সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০

মহৎ কাজে অসৎ উদ্দেশ্য
অনলাইন ডেস্ক

দান হলো সবচেয়ে মহৎ কাজ। মানুষের কল্যাণে নিজের ধন সম্পদ টাকা পয়সা ব্যয় করাকে দান বলে। আমরা কেন দান করি, কেন দান করি না এ বিষয়ে নানা জনের নানান রকমের বক্তব্য রয়েছে। মূলধারার অর্থ শাস্ত্র বলে, মানুষ স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া আর কিছু করে না।

বিষয়টা এমন যে, আমি তোমার জন্য কিছু করলে তোমাকেও আমার জন্যে কিছু করতে হবে। দান করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, সমাজ ও নিজের চোখে মহৎ হবার আনন্দ লাভ করেন।

পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর হাতে প্রচুর পরিমাণে সম্পদ, খাদ্যশস্য ও ওষুধ রয়েছে। অন্যদিকে পৃথিবীর দরিদ্র দেশের মানুষরা খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। ধনী দেশগুলো খাদ্য ও ওষুধ দেবার পরিবর্তে গোলা বারুদ, অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধ জাহাজ, বোমারু বিমান, মিসাইল, ট্যাংক, রকেট দিতে আগ্রহী। কে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এই লড়াইকে কেন্দ্র করে দেশে দেশে ধনী দেশগুলো যুদ্ধ সংঘটিত করে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়ে চলছে। এরা মানুষের স্বাধীনতায়, মত প্রকাশে, নির্বাচনে, সম্পদের সুষম বণ্টনে, মানবাধিকার রক্ষায় অনেক বেশি সোচ্চার। ধনী দেশগুলো সাহায্য করার নামে গরীব দেশটির আনুগত্য, নিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব, দখল নেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে আছে। আর যেসব দেশ ধনী দেশগুলোর আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ মেনে চলতে অস্বীকার করবে, তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে দিবে।

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে প্রায় একই ধরনের আচরণ লক্ষ্য করা যায়। কিছু ধনী মানুষ আছেন, তারা নিজেদের আমোদণ্ডআহ্লাদ, ফুর্তি করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। বিশাল খাবারের আয়োজনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। নানান পদের দুষ্প্রাপ্য খাবারের আয়োজন ধনী ব্যক্তির মান সম্মান বাড়িয়ে দেয়। আগত অতিথিরা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে।

ধনীরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে দামী অলংকার, হীরা জহরত, গয়না, শাড়ি চুড়ি, স্যুট কোট, জামা জুতো, প্রসাধনী সংগ্রহ করেন। কোনো কোনো জিনিসপত্র বছরের পর বছর আলমারিতে পড়ে থাকে দেখার সুযোগ পর্যন্ত হয় না। প্রসাধনীগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। আলিশান বাড়িতে, দামী আসবাবপত্রে রাত্রিযাপনের সুখ পান। কোনো কোনো ধনী ব্যক্তি শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্যের বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষক হন। পত্রিকা, টেলিভিশনের মালিক হয়ে সমাজ বিকাশে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন।

অন্যদিকে দরিদ্র মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমাতে যায়। হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনি আর পুষ্টির অভাবে দ্রুত গতিতে যৌবন হারিয়ে যায়। ািকাতের শাড়ি লুঙ্গি আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে দুঃখজনক মৃত্যুবরণ করে। সুচিকিৎসার অভাবে অকালে বার্ধক্যে পৌঁছে। শীতের কম্বল ও গরম কাপড় চোপড় সংগ্রহের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কম দামে চাল ডাল, তেল, নুন, আটা, চিনি, পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করা মানুষের দেখা মিলছে।

ধনী মানুষ যেন আরো বেশি সহায় সম্পদের মালিক হয় সেজন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে দরিদ্র মানুষের আবেদন নিবেদন বাড়ছে। ধনীর দয়া-করুণা-কৃপার ওপর নির্ভর করে চাকরি বাকরিতে থাকতে তেলের ওপর ভরসা করে দিনযাপনের চেষ্টায় আছেন। ধনী মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দরিদ্র মানুষ নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হন। বেশি অবাধ্য দরিদ্র মানুষ সহায় সম্পদ হারানোর সাথে জীবন হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন। মূলত দরিদ্র মানুষ বেঁচে থাকে ধনী মানুষের সুখণ্ডশান্তি, সহায় সম্পদ, মান মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য।

ধনী মানুষদের একটা অংশ মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করে। মহৎ কাজের মধ্যে দান, ধর্মীয় কাজে দান, চিকিৎসা সেবায় দান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করতে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিকে দেখা যায়। মহৎ কাজের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ সহজ।

পৃথিবীতে মানুষ শুধুমাত্র দাতার প্রশংসা শুনতে চায়। তাই ধনীদের মধ্যে দাতা হবার প্রবণতা বেশি। মানুষই মনে হয় একমাত্র প্রাণী, যে প্রশংসা ছাড়া বাঁচতে পারে না। সেজন্যে ধনী মানুষ নানান কায়দা কানুন করে মেধাবী মানুষের আনুগত্য আদায় করে। আশপাশে চাটুকার, দালাল, সরবরাহকারী, মোসাহেব পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে পছন্দ করেন। ধনী মানুষ চান মানুষ তার বন্দনা করুক। অবাক বিস্ময়ে তার সহায় সম্পদের দিকে তাকিয়ে থাকুক।

সকল মহৎ কাজই প্রশ্নবিদ্ধ হয় যখন এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করে। মহৎ কাজ ব্যক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার কাজে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। অনেক সময় শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বল, চাল, ডাল, নগদ টাকা বিতরণের উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার করার জন্যে। দরিদ্র মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে একটা স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থাকে। আর কোনো স্বার্থ না থাকলেও পরকালে স্রষ্টার কাছ থেকে পুরস্কারের আশা থাকে। যে কোনো মহৎ কাজের জন্যে দান-অনুদান গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এসব দান-অনুদান গ্রহণকারীরা অনেক সময় অসততার পরিচয় দেন।

সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গরীব মানুষের নাম করে চাঁদা তোলারও একদল মানুষ আছেন। সংগৃহীত টাকা পয়সা গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করে নিজেদের মহৎ বানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। দেশের সকল মানুষের খাবার, আশ্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে। রাষ্ট্রকে এই কাজে চাপ সৃষ্টি করা কিংবা সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে আগ্রহ নেই।

প্রবীণদের জন্যে ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক যত ধরনের সেবামূলক কাজ আছে এগুলো সবই সরকার করে। সরকারের এসব সেবা সঠিকভাবে হয় না কিংবা অপ্রতুল মনে করে নিজেরা প্রবীণ সেবার কাজে মনোযোগী হতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত প্রবীণসেবার জবাবদিহিতা না থাকায় কেউ কেউ এটাকে ব্যবসা হিসেবে চালিয়ে যান।

রাষ্ট্রের সেবামূলক কাজগুলোকে আরো বেশি জনকল্যাণমুখী করার জন্যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সম্মিলিত উদ্যোগ থাকলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রে কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাবার দুঃখকে পুঁজি করে নিজেরাই সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে রাষ্ট্রের কার্যকারিতা কমতে থাকে।

মনে রাখতে হবে, সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দিন দিন ব্যক্তির ভূমিকা গৌণ হয়ে আসছে। মানুষের সকল রকমের চাওয়া পাওয়া পূরণ করবে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। মানুষের কল্যাণে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ভাই বোন, পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজনের মধ্যে থাকা সবচেয়ে উত্তম। নানান কারণে মানুষ এদের ওপর বিরক্ত থাকায় আগ্রহে ভাটা লক্ষ্য করা যায়। সরকার জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা, সেবা, খাবার, আশ্রয়, বিনোদন, গবেষণার জন্যে। আবার কিছু মানুষ একই কথা বলে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত জনগণের মাঝে আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হবে। মহৎ কাজে অংশ গ্রহণ করে অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করা জনগণের সাথে সবচেয়ে বড় প্রতারণার সমান কাজ হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়