প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশও ওই মামলাটির যথাযথ তদন্ত না করে মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বিভিন্ন মহলে। উপজেলার চর দুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ আলোনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ আলোনিয়া গ্রামের মিজি বাড়ির কাতার প্রবাসী আমির হোসেন ও একই বাড়ির মৃত মুসলিম মিজির ছেলে মনির হোসেনের সাথে বসত বাড়ির জমি নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৫বছর যাবৎ বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে আমির হোসেনের স্ত্রী আয়েশা বেগম মনির হোসেনকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০২২ সনের ২১ অক্টোবর আয়েশা বেগম বাদী হয়ে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলাটির তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব পান। এরপর তিনি সরেজমিন তদন্ত না করেই চাঁদা দাবির বিয়ষটি সত্য বলে আদালতে মনগড়া তদন্ত প্রতিবিদন প্রেরণ করেন। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করার পরপরই আদালত থেকে তার কপি সংগ্রহ করে মনির হোসেন। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদেরকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের অনেকেই তা জানেন না। সাক্ষীদের কেউ কেউ আবার দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে রয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কাতার প্রবাসী আমির হোসেনের স্ত্রী আয়েশা বেগম বিগত প্রায় ১৫ বছর পূর্বে একই বাড়ির মৃত মুসলিম মিজির ছেলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মনির হোসেনের আংশিক সম্পত্তি দখলে নিয়ে একটি পাকা ভবন নির্মাণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মনিরের সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে মনিরকে শায়েস্তা করতে আয়েশা বেগম আদালতে মনিরের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এক পর্যায়ে মনির হোসেনকে মামলায় জড়িয়ে আয়েশা বেগম তার কার্যসিদ্ধি করে। সেই থেকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে অদ্যাবধি হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। ইতিপূর্বে ফরিদগঞ্জ থানায় এবং চাঁদপুর আদালতে ৮/৯টি মামলা দায়ের করে মনিরকে হয়রানি করা হয়েছে। যার সব মামলার রায় মনিরের পক্ষে এসেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে চাঁদপুরস্থ বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটিতে মনিরের পক্ষে রায় দেয়। এরপর পুনরায় মনিরকে হয়রানির জন্য নতুন করে ফন্দি আঁটে আয়েশা বেগম। সে লক্ষ্যেই বিগত ২০২২ সনের ২১ অক্টোবর আয়েশা বেগম বাদী হয়ে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আয়েশা বেগম তার পাকা ভবনের টয়লেটের ময়লা নিষ্কাশনের জন্যে পাইপ লাইনের সংযোগ দিতে গেলে মনির হোসেন, তার স্ত্রী পারুল বেগম ও ছেলে মাকসুদসহ বাধা প্রদান করে এবং ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। মামলায় যাদেরকে সাক্ষী হিসেবে দেয়া হয়েছে তাদের অনেকেই প্রবাসে রয়েছেন।
সাক্ষীদের মধ্যে কাদির মিস্ত্রী, ইব্রাহিম, ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান, শরীফসহ স্থানীয় অনেকেই আয়েশা বেগমের সাথে মনির হোসেনের জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে স্বীকার করে চাঁদা দাবি ও মামলার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান। এছাড়া মামলার বিষয়েও তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
ভুক্তভোগী মনির হোসেন জানান, আমি একজন অসহায় মানুষ। চা-পান, সিগারেট বিক্রি করে কোনো রকম পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছি। তার ওপর মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে একের পর এক হয়রানি করা হচ্ছে। আমি মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি এই মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই। তাই আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে মামলাটি পুনঃতদন্ত করার জন্যে আদালতের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
মামলার বাদী আয়েশা বেগমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি মুঠোফোনে বলেন, মনিরের সাথে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সালিস বেঠকে বসে সে বিরোধ মীমাংসার কথা বললে মনির ক্ষতিপূরণ দাবি করে। তাই তার বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলা করেছি।
বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, তখন আমার কাছে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছে, তাই আমি প্রতিবেদন দিয়েছি। প্রয়োজনে আদালতে সাক্ষীরা তাদের সঠিক সাক্ষ্য দিলে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, উক্ত মামলা ও তদন্ত প্রতিবেদন আমি ফরিদগঞ্জ থানায় যোগদানের পূর্বে হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে আমি দায়িত্বপালন করছি।
‘জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের বিষয়টি আড়ালে রেখে মনগড়া প্রতিবেদন প্রেরণ করায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে সচেতন মহলে’ এমনটি দাবি করে সচেতন মহল মনে করেন, আদালত মামলাটি পুনঃতদন্ত করার আদেশ দিবে এবং পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।