প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪
কুয়াকাটার প্রকৃতিকে চুপি চুপি দেখতে হয়
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখার স্বপ্ন ছিলো সেই ছোটবেলা থেকে। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। অবশেষে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কল্যাণে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে তা সম্পন্ন হলো। তাও আবার আমারই নেতৃত্বে (অন্যতম)। আমি ছিলাম ভ্রমণ উপ-কমিটির সদস্য সচিব। আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন সভাপতি মামুনুর রশিদ পাঠান।
|আরো খবর
আমার ইচ্ছে ছিলো এবার ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের ট্যুর দিবো দুই বাংলার ঐতিহাসিক এবং বহুল আলোচিত ভূমি ‘সিলেট’। সিনিয়র দু-একজনের পছন্দ ছিলো কুয়াকাটা। অনেকের মন খারাপ থাকলেও টিম ভ্রমণ কেউ মিস করতে চায়নি বলে কুয়াকাটা গিয়েছেন। এবারই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক (ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের) পর্যটক নিয়ে ঘুরতে যাই। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর অবশেষে সেই দিনটি চলে আসে সামনে।
আমি একজন ভ্রমণ পাগল মানুষ। ঘোরার কথা শুনলে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। অথচ গত বছর এবং এবার ঘুরতে গেছি ঠিকই, কিন্তু ভিতর থেকে যেতে পারিনি। কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। প্রেসক্লাবের ৪৬ জন সাংবাদিক রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সবাই যাতে রিলাক্স মুডে গাড়িতে সময় অতিবাহিত করতে পারেন, সে জন্যে আমরা পাঁচটি গাড়ি নিয়েছি। পাঁচটি গাড়িতে পাঁচজনকে লিডার নির্বাচন করেছি। ১নং গাড়ির লিডার সভাপতি মামুনুর রশিদ পাঠান, ২নং গাড়ির লিডার সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ফরহাদ, ৩নং গাড়ির লিডার সাবেক সভাপতি নুরুন্নবী নোমান, ৪নং গাড়ির লিডার সিনিয়র সহ-সভাপতি এমকে মানিক পাঠান ও ৫নং গাড়ির লিডার সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন। আগের দিন রাতের মধ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সবাইকে ভোর ৬টার মধ্যে প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আসার জন্যে নোটিস করেছি। আমি নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই আসলাম। কারণ সবাইকে ভ্রমণের জন্যে করা টি-শার্ট দিতে হবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে বেশ ক'জন আমার আগেই এসে উপস্থিত। প্রায় সবাই ৭টার মধ্যে চলে আসছে। আমরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম সকাল বেলা নাস্তা খাওয়াবো। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ সকাল বেলা আসেইনি। নোমান ভাই হোটেল ম্যানেজারকে কল দিয়ে যথেষ্ট গরম ঝাড়লেন। তার যথেষ্ট কারণও আছে, তিনি ওই লোকের সাথে কথা বলে সকালের নাস্তা অর্ডার দিয়েছেন। এ ঘটনায় আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘যাত্রাতেই ঘুসি নাকে।’ যে যেখানে পারছে নাস্তা সারতে সারতে প্রায় এক ঘণ্টা নাই হয়ে গেলো। আমরা ঠিক ৮টায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। যদিও কথা ছিলো ৭টায় রওয়ানা দিবো।
কুয়াকাটা চাঁদপুরের হরিণা হয়ে শরীয়তপুরের ওপর দিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আমরা ঢাকা হয়ে রওয়ানা দিলাম। কারণ অনেকেই পদ্মা সেতু দেখেন নি। তাই প্রায় দ্বিগুণ রাস্তা জেনেও এই রুটটিই বেছে নেয়া হয়েছে। আমি আমার গাড়িতে একবারই গ্যাস এবং তেল নিয়ে নিয়েছি। অন্য চালকরা একাধিক স্থান থেকে তেল নিতে গিয়ে আরো এক ঘণ্টা নষ্ট করলো। আমি প্রায় ১ ঘণ্টা বাকি গাড়িগুলোর জন্যে অপেক্ষা করেছি। এক ঘণ্টার পর বাকি গাড়িগুলো আসলো, তারপর আমরা আবার রওয়ানা দিলাম। ঢাকা থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন ফরিদগঞ্জ বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক বিল্লাল হোসেন সাগর ভাই। আমাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে দীর্ঘ ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন ফরিদগঞ্জের কৃতী সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও প্রাঞ্জল ভাষার বক্তা মোঃ সামছুল আলম সুমন।
পদ্মা সেতু
যে স্থাপনার জন্যে প্রায় দ্বিগুণ রাস্তা পারাপারের ধকল সহ্য করেছে, সাংবাদিকরা সেই সেতু অতিক্রম করছি। অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছে সবার মধ্যে। অনেকেই বিরল দৃশ্যটি ভিডিও করে রাখলো। কেউ কেউ আবার ফেসবুক লাইভে ধারণ করলো। অনেকের ভেতরেই কাজ করেছে, সেতুতে নেমে একটি ছবি তোলার প্রবল ইচ্ছা, কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। পদ্মার বুকে ধারণ করা বাতাসকে সাঁই সাঁই করে ছিঁড়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে অপর প্রান্তে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার (সড়ক) এবং ৫৩২ মিটার (রেল)। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর জন্যে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর। এর পাশাপাশি মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার ও জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদী শাসন করতে হয়েছে।
মাওয়া প্রান্তের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৬১৭ কিলোমিটার। এতে রয়েছে ৪ লেনের ডুয়েল ক্যারেজ ওয়ে। মোট রাস্তা ২৭ দশমিক ৬ মিটার। এই প্রান্তে রয়েছে ২ দশমিক ১৪১ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও শূন্য দশমিক ৬৮২ কিলোমিটার স্থানীয় সড়ক। পাশাপাশি রয়েছে টোল প্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সার্ভিস এরিয়া-০১, ওয়ে স্টেশন, ইমারজেন্সি রেসপনস এরিয়া ইত্যাদি। জাজিরা প্রান্তের দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এতে রয়েছে ৪ লেনের ডুয়েল ক্যারেজ ওয়ে। মোট রাস্তা ২৭ দশমিক ৬ মিটার। ৫টি সেতু, ২০টি বক্স কালভার্ট, ৮টি আন্ডারপাস সংযোগ তৈরি করেছে ১২ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও ৩ কিলোমিটার স্থানীয় সড়কের। এ ছাড়া রয়েছে টোল প্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সার্ভিস এরিয়া-০৩, ওয়ে স্টেশন, ইমারজেন্সি রেসপনস এরিয়া ইত্যাদি।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল, মংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। রাজধানী এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সময় এক-চতুর্থাংশ কমে আসছে। এতে করে পর্যটন খাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্যে করা নদী শাসনের ফলে ৯ হাজার হেক্টর জমি খরা ও বন্যা থেকে বাঁচবে। পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে। পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান ৪১টি, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। পদ্মা সেতুর মোট পিলার রয়েছে ৪২টি।
পদ্মা সেতু পার হয়ে আমরা সোজা চলে গেলাম গোপালগঞ্জে। সেখানে হাইওয়ের পাশে সাম্পান নামে একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।শেখ মুজিবুরের সমাধিসৌধ
দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা সোজা চলে আসলাম শেখ মুজিবুরের সমাধিসৌধে। ২য় বারের মতো এখানে আসলাম। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে পাথরে খোদাই করা একটি কবিতা। ‘যথার্থ বাঙালি, যদি তুমি হও ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে।’ কবিতাটি সম্ভবত সৈয়দ ফখরুদ্দিন মাহমুদের। প্রশস্ত পথের দুই পাশে রয়েছে ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়। এসবের মাঝেই পাঠাগার ও জাদুঘর। পথ ধরে আরো এগুলো বঙ্গবন্ধুর সমাধি। এই সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গিপাড়ায়। প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী আসে এখানে।
জনশ্রুতি আছে, পারস্য থেকে কয়েকজন মুসলিম সাধক এই এলাকার প্লাবিত অংশে টং বেঁধে বসবাস করতে থাকেন। কালক্রমে ওই টং থেকেই এ এলাকার নামকরণ হয় টুঙ্গিপাড়া। এই টুঙ্গি পাড়াতেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। পরের দিন টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে মা ও বাবার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৩৮ দশমিক ৩০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বোর্ডের পরামর্শে এই সমাধিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজ করা হচ্ছে। টুঙ্গিপাড়ার বাইগার নদের পাড়ে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক কবরস্থান ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এ কমপ্লেক্স। গ্রিক স্থাপত্য শিল্পরীতির ছোঁয়ায় লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত এ সৌধের কারুকাজে ফুটে উঠেছে বেদনার চিহ্ন। কমপ্লেক্সের সামনে, দুই পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর কবর। পাশে তার বাবা ও মায়ের কবর। এই তিন কবর নিয়েই গড়ে উঠেছে গোলাকার গম্বুজবিশিষ্ট মূল সমাধিসৌধ। সমাধিসৌধের উপরের দেয়ালে জাফরি কাটা। সব সময় আলোছায়ার মায়াবী খেলা সেখানে। উপরে থাকা কারুকাজ করা কাঁচের ভেতর দিয়েও আলো ছড়িয়ে পড়ে সমাধিতে। চারদিকে কালো, মাঝখানে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবর বাঁধানো। উপরের অংশ ফাঁকা।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই সমাধিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাইগার নদের পাড়ে প্রায় ৩৯ একর জমির ওপর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ সমাধিসৌধ নির্মাণ করে।
সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, পাঠাগার, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, কাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর, উন্মুক্ত মঞ্চ, স্যুভেনির কর্নার, ফুলের বাগান এবং কৃত্রিম পাহাড়। পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার লেখা বইসহ প্রায় ৬ হাজার বই রয়েছে। এছাড়া মুক্তিসংগ্রামের নানা পর্যায়ের দেশ-বিদেশ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র। বঙ্গবন্ধুকে যে কফিনে করে ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে সযত্নে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমাধিসৌধ খোলা থাকে। পাঠাগার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধুর আদি পৈত্রিক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, শেখ বাড়ি জামে মসজিদ (স্থাপিত হয়েছে ১৮৫৪ সালে) ইত্যাদি। আছে হিজলতলা ঘাট, যেখানে বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় গোসল করতেন। বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’। সেখানেও ঘুরে আসা যায়। সময়ের অভাবে আমরা সেখানে যেতে পারিনি।
হঠাৎ স্বপন অসুস্থ
আমি গাড়ি জার্নি করতে পারি না। বমি না আসলেও বমিভাব খুব কষ্ট দেয়। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা জার্নির পর আমরা ঝালকাঠি জেলার একটি অঞ্চলে সন্ধ্যার নাস্তা খাওয়ার জন্যে গাড়ি থামালাম। ভালো কোনো হোটেল না থাকায় ৭/৮ জন করে বিভিন্ন দোকানে নাস্তা খাচ্ছে। আমিও একটি দোকানে চা পান করছিলাম। আমার পাশেই সৌরভ ভাই। হঠাৎ তার কল আসলো। তিনি ইন্নালিল্লাহ বলার সাথে আমার ভেতর দুশ্চিন্তা প্রবেশ করলো। না জানি কে মারা গেলো। কল কাটার পর ভাই বললো, স্বপন অসুস্থ হয়ে পড়েছে, যেতে হবে--চলো। তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে আসলাম। এসে জানতে পারলাম। স্বপন বমি করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। তার অবস্থা খারাপ দেখে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। সবার নাস্তার বিল মিটিয়ে দিয়ে দ্রুত সবাই রওয়ানা দিলাম পশ্চিম চাঁদকাঠি, ঝালকাঠির মোর্শেদ মেডিকেল সেন্টারে। স্বপনকে মোটামুটি সুস্থ করতে সময় লেগেছে ঘণ্টাখানেক। গাড়ি পরিবর্তন করে নোমান ভাইয়ের গাড়ি থেকে স্বপনকে আমার গাড়িতে দেয়া হয়েছে। কারণ এ গাড়িতে একজন ডাক্তার আছেন। তিনি হলেন সৌরভ ভাই। গাড়ি পরিবর্তনের বিষয়ে একটি ঘটনা আছে। ঘটনা বলার আগে স্বপনকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ হলো, স্বপন অসুস্থ হওয়ার কারণে ঝালকাঠিতে কিছু সময় অবস্থান করতে পারলাম। ঝালকাঠিতে আছে কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা আবার আসিব ফিরে কবিতার ধানসিঁড়ি নদীটি।
ঘটনাটি হলো : আল্লার বিচার
এবারের সিট প্ল্যান সভাপতি নিজেই করেছেন। যখন করেছেন তখন আমাকে সাথে রাখেন নি বা বলেন নি। পরে বুঝেছি নোমান ভাই এবং মশিউর ভাইয়ের সাথে বসে করেছেন। তার প্রমাণ পেলাম যখন আমি আমার গাড়ির কিছু ব্যক্তিকে অন্য গাড়িতে দিয়ে নোমান ভাইয়ের গাড়ি থেকে ১/২ জনকে আমার গাড়িতে আনলাম। সভাপতি সিট প্ল্যান লিখিতভাবে করে আমাকে দেখালেন এবং কম্পোজ করতে বললেন। তখন আমি বলেছি, ভাই আমি আমার গাড়িতে কিছু পরিবর্তন আনবো। যখন সিট প্লানের কথা হচ্ছে, তখন কয়েকজন আমার গাড়িতে বসার ইচ্ছা পোষণ করেছে। আমি তাদেরকে আশ্বাসও দিয়েছি। তাদের ইচ্ছামাফিক আমি আমার গাড়ির সিট প্ল্যান করলাম। ভ্রমণের দুদিন আগে সেটা সভাপতিকে দেখাই। সভাপতি কিছুটা গরম দেখিয়ে বললেন, নোমান-মশিউরসহ চাইছে তাদেরকে সে গাড়িতে রাখতে। আমি বললাম, ঠিক আছে, তাহলে মাত্র একজন পরিবর্তন করেন। ঐ একটি পরিবর্তন করে সিট প্ল্যান আবার সংশোধন করি। মজার ব্যাপার হলো, যখন গাড়িতে উঠবো তখন মশিউর রহমান সিন ক্রিয়েট করে বসলেন ঐ একজনকে নিয়ে। সেই বিখ্যাত ব্যক্তিকে তাদের গাড়িতে দিতেই হবে। আমি বললাম, সিট প্ল্যান পরিবর্তন করা যাবে না। তিনি বললেন ‘সে’ তার সাথে যেতে চায়। আমি অবাক হলাম, ১০/১২ দিন ধরে তারাই পরিকল্পনা করলো আমার গাড়িতে কে কে যাবে। বললাম, ঠিক আছে ডাকেন তাকে, সে যদি আপনার গাড়িতে যেতে রাজি হয় আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে তার অভিব্যক্তি পরিবর্তন করে নিলো। পরিবর্তন করছে এটা কোনো সমস্যা না, সমস্যা হলো, সে নাকি আমার গাড়িতে যেতেই চায়নি। নতুন করে চিনলাম তাকে। আল্লার কি চমৎকার বিচার। যারা এরকম করলো। পথিমধ্যে তারাই স্বপনসহ তাকে আমাদের গাড়িতে ঠেলে পাঠিয়ে দিলো। তার চোখে চোখ পড়তেই সে লজ্জায় আমার সামনে থেকে সরে গেলো, রেখে গেলো শুধু স্বপনকে। বাকি পথ স্বপন আমার সাথেই ছিলো। আমাদের গাড়িতেও সে বমি করেছে। তারপরও সে আমাদের কাছেই ছিলো। আমাদের গাড়ির একজন সামনের সিট তার জন্যে ছেড়ে দিয়েছে। সেই বিখ্যাত পীরসাবের নাম নাই বললাম। শত হলেও তার একটা ইজ্জত আছে।
নতুন খাবার এবং ফারুক ভাইয়ের চা ছ্যাঁকা
স্বপনকে মোর্শেদ মেডিকেল সেন্টার থেকে গাড়িতে তুলে আমরা আবার চলতে শুরু করলাম। চিকিৎসা বাবদ আমাদের ১ ঘণ্টা ব্যয় হলো। স্বপন অসুস্থতার কারণে গাড়ি আর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। আমরা এসিও দিতে পারছি না, জানালাও খুলতে পারছি না। স্বপনের জন্যে সব কষ্ট সহ্য করে নিলাম। এভাবে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম পটুয়াখালী। লেবুখালীর ইউনিভার্সিটি স্কয়ার এলাকায়, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত ‘দি বিরতি রেস্টুরেন্ট’-এ। এখানে আমরা রাতের খাবার খেলাম। এখানকার আরেকটা অদ্ভুত নাম আছে। তা হলো ‘পাগলার মোড়’। এখানে এসে প্রথম একটি খাবারের স্বাদ পেলাম। যদিও এটা দেশের প্রায় সব খানেই তৈরি হয়। ডিমের রোস্ট স্বাভাবিক খাবার হলেও আমি প্রথম খেলাম। ভালোই লাগলো। রাতের খাবার সেরে রাস্তায় আসতেই সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ফারুক ভাই এবং জনকণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি মানিক পাঠান ভাইয়ের সাথে দেখা। ফারুক ভাই বললেন, ফরহাদ ওই দোকানের দুধ চায়ের স্বাদ অসাধারণ। আমার জীবনেও এতো স্বাদের চা খাইনি। মনে হয় স্বাদ লেগেই আছে। খুঁজতে খুঁজতে সেই দোকানটি পেলাম। দোকানটি চিনাতে সাহায্য করেছে বন্ধু নজরুল। যিনি দন্ত্যন ইসলাম নামে লেখালেখি করেন। চায়ের অর্ডার দিলাম। পান করলাম। কিন্তু ছ্যাঁকা খেলাম, কোনো স্বাদতো নেই, শুধু শুধু মুখ নষ্ট করলাম। দৌড়ে আসলাম ফারুক ভাইয়ের কাছে কিন্তু তাকে পেলাম না। কারণ আরো আগেই তাদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে কুয়াকাটার পথে।
কুয়াকাটা
আমরা কুয়াকাটার খুব কাছেই অবস্থান করছি। আমাদের গাড়িও চলছে রাতের নিস্তব্ধতাকে মাড়িয়ে। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত, যা পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি লম্বায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) এবং বিস্তৃতিতে ৩ কিলোমিটার (১.৯ মাইল)। এই সৈকতের বিশেষত্ব হলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। কুয়াকাটার সাদা বালির সৈকতের তীর থেকে বঙ্গোপসাগরের সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। এর আরেক নাম সাগরকন্যা। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেখা যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। সৈকতের পূর্ব দিকে গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন অবস্থিত। এই বন আগে বৃহত্তর সুন্দরবনের অংশ ছিলো, যা এখন কুয়াকাটার তীরকে ঢাল হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে।
কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরকানদের এদেশে আগমনের সাথে জড়িত ইতিহাস। ‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে ‘কূপ’ থেকে। কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। জনশ্রুতি আছে, ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে বার্মিজ রাজা বোদ্রোপা আরাকান জয় করে রাখাইনদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। ১৫০টি রাখাইন পরিবার বার্মিজদের হাত থেকে মুক্তির জন্যে ৫০টি নৌকায় তিনদিন তিনরাত বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানাধীন মৌডুবি এলাকায় উপস্থিত হন। উক্ত অঞ্চলটি তখন বন জঙ্গলে ভর্তি ছিল। তারা বনের হিংস্র জীব জন্তুর সঙ্গে যুদ্ধ করে, জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে ধান ফল-মূলের বীজ বপন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তখন ওই বনের কোন নাম ছিল না, থাকলেও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন তার নাম জানত না। যার ফলে সাগর পাড়ি দিয়ে ওই স্থানে বসবাস শুরু করায় রাখাইন ভাষায় তারা নামকরণ করে কানশাই। কিন্তু রাখাইন লোকজন এখানে বসবাস করলেও তাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় পানি। সাগরের পানি লবণাক্ত হওয়ায় তা খাওয়া সম্ভবপর ছিল না। এজন্যে তারা নিজ উদ্যোগে একটি কুয়া খনন করে তা থেকে মিঠা পানি পান করত। শুনেছি, কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় গঙ্গামতিতে ইকোপার্ক ও বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কুয়াকাটা উন্নয়নের জন্যে মাস্টার প্লানের কাজ চলমান রয়েছে।
মন খারাপের রাত
রাত ১২টার পর আমরা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে উঠলাম। নাম ‘হীড বাংলাদেশ’। রুমে রুমে প্রবেশ করে দেখি সবার মন খারাপ। কারণ ভ্রমণে গেলে আমরা সাধারণত যে হোটেলগুলোতে উঠি, এটা তার থেকে নিম্নমানের। তাছাড়া প্লাস্টার ওঠা দেয়াল। নরমাল ওয়াশরুম, সেই সাথে দুর্গন্ধ ফ্রি। বেড কভারের কথা আর নাইবা বললাম। তিন তলা ভবনের ২/৩টি রুম ছাড়া বাকি রুমের যাচ্ছেতাই অবস্থা। প্রায় সবার মন খারাপ। ঘুরে ঘুরে সবার রুম দেখতে গিয়ে আমার রুমই ফেলাম না। বাধ্য হয়ে অন্যদের রুমে উঠলাম। যে রুমে ডাবল বেড রয়েছে ৭টি। ১৪ জনের একটি ওয়াশরুম। আর আমি ঘুমিয়েছি বাথরুমের ঠিক পাশেই। ও-রে গন্ধরে। মনে থাকবে অনেকদিন। যে দুজন এই হোটেল ঠিক করেছে তাদেরকে কিছু না বলে সবাই আমার কাছে এসে অভিযোগ করলো। পরদিন সকালে সভাপতিকে বললাম, ভাই হোটেলে থাকা যাবে না। আজ অন্য হোটেল ঠিক করতে হবে। তিনি বললেন, আমার আপত্তি নেই। আমিও চাই হোটেল পরিবর্তন করতে, কিন্তু অনেকেই বলছে এখানেই থাকবে। অবশেষে ২য় রাতও এখানেই কাটিয়েছি। সকাল ৮টায় রওয়ানা দিয়ে হোটেলে উঠতে হয়েছে রাত ১২টার পর, মানে প্রায় ১৬ ঘণ্টারও অধিক জার্নি! এতো সময় জার্নি করে যদি শান্তির ঘুম না যাওয়া যায় তাহলে খারাপ লাগারই কথা। টয়লেটের গন্ধে ঘুম না আসায় বিচে চলে গেলাম। রাত ৩টার দিকে হোটেলে আসলাম।
কুয়াকাটার নৈসর্গিক সৌন্দর্য
কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোরেই হোটেল থেকে বের হয়ে গেলাম। বিচ থেকে মোটর বাইক ভাড়া করে ঘুরতে বের হয়ে গেলাম। কুয়াকাটার অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন। যা শুধু দেখলেই উপভোগ করা যায়। সূর্যোদয়ের সময় মনে হয় বিরাট এক অগ্নিকুণ্ড আস্তে আস্তে সাগর ভেদ করে আসমানের দিকে উঠে যাচ্ছে। আবার সূর্যাস্তের সময় সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সূর্য। মনে হয় সাগরের মধ্যেই সূর্যের বাড়ি ঘর। দৃশ্যগুলো চোখ বন্ধ করে কল্পনায় দেখে নিলাম। কারণ এদিন ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিলো কুয়াকাটার আকাশ। তাই সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা হলো না। আসুন কল্পনায় আরো কিছু দেখে নেই। পূর্ণিমার রাতে সী-বিচের সৌন্দর্য সবকিছুকে হার মানায়। চাঁদের আলোয় বিশাল বিশাল ঢেউ যেন কাছে ডাকে। আর অমাবস্যায় অন্ধকার রাতে দেখা যায় আরেক দৃশ্য, ফসফরাসের মিশ্রণে সাগরের ঢেউগুলো থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ছড়ায়। কুয়াকাটার সী-বিচের সৌন্দর্য লিখে শেষ করা সত্যিই খুব কঠিন ব্যাপার। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গা-মতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।
আমি আর জাহিদ দুদিন বসে অনেক স্টাডি করে ঘোরার একটা পরিকল্পনা করেছি। সভাপতি আর সাবেক সভাপতি (নোমান ভাই) ঐখানকার এক কাউন্সিলের কথায় আমাদের পরিকল্পনা দিলেন বাতিল করে। এর পরিবর্তে উনারা কোনো পরিকল্পনা দেননি। কোনো রকম দিক-নির্দেশনা না পেয়ে যে যার মতো বেরিয়ে পড়লেন। আমিও একা বের হলাম। চিন্তা, ভোরের সৈকত দেখে রুমে চলে আসবো। রাস্তায় দেখা হয়ে গেলো সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল মুশফিক আর প্রকাশনা সম্পাদক ইমাম হোসেন সৌরভ ভাইয়ের সাথে। সৈকতে এসে দেখি অনেকেই সেখানে। সবাই মিলে ধরলো বাইকে করে ঘুরাতে নিতে। আমি বললাম এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না। সভাপতির পরামর্শ ছাড়া যাওয়া যাবে না। তারা খুব করে ধরলো। তাদের বোঝাতে না পেরে সভাপতিকে কল দিলাম, কিন্তু তিনি ধরছেন না। বাধ্য হয়ে নোমান ভাইকে কল দিলাম, কারণ উনারা একই রুমে। নোমান ভাই বললো, সভাপতি ঘুমাচ্ছেন। উনার পরামর্শ চাইলাম, তিনি বললেন যেতে পারো। বুঝতে পারলাম ঘোরার এখনো কোনো পরিকল্পনা হয়নি। আরো বুঝতে পারলাম তাদের আশায় বসে থাকলে ঘোরা হবে না। তাই আমি ঐখানে উপস্থিত প্রায় ২০ জনকে সাথে নিয়ে বাইকে করে ঘুরতে বের হলাম। পরে জানলাম প্রায় সবাই বাইকে করেই ঘুরেছে। খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো, তাহলে কেন আমাদের দুই দিনের পরিশ্রমের ভ্রমণ পরিকল্পনা কেন বাতিল করা হলো! সেইতো বাইকেই ঘোরা হলো। শুধু একসাথে ঘোরা হলো না। আমাদের ঐ কাউন্সিলর ভাই বলেছিলন, আমরা যে গাড়ি নিয়ে গেছি সেগুলোতে করেই নাকি ঘোরা যাবে। অথচ যারা ঘুরেছেন তারা বলতে পারবেন, সব জায়গায় যেতে হলে মোটর বাইকের বিকল্প নেই।
গঙ্গামতি
গঙ্গামতি নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর নাম। বিশেষ করে সাহিত্যপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে নামটি। আর এ সুন্দর নামটিকে আরও সুন্দর করেছে এখানকার অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য। প্রকৃতি নিপুণ হাতে নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে এ চরটি। বিশাল আয়তনের সবুজ বেষ্টনীর মাঝখান দিয়ে সমুদ্র মিলিত লেকটি বলা যায় গঙ্গামতির অলংকার। গঙ্গামতি চর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত। এখানে রয়েছে স্বচ্ছ নীল জলরাশির একাধিক লেক আর প্রাকৃতির কারুকাজ খচিত বিশাল বেলাভূমি। গঙ্গামতির লেক ধরে আগত পর্যটকরা স্পিডবোট, ট্রলার অথবা নৌকা নিয়ে ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। খুব সকালে গঙ্গামতি সৈকতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বুক চিরে সূর্যোদয় দেখার স্বপ্নিল অনুভূতি এনে দেয় এক স্বর্গীয় আবেশ। সূর্য লাল আলো ছড়িয়ে দেয় গঙ্গামতির বেলাভূমিতে।
লাল কাঁকড়ার চর
সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি উচ্ছল করে তোলে অন্তর। ক্ষুদ্র কাঁকড়ার নিপুণ হাতে আঁকা নিখুঁত আল্পনা দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় পল্লিকবি জসিম উদ্দিনের নকশিকাঁথার মাঠে। গাছে গাছে বানরের লাফালাফি, শেয়ালের ডাকাডাকি আর লুকোচুরি, শূকরের দুরূহ দন্ত দিয়ে মৃত্তিকা গর্ভের কেঁচো ধরে ভোজনের দৃশ্য দেখা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। বন মোরগের দুরন্তপনা নন্দিত করেছে গঙ্গামতি। কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাইনসহ কয়েকশ প্রজাতির বৃক্ষরাজি চির সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছে এ চরে। গাছে গাছে পাখির কলরবে মুখরিত থাকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। গহীন বনের ভেতর থেকে ছোট ছোট খালগুলো লেকের সঙ্গে মিলিত হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। জোয়ারের পানি বাগানের বৃক্ষরাজির মূল ভিজিয়ে দেয়। ভাটার স্রোতের টানে বনের শুকনো পাতা ও গাছ থেকে জড়ে পড়া ফুলগুলো পাড়ি জমায় অজানা ঠিকানায়। ফলে ভাটার সময় লেকটি আরও সুন্দর লাগে। সমুদ্র কন্যা কুয়াকাটায় এসে গঙ্গামতি না গেলে পর্যটকদের ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যায়। কুয়াকাটা জিরোপয়েন্ট থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যেতে হয় গঙ্গামতির চরে। গঙ্গামতি গেলে অবশ্য সঙ্গে হালকা খাবার ও পানি থাকলে ভালো হয়। কারণ ওখানে গেলে অল্পতে ফিরতে মন চায় না কারো।
কলাপাড়ায় গঙ্গামতি পর্যটনপল্লী ঘেঁষা দীর্ঘ সৈকতে রয়েছে লাল কাঁকড়ার নয়নাভিরাম বিচরণ। এ জন্যে গঙ্গামতির খ্যাতি রয়েছে লাল কাঁকড়ার চর হিসেবে নামকরণের মধ্যে। গঙ্গামতি সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটার খাজুরা থেকে খালগোড়া পর্যন্ত আন্ধারমানিক মোহনার বেলাভূমে লাল কাঁকড়ার বিচরণ চোখে পড়ে। নতুন সৃষ্ট, কুয়াকাটার অদূরে চরবিজয়ে রয়েছে লাল কাঁকড়ার বিচরণভূমি। সে এক অপূর্ব বিরল দৃশ্য।
কাঁকড়ার সাথে সূর্যের একটা সম্পর্ক আছে। অনেকেই ভোরে বা সকালে লাল কাঁকড়া দেখার জন্যে চরে যান, কিন্তু তাদেরকে হতাশ হতে হয়। বিষয়টি হলো, সূর্যের তাপে বালু উত্তপ্ত হয়ে গেলে কাঁকড়া বাইরে বের হয়ে আসে। আর সেই সময়টাতেই লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ি উপভোগ করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার উপস্থিতি যেন কোনো ভাবেই তারা টের না পায়। আপনার উপস্থিতি তারা বুঝতে পারলেই গর্তে চলে যাবে। এই লাল কাঁকড়ার চরে আপনাকে বাইকে করে যেতে হবে। ভাটার সময় পানি কিছুটা নেমে গেলে অসংখ্য লাল কাঁকড়া মিছিল নিয়ে ছুটে চলে। এঁকেবেঁকে পুরো বেলাভূমিতে যেন তারা আলপনা আঁকছে। সৈকতে কাঁকড়াদের বিচরণ দেখলে মনে হয়, দীর্ঘদিন পর ‘বেদখল’ হয়ে যাওয়া বেলাভূমি পুনরুদ্ধার করেছে লাল বাহিনী।
কাঁকড়া আর্থ্রোপোডা পর্বের একটি ক্রাস্টাসিয় প্রাণী। লাল কাঁকড়া এটার একটি প্রজাতি। এ পর্যন্ত কাঁকড়ার ৬,৭৯৩টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। লাল কাঁকড়া সাইজে খুবই ছোট্ট হয়। এরা কোনো কিছুর শব্দ পেলেই নিমিষেই ভোঁ দৌড়ে গর্তে ঢুকে পড়ে। স্থানীয়দের দাবি, ঘূর্ণিঝড়ে কুয়াকাটায় লাল কাঁকড়ার বিচরণ এলাকা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আর তাই যদি হয়, এর জন্যে স্পট এবং এরিয়া নির্দিষ্টকরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে মনোলোভা এ দৃশ্যসহ জীববৈচিত্র্য পরিবেশ-প্রতিবেশ সব হারিয়ে ফেলবো আমরা। কোনো কোনো পর্যটক লাল কাঁকড়া ধরতে ধাওয়া করেন লাল কাঁকড়ার সারিবদ্ধ দলকে। ধাওয়া করতে গিয়ে কেউ কেউ মেরে ফেলছেন। কেউবা ওদের আবাস বেলাভূমের গর্ত নষ্ট করে দিচ্ছেন। সৈকতজুড়ে মোটর সাইকেল চলাচল কাঁকড়ার জন্যে ক্ষতিকর। এখন লাল কাঁকড়ার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখতে কিংবা এদের গতি প্রকৃতি, দৌড় দেখতে বিজ্ঞান ও পরিবেশ সম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করা সময়ের দাবি। নইলে লাল কাঁকড়া হারিয়ে যাবে। দূর থেকে বাইনোকুলারসহ যে কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখা উচিত। এমন সতর্কতা সংবলিত সাইনবোর্ড ঝুলানো প্রয়োজন। লাল কাঁকড়ার চর বিচরণে পর্যটক-দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের করণীয় বিষয় সংবলিত সাইনবোর্ড দেয়া যেতে পারে। এটির বাস্তবায়ন করতে এখনই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বনবিভাগকে এ জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। পর্যটককে বোঝাতে হবে আপনি এঁদের (কাঁকড়া) প্রতি সদয় হোন। প্রকৃতিকে চুপি চুপি দেখতে হয়। সচেতন করার বিকল্প নেই।
শুঁটকি পল্লি
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় উৎপাদিত হচ্ছে অর্ধশত প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি। তবে গত কয়েক দশকে শুঁটকি উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবস্থার পরিধি বাড়লেও এই শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। শুঁটকি উৎপাদনের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের কোনো স্থায়ী ভূমি নেই, যেখানে তারা মাছ শুকাবে। এছাড়া রয়েছে বিনিয়োগের অভাব। এ দুটিকেই প্রধান কারণ মনে করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। তবে সরকারের সহযোগিতা পেলে এই শিল্পটিও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে কিছুদূর পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে সারি সারি শুঁটকির মাচা। বছরে ৪ থেকে ৫ মাস এখানেই শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এই সময়ে লইট্টা, ফেঁসে, ছুরি, পোমা, রূপচাঁদা, ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা ৫০’র অধিক প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন করলেও লইট্টা এবং চিংড়ির চাহিদা সব থেকে বেশি। আর নির্দিষ্ট কয়েক মাস শুঁটকি উৎপাদন করা হলেও কুয়াকাটার শতাধিক শুঁটকির দোকানে সারা বছরই বেচা বিক্রি চলে। এর বাইরে বিভিন্ন জেলাতেও এখানকার শুঁটকির বাড়তি চাহিদা রয়েছে। এখানে এখনও সনাতন পদ্ধতিতেই শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। যার ফলে লাভ লোকসানের দোলাচালেই দশকের পর দশক এই ব্যবসা করছেন তারা। কুয়াকাটাসহ জেলার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত এই শুঁটকির বাজারটি মূলত পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল।
গত এক দশকে দেশের মৎস্য শিল্পের উন্নয়নে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তেমনিভাবে শুঁটকি শিল্পের উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিলে এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। তাহলেই এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে।
লেম্বুর বন
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে মোট ২৫টি ভ্রমণের স্পট রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি স্পট মোটরবাইক, অটোরিকশা, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, মাইক্রো দিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন। টুরিস্ট ভোট দিয়ে সমুদ্রপথে ৭টি ভ্রমণ স্পট রয়েছে। এই ১৫টি স্থানের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হলো লেম্বুর বন বা লেবুর বন। লেবুর বন নিয়ে রয়েছে ছোট্ট একটি গল্প। লেবুর বন নাম শুনলে আপনি মনে করবেন এখানে হয়তো লেবু গাছের বাগান, অথবা এ জাতীয় কিছু একটা। অথবা লেবু বাগানের অসাধারণ কিংবা ব্যতিক্রমী কিছু দেখানো হয় বা পাওয়া যায়, এমনটা কল্পনা করে থাকতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে আপনার কল্পনার তেমন কিছুই নেই লেবুর বনে।
লেম্বু ছিল রাখাইন সম্প্রদায়ের একটা মেয়ের নাম। এক সময় তাদের বসতবাড়ি ও বাগান ছিল এখানে। সমুদ্রের করাল গ্রাসে তাদের সেই ঘরবাড়ি জমি-জিরাত সবি হারিয়ে গেছে। রয়ে গেছে শুধু বাগান এলাকার কিছু অংশ। আর নামটাও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে লাগলো। মানুষের প্রচারণা বেড়ে যাওয়ায় পরে লেম্বু থেকে লেবুর বনে পরিচিতি লাভ করে।
এই অপরূপ স্থানটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে, আন্ধারমানিক নদী আর সাগরের মোহনার কাছে। ওপারে ফাতরার বন। একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালেই দেখতে পারবেন, ফাতরার বনের সবুজ বেষ্টনী। যা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একই পথে আরো ৬টি স্পট উপভোগ করতে পারবেন। যেমন- শুঁটকি পল্লী। কিছুদূর গেলে সমুদ্রের জলের সাথে দেখতে পারবেন ঝিনুক চর। আরো কিছু পথ অতিক্রম করার পরে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে লালগালিচা বিছিয়ে রেখেছে ‘লাল কাঁকড়া’। লাল কাঁকড়া চরের পাশেই ঝাউবনের শাঁ শাঁ শব্দ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
ঝাউবন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থান হলো ঝাউবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের কারণে সৈকতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে সৈকতের পাশের ঝাউবনের গাছ ও সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বেশি উচ্চতার জোয়ারে সৈকতের সহস্রাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এদিকে কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন করে বাগান সৃজন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আগ্রহ হারাচ্ছে বন বিভাগ। ২০০৫ সালে সরকার কুয়াকাটা বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। কুয়াকাটা বনের আয়তন ৫ হাজার ৬৬১ হেক্টর। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে প্রাকৃতিক বনসংলগ্ন সৈকতঘেঁষা ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ঝাউবাগান গড়ে তোলা হয়। কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া বনাঞ্চলে ২০১০ থেকে ২০১২ অর্থবছর পর্যন্ত নতুন বাগান সৃজন করা হয়েছিল। পরে গত বছর গঙ্গামতি এলাকায় ৪০ হেক্টর ভূমিতে ঝাউবাগান করা হয়।
সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে গাছের মূল থেকে বালু সরে শিকড় বের হয়ে যাচ্ছে। স্যাঁতস্যাঁতে বালুর সৈকতে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে বালুর ওপর লুটিয়ে পড়ছে বড়ো বড়ো গাছ। ভাঙ্গনের কারণে সড়কটি ছোট হয়ে আসছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বনের গাছ। ভাঙ্গন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হারাবে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এক সময় সৈকতঘেঁষা নারকেল ও তালবাগানের সারি সারি গাছ ছিল। এতে কুয়াকাটা পর্যটকদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় ছিল। সৈকতে ভাঙ্গন ও সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে তালবাগান বিলীন হয়ে গেছে। নারকেল বাগানটিও এখন এক প্রকার বিলুপ্ত।
বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দিরটি। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙ্গে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনো আছে প্রায় ৩৭ মণ ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি। সীমা বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রাখাইনদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুনন। রাখাইনদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়। ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ মূর্তির মন্দিরের নির্মাণ সৌন্দর্যে ইন্দোচীনের স্থাপত্য অনুসরণ করা হয়েছে। দেখলে মনে হবে থাইল্যান্ড, লাওস বা মিয়ানমারের কোনো মন্দির। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উঁচু বেদির উপর মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৮৩ বছর পূর্বে অষ্টধাতুর মূর্তিটি ওই স্থানে স্থাপন করা হয় বলে রাখাইন সম্প্রদায়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়। প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার এ বৌদ্ধ মূর্তিটি স্থাপন করেন উপেংইয়া ভিক্ষু।
তপু ভাই
মোঃ তোফায়েল আহম্মেদ (তপু), কুয়াকাটা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। অল্প সময়ের মধ্যে যিনি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্যের ভক্ত বনে যান। চমৎকার আতিথেয়তা জানেন তপু ভাই। চাঁদপুরের মানুষ পেলে নিজেকে উজাড় করে দেন, বিশেষ করে ফরিদগঞ্জের মানুষ পেলে। কারণ নাড়ীর টান, উনার বাড়ি যে ফরিদগঞ্জ। তপু ভাই একজন সফল (জাগতিক) মানুষ। সামান্য সেলসম্যান থেকে আজ তিনি সমাজপতি। ফরিদগঞ্জে যখন ছিলেন, তখন একটি দোকানের সেলসম্যান ছিলেন। একটা সময় কুয়াকাটায় চলে যান। সেখানে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে বনে যান জননেতা এবং বড় ব্যবসায়ী। বলেনও চমৎকার।
তপু ভাইয়ের ব্যবস্থাপনায় কুয়াকাটা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করন। ২য় রাত কাটানোর পর সাংবাদিকদের নিয়ে মজার বিনোদন আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। ৪র্থ দিন সকালে আমরা কুয়াকাটা ত্যাগ করি। সকাল সকাল আমরা পায়রা সমুদ্র বন্ধুর উপস্থিত হই। সেখানে সবাই কিছু অবস্থান করে ফরিদগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ান দেই।
র্যাফেল ড্র ও ফিচার প্রতিযোগিতা
প্রতি বছর ভ্রমণে র্যাফেল-এর আয়োজন থাকে। গত বছরের মতো এবারও ভ্রমণ শেষে প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে র্যাফেলের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এবারই প্রথম ভ্রমণ নিয়ে ফিচার লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট বিষয় এবং শব্দ বেঁধে দিলাম। ফিচার লেখা প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন কে.এম. নজরুল ইসলাম।
লেখক পরিচিত : সাধারণ সম্পাদক, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব; প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক : ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম।