সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০

অন্যায় করে সম্মান আশা বৃথা
অনলাইন ডেস্ক

প্রবীণ জীবনে প্রবেশ করে অনেকেই সম্মান-মর্যাদা আশা করে। পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে অগ্রাধিকার চায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণে আগ্রহী হয়। সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সংঘসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে। বিশেষ করে যারা একসময় চাকরি-বাকরি করেছেন, তাদের মধ্যে সামাজিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে যুক্তরা অনেকেই আগে থেকেই সামাজিক কাজে অংশ নেন। মানুষ সম্মানিত হতে চায় এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। সম্মানিত লোকেরা বেশি বেশি প্রশংসিত হন। প্রশংসা শোনার জন্যে মানুষের আকুলতা সবচেয়ে বেশি। প্রশংসিত হবার জন্যে কাজ করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। প্রশংসা এবং নিন্দা দুটিই একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যিনি প্রশংসিত হন তিনি আবার নিন্দিত হতেও পারেন। প্রবাদ আছে, যেমন কর্ম তেমন ফল।

যিনি খাদ্যে ওষুধে ভেজাল দিয়েছেন, ওজনে কম দিয়েছেন, বিচার বিক্রি করেছেন, কালোবাজারি করেছেন, নিম্নমানের পণ্যকে উচ্চমানের বলে চালিয়েছেন, অবৈধ মজুতদারি করেছেন, আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং করেছেন, সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অসম্মানিত ব্যক্তি। যিনি চাকরিতে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পালনে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন, অফিস চলাকালীন চেয়ারে বসে গালগল্প করেছেন, ঘুষ নিয়েছেন, দুর্নীতি করেছেন, সেবাপ্রার্থীকে অহেতুক হয়রানি করে অসম্মানিত করেছেন, তিনি সবসময়ই একজন ঘৃণিত ব্যক্তি। যিনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি অসদাচরণ করেছেন, ঠকিয়েছেন, সম্পদের বিলি বন্টনে অসাধুতার পরিচয় দিয়েছেন, পিতামাতা, ভাই-বোনকে বঞ্চিত করেছেন, আত্মীয়-স্বজনকে অবহেলা অসম্মান করেছেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই সম্মান আশা করতে পারেন না।

যিনি সমাজ উন্নয়নে কাজ করবেন বলে এনজিও গড়ে তুলেছেন, বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি যদি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেন, তবে তিনি সম্মানিত হবার সম্ভাবনা কম। যিনি জনগণের সহায় সম্পদ বুদ্ধি খাটিয়ে কৌশলে নিজের দখলে রেখেছেন, তিনিও সম্মান আশা করতে পারেন না। যিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনে জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেননি, তার সম্মান পাওয়া কঠিন।

বড় বড় স্থাপনা নির্মাণে যারা অবৈধভাবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন, তারা কোনো মতেই সম্মানিত হবেন না। যিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তিনি দায়িত্ব পালনে শিথিলতা প্রদর্শন করে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছেন, ঘুষ-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আখের গুছিয়ে নিয়েছেন, তিনি কীভাবে সম্মানিত হবেন? যিনি শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সঠিক আচরণ করেননি, রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে নম্বর কম-বেশি করলেন, ক্লাস ঠিকমতো করেননি, গবেষণার নামে নকল করেছেন, ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন কিংবা প্রস্তাব দিয়েছেন, দায়িত্ব পালনে শিথিলতা দেখিয়েছেন, তিনি সম্মান আশা করতে পারেন না। যিনি আইন পেশায় যুক্ত থেকে মোয়াক্কেলের জন্যে সঠিকভাবে কোর্টে লড়াই করেননি, শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বিচার বিলম্বিত করার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন, বিপক্ষ শক্তির সাথে হাত মিলিয়েছেন, মামলা দুর্বল করে দিয়েছেন, তিনি কীভাবে সম্মানিত হবেন? যিনি চিকিৎসা পেশায় থাকার সময় রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, ওষুধ কোম্পানি, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন, রোগীর সাথে অন্যায় আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেছেন, তিনি সম্মান পাবার যোগ্যতা হারিয়েছেন। যিনি পিতামাতা হিসেবে সন্তানের প্রতি সঠিক আচরণ করেননি, অতিরিক্ত কঠোরতাণ্ডশিথিলতা দেখিয়েছেন, সন্তানের সাথে মানসম্মত সময় দেননি, সন্তানকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করতে চেয়েছেন, কাজের অজুহাতে সন্তানকে সময় দেননি, সন্তানের চাহিদাগুলোকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখেননি, কাউকে বেশি আবার কাউকে কম গুরুত্ব দিয়েছেন, সন্তানের কল্যাণ বিবেচনায় নেননি, তিনি সম্মান পাবেন কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

যিনি সন্তান হিসেবে পিতা মাতাকে সেবা-যত্ন করেননি, ভরণপোষণ দেননি, চিকিৎসায় সহায়তা করেননি, খোঁজ খবর রাখেননি, সামর্থ্য থাকার পরও টাকা পয়সা দেবার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেছেন, তিনি কোনোভাবে সম্মান পেতে পারেন না।

যিনি কবি, লেখক, সাহিত্যিক হিসেবে কাজ করার সময় জুলুম, নির্যাতন নিপীড়ন, অবিচারকে কলমে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি কীভাবে সম্মান আশা করতে পারেন। যিনি গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কাজ করার সময় নিরপেক্ষভাবে সত্য প্রকাশে কুণ্ঠিত ছিলেন, বিভিন্ন রকমের অনৈতিক কাজে যুক্ত ছিলেন, সুবিধা নিয়েছেন, তিনি কীভাবে সম্মানিত হবেন!

পৃথিবী শুধু দাতাকে স্মরণ করে, গ্রহীতাকে নয়। মানুষের কাছে তাঁর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, যিনি সবচেয়ে নেন কম, দেন বেশি। যাঁরা সমাজ পরিবর্তনে, দেশ সৃষ্টিতে, ভাষার দাবিতে, গণতন্ত্রের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁরা আমাদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি।আর যাঁরা ভোগ বিলাস, বাড়ি গাড়ি, সহায় সম্পদ নিয়ে বেশি ব্যস্ত, তাদেরকে মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না। শুধু গ্রহণকারী ব্যক্তি সমাজের চোখে, মানুষের কাছে শ্রদ্ধা সম্মানের পাত্র হতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়