সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণে আমার যতো মুগ্ধতা
অনলাইন ডেস্ক

১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। প্রকৃতি এবং আধুনিকতা এ দুই মিলিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রকৃতির সুনসান নীরবতা এবং আধুনিকতার যান্ত্রিক কোলাহল থাকা সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই বিরাজ করছে এক সুন্দর মায়াবী পরিবেশ, যা দেখে যে কেউ আকৃষ্ট হবেন। বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে হবে এ সুন্দর ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের লাগোয়া পূর্বদিকে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদী। এ নদীর বিকেলের দৃশ্য খুবই চমৎকার। নদী পাড়ের কিষাণ বধূদের দল বেঁধে নদীর পানি কলসি কাঁখে করে বহন, পরিযায়ী অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির, শিশু-কিশোরদের হৈ হুল্লোড়, হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট কিংবা দাড়িয়াবান্ধা, দিনমান পরিশ্রমী কৃষকদের নদীতে স্নান, ভ্রমণপিপাসুদের নৌকা ভ্রমণ, সন্ধ্যা আসার পূর্বেই জেলেদের সর্বশেষ মাছ ধরার ব্যস্ততা, এসব দেখে একেবারেই একজন কবি বনে যাবেন।

১২০০ একর ভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আজ পর্যন্ত হাজারো ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে এ বিদ্যাপীঠ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কত হাজারো জ্ঞানীগুণী, কৃষি বিজ্ঞানী জন্ম নিয়েছে জননীতুল্য এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গর্ভ থেকে।

৬টি অনুষদে সর্বমোট ৪৫টি সাবজেক্ট রয়েছে এখানে। ছাত্রদের জন্য রয়েছে সর্বমোট ৯টি আবাসিক হল : ফজলুল হক হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, বঙ্গবন্ধু হল, ড. আশরাফুল হক হল, শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ নাজমুল আহছান হল, শহীদ জামাল হোসেন হল, শাহজালাল হল এবং ঈশা খাঁ হল। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৪টি আবাসিক হল : তাপসী রাবেয়া হল, সুলতানা রাজিয়া হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল এবং বেগম রোকেয়া হল। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব ১০০ একর ভূমি দান করেছেন মৎস্য মন্ত্রণালয়কে। সেখানে বর্তমানে রয়েছে একটি আধুনিক মানের ‘মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র’। এখানে বেশ কয়েকজন মৎস্য বিজ্ঞানী দেশে মৎস্য উৎপাদন ও আধুনিকায়নে দিনরাত্রি গবেষণা করে যাচ্ছেন। রয়েছে বেশ কয়েক একর ফলিত জমি, যেখানে ধান সহ অন্যান্য কৃষিজাত ফসলের উপর এবং বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ ও ফলমূলের উপর হচ্ছে উন্নত গবেষণা ও উৎপাদন। এখানে আরো রয়েছে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ও অন্যান্য পশুর আধুনিক অভয়ারণ্য ও উন্নত গবেষণা, রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ডেইরি ফার্ম। সময় পেলে আপনিও দেখে যেতে পারেন অন্তত একবার করে হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

আমাদের বন্ধু কৃষি রসায়ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. মোঃ আখতার হোসাইন চৌধুরী রানার আমন্ত্রণে গত ২৩, ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর আমরা ৪ বন্ধু যথাক্রমে আমি, স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ ইউনুছ মিয়া, ডাঃ মোঃ মঈনুল ইসলাম (মেডিসিন) ও মোঃ শাহজাহান সিদ্দিকী ময়মনসিংহ ভ্রমণে যাই।

উল্লেখ্য, আমরা চার জনই ছাত্রাবস্থায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে একসাথে ইন্টারমিডিয়েট পাস করি। তারপর যে যার অবস্থানে। তবে ড. আখতার ও ড. ইউনুছ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আমি ও শাহজাহান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর ডাঃ মঈনুল রংপুর মেডিকেলে লেখাপড়া করেছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয় গ্রেজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ডরমিটরিতে। আমরা এ তিন দিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখেছি। পরিচয় হয়েছে প্রফেসর ড. মোতাহার হোসেন মন্ডলের সাথে, যিনি দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন, প্রফেসর ড. জাকির হোসেন ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ড. মোঃ জুলফিকার আলী প্রমুখের সাথে। যাদের আন্তরিক আতিথেয়তা অনেক দিন মনে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাবের অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রদের আন্তরিকতায়ও আমরা মুগ্ধ। আরো আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের বন্ধু আমন্ত্রণকারী ড. আখতার ও তার স্ত্রীকে। ড. আখতার পুরো তিন দিন আমাদেরকে অনেক সময় দিয়েছেন, খাইয়েছেন, ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস। দেখা করেছি চাঁদপুরের মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা শিরিন বানু ও তাঁর স্বামী ইসলামিক ফাউ-েশন চাঁদপুরের সাবেক উপ-পরিচালক জনাব শহিদুল আলম চৌধুরীর সাথে। মিসেস শিরিন বানু সর্বশেষ গত ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁর স্বামীও অবসরপ্রাপ্ত। তাঁরা উভয়েই বর্তমানে ময়মনসিংহে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন পর আমাদেরকে দেখে তাঁরা চাঁদপুরের স্মৃতি রোমন্থন করে আবেগাপ্লুত হন।

২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বে বন্ধু আখতার ও আখতার-ভাবীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে ত্রিশাল কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখি। চারটি হল, তিনটি ফ্যাকাল্টি ভবন, একাডেমিক ভবন ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী নিয়ে এ ক্যাম্পাস। বহু ভবনের নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। যে বট গাছের নিচে বসে কবি নজরুল গান গাইতেন, বাঁশি বাজাতেন, কবিতা লিখতেন সে বট গাছটি আজো বিদ্রোহী কবির স্মৃতি বহন করে বয়সের ভারে ন্যূব্জ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘুরে দেখেছি ত্রিশালের বিচুতিয়া বেপারী বাড়ি ও দারোগা বাড়ি, যেখানে দুখু মিয়া জায়গীর থেকে লেখাপড়া করেছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনদিন ধরে আমাদের অবস্থান স্মৃতি জাগানিয়া হয়ে থাকবে আমৃত্যু। দীর্ঘজীবী হোক বন্ধুত্ব। আসলে বন্ধুরা কখনও বদলায় না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়