প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
একদিকে সংরক্ষিত আসনের এক ইউপি সদস্যার বিরুদ্ধে ভাতার বই, নলকূপ দেয়ার নাম করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ, অন্যদিকে তার ছেলের বিরুদ্ধে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সাবেক এক সেনা সদস্যের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
সরেজমিন ঘটনার বিষয়ে জানতে এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া পাঠানোর পরিবারের সদস্যরা যেমন ধোয়া তুলসি পাতা নয়, তেমনি ইউপি সদস্যা সেলিনা আক্তার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। তবে সর্বশেষ ঘটনায় ইউপি সদস্যার আচরণ এবং তার ছেলের মসজিদের সামনে হামলার ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।
স্থানীয়রা আরো জানায়, গত ৬ এপ্রিল ইফতারের পূর্ব সময়ে পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাইকপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া পাঠানের সন্তান, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের স্ত্রীর সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ির ইউপি সদস্যা সেলিনা আক্তারের ঝগড়া হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইফতারের পর জাহাঙ্গীর আলম বাড়ি ফেরার পথে ইউপি সদস্যার ছেলে ওমর তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে হামলা করলে জাহাঙ্গীর আলম গুরুতর আহত হন। তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করলেও পুলিশ তদন্ত শেষে জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা নথিভুক্ত করে।
সরেজমিন গেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া পাঠান জানান, ইউপি সদস্যা সেলিনা আক্তারের সন্তানরা এলাকায় কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিত। তারা নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। আমার সন্তান জাহাঙ্গীর পাঠানের ওপর হঠাৎ করেই হামলা করে গুরুতর আহত করে। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশাসনের নিকট এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছি।
স্থানীয় মোবারক হোসেনের স্ত্রী প্রতিবন্ধী জেসমিন বেগম বলেন, ইউপি সদস্য সেলিনা বেগম তার কাছ থেকে ৪ হাজার ৯শ' পঞ্চাশ টাকা নিয়েছেন ভাতা কার্ড করে দেয়ার জন্যে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি সেলিনা মেম্বারের কাছে ২০হাজার টাকা দিয়েছি ডিপ টিউবওয়েল দেয়ার জন্যে। কিন্তু আজ ৯ বছর পার হয়ে গেছে, আমাকে সেটি দিচ্ছে না। আহম্মদ আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্যে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আজও আমার কার্ড করে দেয়নি। একই বাড়ির বাবুল পাঠানের স্ত্রী রাসিদা বেগম ইউপি সদস্যা সেলিনা আক্তারের ছেলে ওমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ে তার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পরে সে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছে। আমাকে মামলা না দেওয়ার জন্যে হুমকি দিয়েছিল। ঘটনাটি আগের হলেও এখনো আমি ভুলতে পারছি না। এলাকায় তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্যা সেলিনা আক্তার বলেন, তাকে হয়রানি করার জন্যে এসব কথা প্রচার করা হচ্ছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে আমাদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি পাল্টা অভিযোগ দিয়ে বলেন, আমাদেরকে রাস্তা দিয়ে বের হতে দেয় না পাঠান পরিবারের সদস্যরা। ইতিপূর্বে তাদের অপকর্মের কারণে এলাকাবাসী তাদের থেকে মুচলেকা নিয়েছে। এখন কোনো কিছুতেই না পেরে আমার সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এ সময় তিনি গত ৬ এপ্রিল তার ঘরে হামলার কথা জানান। অন্যদিকে মুঠোফোনে সেলিনা আক্তার জহির মাস্টারের আনীত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ’ জহির মাস্টার যদি আমার কাছে কলের জন্যে টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে তাকে বলবেন আমার কাছ থেকে কল নেওয়ার জন্য’।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্যা সেলিনা আক্তারের ছেলে ওমর ফারুককে মুঠোফোনে কল করলে তিনি জানান, জাহাঙ্গীর পাঠান ও তার ছেলে তাদের ঘরে এসে তাদের ওপর হামলা করে। তবে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে যে, ঐ দিন সেলিনা মেম্বারের বাড়িতে কোনো মারামারি হয়নি।
গত ৬ এপ্রিল হামলার শিকার সেনা বাহিনীর সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই অতর্কিতে সেলিনা আক্তারের ছেলে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার ওমর তার লোকজন নিয়ে আমার ওমর হামলা করে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কিশোর গাংকে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।