সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
অনলাইন ডেস্ক

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সান্নিধ্যে থেকে বাস্তবধর্মী ও হাতে কলমে শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। যে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে তথ্য প্রযুক্তি, শিল্প, কৃষি ও কলকারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ আমাদের শ্রমবাজারকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিকে রূপান্তর ও দেশের শিল্পায়নের পথে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এতোটাই বেশি যে, শতভাগ কর্মসংস্থানই তার প্রমাণ। আমাদের প্রয়োজন দক্ষ কারিগর ও দক্ষ অপারেটর। সবাইকে বিএ, এমএ পাস করার দরকার নেই। কারণ এ সকল সার্টিফিকেটধারীকে চাকুরি দেয়ার সুযোগ আমাদের এই দেশে নেই এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হলে বিদেশেও চাকুরির সুযোগ নেই বললেই চলে।

বর্তমান বিশ্বে চাকুরির বাজারে উৎপাদনশীল খাতই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। বর্তমানে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিল্পায়নের ফলে নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছে আর তাতে বিনিয়োগ করছে পৃথিবীর তাবৎ বড় বড় পণ্য ও সেবা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এ সকল কারণেই আমাদের দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলো কারিগরি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ব্যবহার এবং কৌশল প্রয়োগ করে শিল্প ও কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা একটি উৎপাদনভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা, যা দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কারিগরি শিক্ষা শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে, এতে করে শ্রমিক সহজেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রবেশ করে দক্ষ জনশক্তি ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ বৃদ্ধি করে। কারিগরি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়, প্রয়োজনীয় মূলধন অর্জন করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব হয়। কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন তার বিশাল জনগোষ্ঠীকে ‘Human Capital’ অর্থাৎ মানব সম্পদে রূপান্তর করে শিল্পায়নে ইউরোপের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। তাই দরিদ্রতা বিমোচনে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে, আত্মকর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে জাতীয় শিক্ষা কমিশন বলেছে ‘Education should be developed as to increase productivity’ আমরা কারিগরি শিক্ষার নিম্নোক্তপ্রয়োজনীয়তা গুলো অনুধাবন করতে পারি।

উৎপাদনশীলতা : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের একটি উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত করে সমাজ ও দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।

স্বনির্ভরতা : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করে। এই শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থী হয় কোনো চাকুরির সুযোগ পায় নয়তো স্বনির্ভর কাজে যুক্ত হতে পারে।

জাতীয় আয় বৃদ্ধি : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা যেহেতু উৎপাদনভিত্তিক শিক্ষা, তাই এটি জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নে সহায়তা করে।

শ্রমের প্রতি মর্যাদা : সর্বশেষে এই শিক্ষার শিক্ষার্থীরা যেহেতু কায়িক শ্রমের মাধ্যমে অর্জন করে থাকে, সেহেতু এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের প্রতি এক মর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়।

জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ : বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায় তৈরি হয়, ব্যতিক্রমী শিশুদের জন্য এই ধরনের বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই প্রয়োজন। যার ফলে তারা কিছু উৎপাদনমূলক কাজে নিজেদের নিয়োগ করতে পারে এবং অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : পুঁথিগত নিরস একঘেঁয়েমি থেকে নিজেকে দূর করে ব্যবহারিক ও হাতে কলমে শিক্ষায় তাদের উৎসাহ বৃদ্ধি একপ্রকার ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।

কর্মের সুযোগ : বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মের দক্ষতা বৃদ্ধি করে চাকুরি বা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে।

কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয় ও পরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমেই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিহিত। প্রশিক্ষিত মানব সম্পদের যোগান দেয়াই হলো কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার মূল লক্ষ্য।

সর্বোপরি কারিগরি ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার মাধ্যমেই আমাদের দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব। কারিগরি শিক্ষার বিনিয়োগে ‘Rate of Return’ সর্বদাই অধিক।

লেখক : মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার, হেড অব অপারেশন ও সহযোগী অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম।

ইমেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়