো আমাদের মনে গভীর দাগ কেটে আছে। সেখানেও র‍্যাবের কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে জনপ্রিয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল। তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায়।

তখন অনেকেই বলেছিল, এটি সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত কাজ। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, এটি কিছু বিপথগামী সদস্যের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ছিল। রাষ্ট্র তাদের চিহ্নিত করেছে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় এনেছে।

ঠিক তেমনই, তৌহিদুল ইসলামের ঘটনাতেও একটি শক্তিশালী চক্র সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে তাদের অপকর্ম ঢাকতে চাইছে কি না, তা গভীরভাবে তদন্ত করা দরকার।

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন: একজন নাগরিক হিসেবে তৌহিদুল ইসলামের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু তাকে বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নেওয়া হলো, এবং পরদিন তার মৃত্যু সংবাদ এলো! এ ধরনের ঘটনা কি রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত নয়?

এখানে শুধু তৌহিদুল ইসলাম নন, বরং দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকারের বিষয়টিও জড়িত। কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধ করে, তবে তার জন্য আদালত আছে, আইন আছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বরাবরই দেশের মানুষের গর্ব। সেনাবাহিনী কখনোই আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। অতীতেও আমরা দেখেছি, বাহিনীর মর্যাদা নষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

আমরা সেনাবাহিনীর প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই: ১. এই ঘটনার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত করা হোক—যদি কোনো বিপথগামী কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাকে বিচারের আওতায় আনা হোক।

২. সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক—যাতে ভবিষ্যতে কেউ সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।

৩. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক—যাতে কোনো নাগরিক অন্যায়ভাবে নিপীড়নের শিকার না হন।

সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের যে আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে, সেটিকে ধরে রাখতে হলে অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনী নিজেই তাদের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করবে এবং এ ঘটনায় সত্য উদঘাটন করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করবে।

আমরা চাই, তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যু শুধু আরেকটি পরিসংখ্যান হয়ে না থাকুক। এটি হোক ন্যায়বিচারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবারের প্রিয়জন এভাবে হারিয়ে না যায়।

লেখক: চাঁদপুর জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়