সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০

বৃদ্ধাশ্রম-প্রবীণ নিবাস-নার্সিং হোম নিয়ে ভাবনা
অনলাইন ডেস্ক

যিনি কোনোদিন বৃদ্ধাশ্রম দেখেননি তিনিও বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কিছু না কিছু কথা বলেন। মানুষ ভয় পেতে এবং ভয় দেখাতে পছন্দ করে।

টেলিভিশনে, পত্রিকায়, ফেসবুকে, ইউটিউবে বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে বেশির ভাগ সময়ই নেতিবাচক সংবাদ থাকে। সেই সব সংবাদ প্রবীণদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। নিজের অবস্থান নিয়ে বড় বেশি ভাবনায় পড়ে। বৃদ্ধাশ্রমকে জেলখানা হিসেবে মনে করতে থাকে। প্রবীণদের মধ্যে একটা হাহাকার তৈরি হয়-হায়রে! শেষ বয়সে বুঝি বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হবে। বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে গান, গল্প, কবিতা, নাটক এই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে তোলে।

বৃদ্ধাশ্রম হলো, দৈনন্দিন কাজ কর্মে সক্ষম অসহায় প্রবীণদের ফ্রিতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর চলাচলে অক্ষম হওয়া প্রবীণদের দেখাশোনার জন্যে লোক থাকে। কিছু বৃদ্ধাশ্রমে নিজস্ব চিকিৎসা কেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ড বয় পর্যন্ত আছে।

বৃদ্ধাশ্রম দুই ধরনের। সরকারি ও বেসরকারি। সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি বিভাগে একটি করে বৃদ্ধাশ্রম করা হয়েছিল। সেখানে থাকার লোকজন না পাওয়ার কারণে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন সেগুলো সরকার সেইফ হোম হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকারের পরিচালিত শিশু পরিবারে অনেক শিশু আছে। বর্তমানে দেশের ৮৫টি শিশু পরিবারে ১০ জন করে প্রবীণকে বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সেসব শিশু পরিবারে বসবাস করা প্রবীণদের সংখ্যা অনেক কম। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় নির্মিত বহুতল ভবনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোনো প্রবীণ বসবাস করেন বলে জানি না।

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের চন পাড়া এলাকায় এই বহুতল ভবনে পাঁচশো প্রবীণের থাকা খাওয়া, চিকিৎসা, বিনোদনের জন্যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনটি বিশাল ভবন থেকে প্রবীণরা সেবা পায় না। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গড়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে থাকা খাওয়ার সুযোগ সুবিধা আছে, কিন্তু থাকার লোকজন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের সব বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী প্রবীণদের সংখ্যা দুই হাজারের কম হবে।

সরকারের উচিত হবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কোন্ বৃদ্ধাশ্রমে কতজন প্রবীণ বসবাস করছেন তার সংখ্যা জনসাধারণকে জানানো। ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসরত প্রবীণের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। নানাভাবে তদবির করে সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দেশের বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা চাহিদার তুলনায় কম। মানুষের ভাত-কাপড়ের চাহিদা যেমন আছে তেমনি মানবিক কিছু চাহিদাও আছে। সেগুলো পূরণ না হলে শুধুমাত্র থাকাণ্ডখাওয়ার জন্যে প্রবীণ পাওয়া কঠিন হবে।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতিপত্র নেবার বিধান রাখা জরুরি। বৃদ্ধাশ্রম কিভাবে পরিচালিত হবে, কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকবে, আয়ের উৎস, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। মোট কথা, ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত বৃদ্ধাশ্রমগুলো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখলে ভালো হবে। এতে করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রবীণ নিবাস হলো টাকার বিনিময়ে থাকাণ্ডখাওয়া-চিকিৎসার সুযোগ। অনেকটা মেস, হোস্টেল, বোর্ডিং স্কুল, ছাত্র-ছাত্রী নিবাসের মতো।

বসবাসরত প্রত্যেকেই রুম ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, লন্ড্রি, ইন্টারনেট বিল দিতে হয়। সকল রকমের সেবা কিনে নিতে হবে। এখানে সামর্থ্যবান প্রবীণরা বসবাস করেন। এখানে প্রবীণরা নির্যাতন-নিপীড়ন-অবহেলার শিকার হন বলে অভিযোগ আছে। উপায়হীন প্রবীণরা সকল দুঃখণ্ডকষ্ট বুকে ধারণ করে চোখ মুখ বুঁজে সহ্য করেন। অনেক সময় প্রবীণ নিবাসের পরিচালকরা ক্ষমতাবান কিংবা ক্ষমতাবানদের ছায়ায় থাকেন, ফলে সমীহ করে চলার সংস্কৃতি জোরদার হতে থাকে। প্রবীণ নিবাসগুলো কতটা প্রবীণবান্ধব তা খতিয়ে দেখা সময়ের দাবি। সবচেয়ে ভালো হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা গেলে।

নার্সিং হোম হলো, যেসব প্রবীণ চলাচলে অক্ষম, কারো সাহায্য ছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্ম, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারেন না তাদের বসবাস। এখানে পুরো সময়টাতেই পেশাদার সেবাকর্মীর সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। চিকিৎসা সেবা, ফিজিওথেরাপি, নার্সিং সহ সব কিছুর জন্যে উচ্চ মূল্য পরিশোধ করা লাগবে। এসব নার্সিং হোমে সাধারণ আয়ের লোকদের পক্ষে থাকা খুবই কঠিন। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষ বিপদে পড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সাহায্যপ্রার্থী হয়। এই দুর্বল সময়ে সেবা প্রতিষ্ঠানের আন্তরিক সহযোগিতা মনে প্রাণে কামনা করে।

বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে যারা নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তারা ভাবেন না, কতো হাজার হাজার শিশু মায়ের কোল ছেড়ে বোর্ডিং স্কুল, এতিম খানা, শিশু পরিবার, লিল্লাহ বোর্ডিং, হোস্টেলে বসবাস করছে। এসব স্থানে বহু শিশু নির্যাতন-নিপীড়নের সংবাদ গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। শিশু, নারী, প্রবীণ এই তিন শ্রেণির মানুষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হবার কারণে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বেশি হয়।

আমাদের প্রবীণ জীবন নিয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বিধায় আপনজনের বৃদ্ধাশ্রম, প্রবীণ নিবাস, নার্সিং হোমে থাকার প্রয়োজন দেখা দিলে বিচলিত হয়ে পড়ি। গুগল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের কাছে খোঁজ খবর নেবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি। অনেক প্রবীণ অধিকার বিষয়ক সংগঠন প্রবীণদের সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য সোচ্চার। তারা সরকারের নিকট বিভিন্ন ধরনের দাবি দাওয়া জানাবে, কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে।

আমরা প্রবীণের দুঃখ-দুর্দশা, নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধে সোচ্চার হয়ে উঠি, কিন্তু এসব সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার উদ্যোগের সাথে থাকতে চাই না। কার্যকর কোনো উদ্যোগের সাথে মানে ঝামেলায় জড়ানো বলে কেউ কেউ মনে করেন।

বার্ধক্যের প্রস্তুতি নেবার ক্ষেত্রে আমাদের উদাসীনতা কাটিয়ে উঠতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়